প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম আর নেই । বুধবার দিবাগত রাত ১টা ১৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘অত্যন্ত বেদনার সাথে জানাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম রাত ১ টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। জানাজা ও দাফনের বিষয়টি পরে অবহিত করা হবে।’
এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এইচ টি ইমামের ছেলে সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার বাবার জানাজা ও দাফনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তার পূর্ণাঙ্গ নাম হোসেন তৌফিক ইমাম। যিনি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এইচ টি ইমাম নামেই বেশি পরিচিত।
তিনি ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার চাকরির সূত্রে শৈশবে রাজশাহীতে অবস্থান এবং রাজশাহীতেই প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরবর্তীকালে লেখাপড়া করেন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও কলকাতায়। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন ঢাকা কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। এখান থেকেই ১৯৫৪ তে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজ এবং সেখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৫৬তে। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তখন তিনি প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫৮ তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর জীবিকার সন্ধানে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তখন তিনি পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬১ ব্যাচের সিএসপিদের মধ্যে তিনি ৪র্থ স্থান লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে ‘উন্নয়ন প্রশাসনে’ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন।
পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে সদস্য হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। শুরুতে তিনি রাজশাহী কালেক্টরেটে ১৯৬২-১৯৬৩ মেয়াদে অ্যসিন্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
এরপর তিনি পদোন্নতি লাভ করেন এবং ১৯৬৩-১৯৬৪ মেয়াদে নওগাঁ মহকুমা মহকুমা প্রশাসক বা এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি নারায়ণগঞ্জ মহকুমার এসডিও হিসেবে বদলি হন এবং প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ তে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন।
১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৭৫-এর ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ক্যাবিনেট সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারস্থ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি সড়ক এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত পরিকল্পনা সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া যমুনা মাল্টিপারপাজ ব্রিজ অথরিটির এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ এর মার্চ মাসে তিনি রাঙামাটি জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে ছিলেন।-বিডি প্রতিদিন
এস এস/সিএ