খেলা

প্রথম বিশ্বজয়ের মঞ্চে বাংলাদেশ

প্রথম বিশ্বজয়ের মঞ্চে বাংলাদেশ
যুব বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে বাংলাদেশ ও ভারত অধিনায়ক। আজ কার হাতে উঠবে ট্রফিটা—আকবর আলী, না প্রিয়াম গর্গের? ছবি : আইসিসি

২০১৯ বিশ্বকাপ থেকেই নিম্নচাপের কবলে দেশের ক্রিকেট! একটার পর একটা প্রত্যাশার বুদবুদ হতাশায় মিশে যাওয়া দেখে ক্রিকেট পরাক্রান্ত নিরাসক্তিতে।

অবশেষে মেঘের ভারী চাদর সরিয়ে ঝলমলে সূর্যের হাসি ফিরিয়ে আনল যুবারা। প্রথমবার বৈশ্বিক কোনো আসরের ট্রফি জয় থেকে যে মাত্র এক ম্যাচ দূরে দাঁড়িয়ে আকবর আলীর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আজ পচেফস্ট্রুমে ভারত-বাধা পেরোতে পারলেই ইতিহাস গড়া হয়ে যাবে

বাংলাদেশের। ইতিহাস অবশ্য এরই মধ্যে গড়া হয়ে গেছে, ফাইনালে তো এবারই প্রথম। তবে দ্বিতীয় সেরার কথা কে মনে রাখে! তাই ভারত যতই জট ফেভারিট হোক, অনুরাগীদের দাবি একটাই—ট্রফি চাই!

এ তো সাধারণের দাবি। প্রতিপক্ষ কে, বিবেচনা করার সময় কোথায় তাদের? সন্দেহাতীতভাবে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ফেভারিট ভারত। দাপুটে ক্রিকেট খেলে টুর্নামেন্ট যত গড়িয়েছে, ততই শক্তিমত্তা দেখিয়েছে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা। অবশ্য শুধু তো এবারই নয়, বৈশ্বিক যেকোনো আসরে, যেকোনো ফরম্যাটে ভারত ফেভারিট। তাই অবধারিতভাবে সম্ভাবনার রেসে এগিয়ে থেকে আজ টস করতে নামবেন ভারত অধিনায়ক প্রিয়ম গার্গ।

নিশ্চিত থাকুন, ঠিক একই সময়ে সমান উচ্চতার স্বপ্ন দেখবেন আরেকজনও— আকবর আলী। টুর্নামেন্টের শুরুতেই বাংলাদেশ অধিনায়কের ট্রফি জয়ের স্বপ্নের পক্ষে বাজি ধরেনি কেউ। এমনকি যুব বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আগেও বাংলাদেশ দলকে ঘিরে আইসিসির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায়নি। শেষ চারের লড়াই শুরুর আগে সাবেক খ্যাতিমান ক্রিকেটারদের দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে যাঁরা নজর কেড়েছেন, সেখানেও বাংলাদেশি কোনো তরুণ নেই।

সম্ভবত এ জায়গাটাতেই পার্থক্য বাংলাদেশ ও ভারতের। প্রিয়মের দলে একা হাতে ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়া ক্রিকেটার সংখ্যায় বেশি। তাই তরতরিয়ে তারা উঠে এসেছে ফাইনালে। অন্যদিকে বাংলাদেশ যুবদল তাদের অগ্রজদের মতোই—দলীয় নৈপুণ্যের যোগফলে জায়গা করে নিয়েছে ফাইনালে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিতে সেঞ্চুরি করে মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেছেন বটে। তবে সেদিনের জয়ে রকিবুল হাসান, শরিফুল ইসলামের মতো বোলারদের পাশাপাশি তৌহিদ হৃদয় কিংবা শাহাদাত হোসেনের ব্যাটিংয়ের অবদানও কম নয়। ফাইনালের শেষ হার্ডল জয়েও বাংলাদেশের শক্তি দলীয় নৈপুণ্য।

এ দলীয় শক্তিমত্তা দিয়েও ভারতের অগ্রগামিতা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। রেকর্ড পঞ্চম শিরোপা জয়ের মঞ্চে আজ নামা দলটির বিপক্ষে সর্বস্তরেই বাংলাদেশের অতীত নিয়ে আতিশয্যের সুযোগ নেই। বড়দের কিংবা মেয়েদের দ্বৈরথের কথা বাদ দিন, যুব পর্যায়েও বিস্তর ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। বৈশ্বিক আসরে আজ পঞ্চমবার ভারত বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে। ২০০২ সালে অকল্যান্ডে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সবশেষ দুটি আসরে সাক্ষাতের ফলও একই—ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং শ্রীলঙ্কায় যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ী ভারত।

সব শেষ দুটি ফাইনাল কার্যত আজকের ম্যাচেরই যেন ড্রেস রিহার্সেল! দুটো ম্যাচেই যে টস করেছিলেন আকবর ও প্রিয়ম। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে মাহমুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরিও জেতাতে পারেনি বাংলাদেশকে। এর প্রায় এক মাস পর এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে দিয়েও জিততে পারেনি আকবর আলীর দল। আজকের ফাইনালে সে ক্ষতই কি শেষ হার্ডল পার হওয়ার শক্তি জোগাবে বাংলাদেশকে?

যুব দলের প্রশাসনিক অভিভাবক বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ অবশ্য একটি ম্যাচের হার-জিত দিয়ে আকবরদের মূল্যায়ন করতে নারাজ, ‘ভবিষ্যতে লক্ষ্য আমাদের, সেটা যে দলের কথাই বলুন না কেন। ফাইনালে জিতি কিংবা হারি, একটা ম্যাচ দিয়ে আমি দলটার সামর্থ্য বিবেচনা করব না।’ ২০১৮ সালের যুব বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল হারের পর নতুন পরিকল্পনায় এগোতে থাকে যুবদল। পরের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ক্রমাগত বিদেশ সফর করেছেন আকবর আলীরা। অনেকটা নীরবে চলা এ প্রস্তুতিপর্বে খুব বেশি অদল-বদল হয়নি। আর হয়নি বলেই পরিপূর্ণ একটি দল হিসেবে যুবারা গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন মাহমুদ। বোধগম্য কারণে সন্তুষ্টও সাবেক এ অধিনায়ক।

তবে জনতার সন্তুষ্টির জায়গা যথারীতি অনেক উঁচুতে! যুবাদের কাছে ট্রফির জোরালো দাবি আপাতত সীমিত শুভ কামনায়। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় বসত গড়া প্রবাসীদের একজনের বারুদঠাসা টিভি সাক্ষাৎকারে ম্যাচ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার খানিক ইঙ্গিত রয়েছে, ‘যদি কোনো ষড়যন্ত্র না হয়, তাহলে বাংলাদেশই জিতবে!’

আইসিসির ম্যাচ অফিশিয়াল কিংবা অন্য কোনো তরফে ‘ষড়যন্ত্রে’র কোনো অশনিসংকেত না মিললেও পচেফস্ট্রুমের আবহাওয়া পূর্বাভাসে মেঘের ঘনঘটা। আবহাওয়া দপ্তরের চার্টে বৃষ্টির সম্ভাবনাই বেশি। তবে ভয় নেই, আগামীকাল রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে। সোমবারের পচেফস্ট্রুমে যথেষ্ট রোদ্দুর থাকার কথা।

অবশ্য এবার বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। কে জানে, এ বৃষ্টিই হয়তো ভারত-ভাগ্যবদলের আশীর্বাদ হয়ে ঝরবে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে!

সেমিতে মাহমুদুল হক জয়ের সঙ্গে ম্যাচ শেষ করে আসা শাহাদাত হোসেনের মনোজগৎ অবশ্য থম ধরে থাকা আকাশের মতোই নিস্তরঙ্গ, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। তবে ফাইনাল বলে কোনো চাপ নিচ্ছি না। আর দশটা ম্যাচের মতো করেই খেলব।’ অবশ্য এহেন নির্লিপ্ততা থেকে মুহূর্তেই বেরিয়ে সমর্থকদের প্রতি তাঁর নিবেদন, ‘আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

প্রার্থনা হয়েছিল আল শাহরিয়ার রোকনদের জন্যও। ১৯৯৮ সালে টেস্ট মর্যাদাও মেলেনি বাংলাদেশের। তাই প্রথমবার অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপের উইকিপিডিয়াতে বাংলাদেশ দলের নাম লেখা আছে ‘আইসিসি অ্যাসোসিয়েটস’ হিসেবে! তো, সেই দেশটির কাছে যুব বিশ্বকাপের প্লেটও বড় ট্রফি। সে বছরের ২৪ জানুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্লেট ফাইনালের আগে তাই উজাড় করা দোয়া পেয়েছিলেন আল শাহরিয়াররা। ক্রিস গেইলের ক্যারিবীয়দের হারিয়ে প্লেটও এনে দিয়েছিলেন শাহরিয়াররা।

২০২০-এ কি তার চেয়েও বড় আনন্দে গোটা জাতিকে ভাসাতে পারবেন আকবর আলীরা? একটাই তো মাত্র ম্যাচ, সেটাও ক্রিকেটের মতো মহান অনিশ্চয়তার!

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ                                 

কানাডার সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =