দেশের সংবাদ

দুই খলনায়কের ফাঁসি কবে

ফাঁসি
চৌধুরী মঈনুদ্দীন (বামে) ও আশরাফুজ্জামান খান

কবির হোসেন ।।
বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই খলনায়ক ও প্রধান পরিকল্পনাকারী চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর পর বিচার হয়েছে তাদের। ফাঁসির আদেশও হয়েছে। এর পরও কেটে গেছে ৬ বছর। ফাঁসি এখনো কার্যকর হয়নি। কবে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে, তা কেউই বলতে পারছে না। এ দুই ঘাতক দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বসে বিলাসী জীবনযাপন করছেন।
বুদ্ধিজীবী হত্যার ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করতে ইন্টারপোলের শরণাপন্ন হয়েছিল সরকার। কিন্তু ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের ফিরিয়ে আনার কাজে কোনো অগ্রগতি নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আমাদের সময়কে জানান, ‘তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ তবে এ চেষ্টা কবে শেষ হবে তা কেউই নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, এ দুই ঘাতকের ফাঁসি কবে কার্যকর হবে তা নিয়ে। হতাশা প্রকাশ করেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরাও।
জানতে চাইলে শহীদ ডা. আবদুুল আলিম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নূজহাত চৌধুরী বলেন, যে দুটি দেশে তারা রয়েছে, তারা মৃত্যুদ-কে সাপোর্ট করে না। তারা মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে ফেরত দিতে চাইছে না। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হচ্ছে- একটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের ফাঁসি হয়েছে। সেটা তারা কার্যকর করতে দিচ্ছে না মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে। একজনের মানবাধিকার দেখতে গিয়ে তারা আমাদের মতো ৩০ লাখ শহীদের পরিবারের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তিনি আরও বলেন, এ সরকার ৪০ বছর পর হলেও বিচার করেছে। তাই তারা যে বিচারের রায় কার্যকর করবে, সেই আশা আছে। আমি জানি, দুই আসামিকে ফিরিয়ে আনতে নেগোশিয়েট করছে। এটা চলমান আছে। প্রকাশ্যে অগ্রগতি না হলেও ভেতরে ভেতরে প্রক্রিয়া চলমান। এ প্রক্রিয়া আরও বেগবান করতে হবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার মাধ্যমে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশে ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। সেই কালরাতে শুরু হওয়া গণহত্যায় নয় মাসে সারাদেশ পরিণত হয় বধ্যভূমিতে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসর আলবদরের সহায়তায় শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় শিক্ষক, ছয় সাংবাদিক ও তিন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার মূল হোতা আলবদর নেতা চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান বিদেশে পালিয়ে যায়। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ তাদের দুজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- নিশ্চিত করার আদেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়। সব অভিযোগেই একমাত্র সাজা ‘মৃত্যুদ-’ দেওয়া হয়। ওই রায়ে বলা হয়, একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তবে ওই হত্যাকা-ের মূল নায়ক ছিলেন চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। এ নৃশংস অপরাধের জন্য তারা ‘শুধু এবং শুধুমাত্র’ ফাঁসির যোগ্য। তাদের মৃত্যুদ- না হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না। দুই আসামির আত্মসমর্পণ অথবা গ্রেপ্তারের পর এ সাজার রায় কার্যকর করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাজা পরোয়ানার একটি কপি পুলিশ মহাপরিদর্শক ও একটি কপি ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠানো হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জামায়াতে ইসলামীর মস্তিষ্কপ্রসূত ঘাতক বাহিনী আলবদর একাত্তরে বুদ্ধিজীবী নিধনের যে নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে, তা গোটা জাতির বুকে ক্ষত হয়ে আজও রক্ত ঝরাচ্ছে। আমরা আরও বিশ্বাস করি, গত চার দশকে মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যাকারীদের বিচার করতে না পারায় জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত; এ লজ্জা আমাদের ক্ষতকে দিন দিন বাড়িয়ে তুলেছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ বাঙালি জাতিকে চিরদিন নিদারুণ যন্ত্রণাই দিয়ে যাবে।’
১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুজ্জামান ও মঈনুদ্দীন আলবদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন। আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন সেই হত্যাকা-ের ‘চিফ এক্সিকিউটর’। আর চৌধুরী মঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা তার ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে এ হত্যা পরিকল্পনার একটি তালিকাও পাওয়া যায়।looking-for-a-job

এস এস/সিএ 
সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 10 =