বঙ্গ সম্মেলন ২০২৩: সমালোচনা হোক ইতিবাচক
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। ২০২৩ বঙ্গ সম্মেলনের সমালোচনা করে এর চৌদ্ধগোষ্ঠী উদ্ধার একেবারে সহজ কাজ, যেকেউ এটি করতে পারেন, অনেকে করছেন, এবং এটি করার অধিকার তাঁদের আছে। এবারের সম্মেলনের প্রশংসা করার তেমন সুযোগ নেই? এরপরও লক্ষ্য রাখা দরকার, আপনার/আমার সমালোচনা যেন বঙ্গ সম্মেলনের দুয়ার বন্ধ হতে সহায়তা না করে, সমালোচনা হোক গঠনমূলক, যাতে ভবিষ্যতে ২০২৩-র পুনরাবৃত্তি না ঘটে, বঙ্গ সম্মেলন বেঁচে থাকে। যদিও ইতিমধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করছেন যে, আটলান্টিক সিটিতে বঙ্গ সন্মেলনের মৃত্যুঘন্টা বাজলো কিনা? আমার ধারণা, বঙ্গ সম্মেলন বেঁচে থাকবে। এজন্যে নিউজার্সীর ‘পতিত’ নেতাদের সমালোচনার চাইতে শিকাগো’র নেতাদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে চলা এখনকার পাথেয়। ইতিমধ্যে ক্যাব-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট রণদেব সরকার একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এটি ভাল, শুরু তো হলো। ২০২৪’র জুলাই পর্যন্ত কতবার এমন বক্তব্য দিতে হবে কেজানে? উদ্বোধনী দিনে প্রবীর রায় সুন্দর করে বলেছেন যে, এনএবিসি’র ৪২ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি, আমি দু:খিত, দু:খিত, দু:খিত। তিনি বলেন, এরপরও আপনারা ধৈর্য্য ধরে বসে আছেন, এতে মনে হয়, ‘বঙ্গ-সম্মেলন’ আরো ৪২ বছর চলবে’। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রণদেব সরকার তাঁর বক্তব্যে হয়তো একই কথা বলতে চেয়েছেন যে, যা হয়েছে তাতে আমরা লজ্জিত, আমরা শুধরানোর সুযোগ চাই, ২০২৪-এ শিকাগো আসুন, আবার আমরা নুতন করে শুরু করি, ধারাবাহিকতা বজায় রাখি।
কেপিসি’র সাথে আমার একটি সুন্দর সম্পর্ক আছে, ডলসি-তে অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগখানে প্রথম সারিতে তাঁকে বসা দেখতে পাই, কাছে যাই, বলি, দাদা, আপনার নেতৃত্বে একি অবস্থা! তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, শিতাংশু, আমি ডোনার, সংগঠক না। প্রবীর রায়ের সাথে বেশ ক’বার টুকটাক কথা হয়েছে। শনিবার সকালে তিনি আমাদের হোটেলে ব্রেকফাষ্ট দিতে এসেছিলেন। জিজ্ঞাসা করলাম, দাদা, রাতে ঘুম হয়েছে? বললেন, তোমার মাথা খারাপ, এ অবস্থায় ঘুম হয়? ৩দিনের সম্মেলনে কেপিসি ও প্রবীরদা ছাড়া আমি আর কোন বড় নেতাকে দেখিনি। হয়তো সবাইকে আমি চিনিনা, কিন্তু প্রেসিডেন্ট পার্থসারথী মুখার্জীকে চিনতাম, তাঁকে দেখিনি, কেউ দেখেনি। আমি এও জানি এক বছরের পরিশ্রম একজন মানুষ ধ্বংস করতে পারেনা, এজন্যে সবাই দায়ী।
কেন এমন হলো, এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অফিসিয়ালী কেউ দেয়নি, দেয়া দরকার। দর্শক, শ্রোতা, শিল্পী, আমন্ত্রিত অতিথিদের জানার অধিকার আছে যে, সত্যিকার অর্থে সেদিন কি হয়েছিলো? আমার কাছে মনে হয়েছে যদি শেষ মুহূর্তে প্রথম দিনের ‘ভেন্যু’ পরিবর্তন না হতো তাহলে সমস্যা এতো ‘মহীরুহ’ আকার ধারণ করতো না? কেন ভেন্যু পরিবর্তন করতে হলো, এর উত্তর জানা দরকার। প্রেসিডেন্টের দিকে সবাই অঙ্গুলি নির্দেশ করলেও সেক্রেটারী দায়িত্ব এড়াতে পারেন না? শনি-রবিবার সমস্যা হলেও শুক্রবারের মত প্রকট ছিলোনা। এতবড় একটি অনুষ্ঠান সফল করতে কর্মীর বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। কর্মী নেই, নেতা নেই, দর্শকরা দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ছেলেরা খাবার বিতরণ করেছেন, টরন্টোর লোকজন নিজ দায়িত্বে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বিশৃঙ্খলা-বিপর্যয়ের কথা খুব বেশি আলোচনা করতে চাইনা, শুধু এটুকু বলা যায়, এমন ঘটনা বাংলাদেশীদের কোন অনুষ্ঠানে ঘটলে মারামারি বা হুলুস্থুল, লঙ্কাকান্ড ঘটে যেতো। সেদিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল বলতে হবে! এরমানে কিন্তু এই নয় যে, তাঁরা বারবার ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে যাবেন। লাস-ভেগাসে সুন্দর একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিলো, এবার তা ছিলোনা, কেন? প্রথম দিনটি একেবারে ‘মাটি’ হয়েছে তা বলা-বাহুল্য। পরের দিন ৪-দেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজেছে বটে, কিন্তু দুই দিনের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটেছে অনেকটা ‘গোজামিল’ দিয়ে। ব্যবসায়ীরা যারা দোকানপাট দিয়েছিলেন, তাঁরা ভালই ‘মার্’ খেয়েছেন। খাবার মন্দ ছিলোনা, কিন্তু দু’ঘন্টা লাইন দিয়ে খাওয়ার কোন মানে হয়না! আগের দিন চঞ্চল-শাওন অনুষ্ঠান বাতিল ঘোষণা হলেও পরের দিন সেটি হয়েছে, এতে আমাদের বাংলাদেশীদের মান-সন্মান কিছুটা বেঁচেছে। এনএবিসি-তে ‘উদার’ বাংলাদেশীদের আরো সম্পৃক্ততা দরকার। ‘কল্লোল’-র ভূমিকা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি জাষ্টিস অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে মিস করেছি, শুনেছি এনএবিসি’র গাফিলতির কারণে ইচ্ছে থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী জানালেন যে, ক্যাব তাঁকে একটি ‘সন্মাননা প্ল্যাকার্ড’ দেবে, এবং তিনি সেটি গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন। তসলিমা নাসরিন সব সময় ভাল করেন, এবারো ব্যতিক্রম নয়। ড: তথাগত রায়ের সাথে একটি বাংলাদেশী অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। সুবোধ সরকারকে কারা আমন্ত্রণ করেন জানিনা। ক্যাবের উচিত কবির সুমন বা সুবোধ সরকার জাতীয় লোকজন এড়িয়ে চলা? নুতন শিল্পী রথিজিৎ, কৃত্তিকা, অতনু সেন দেখলাম সবকিছু ‘ইতিবাচক’ হিসাবে নিতে অভ্যস্থ। ভাস্কর দাস আর একজন, যিনি পারলে সব-সমস্যার সমাধান একাই দিয়ে দিতেন। এদের কাউকে আমি চিনিনা, এদের কেউ কেউ সোনু নিগমের আগে একটি অনুষ্ঠান করেছেন, যেটি সবার ভালো লেগেছে, ক্যাবের উচিত এদের মনে রাখা।
সোনু নিগম ও জাভেদ আলি এবং নুতন কিছু শিল্পী ছাড়া আর কোন শিল্পী এবার খুশি হয়েছেন বলে আমার মনে হয়নি, হওয়ার কথাও নয়! সোনু নিগম তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন, ‘শেষ ভাল যার সব ভাল তাঁর’-শেষটা সোনু নিগম ভরিয়ে দিয়েছেন। জাভেদ আলি শনিবার শেষ অনুষ্ঠানে সবাইকে ধরে রেখেছেন। আমি এক্সপার্ট নই, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে ‘হল-এ’-র লাইটিং ও সাউন্ডে কিছু সমস্যা ছিলো। কেজানে, হয়তো ঠিকমত পয়সা না দেয়ায় এক্সপার্ট কেউ ছিলেন না? পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী অযথা নাজেহাল হয়েছেন, অর্থাৎ কন্ট্রোল না থাকায় এ ধরণের দু:খজনক ঘটনা ঘটে থাকে, এটি ঠিক হয়নি। ক্যাবকে হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও অন্য কারো কারো কাছে দু:খ প্রকাশ করতে হবে, করা উচিত। রাঘব ভাল গেয়েছেন, জয়তী ভাল গান, কিন্তু তাঁকে সোম-মঙ্গলবার হোটেল দিতে হবে কেন?
সম্ভবত: ১৯৯২/১৯৯৩ সালে বোষ্টনে আমি প্রথম বঙ্গ-সম্মেলনে যাই? সেবার সম্মেলন নিয়ে একটি রিপোর্টে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলাম, দু:খিত এবার পারলাম না? প্রতিবার নয়, এরপর অনেকবার গেছি, নিউইয়র্কের আশেপাশে হলে তো যাই-ই! ক’বছর আগে আটলান্টিক সিটিতে হয়েছিলো তখনও গিয়েছিলাম, কিন্তু এবারকার মত ‘লন্ডভন্ড’ সম্মেলন কখনো দেখিনি। শিকাগোতে যাবোনা বলে মোটামুটি গিন্নি আলপনা ঠিক করে ফেলেছেন। আমার ছিলো হলুদ ব্যান্ড, পেয়েছি লাল? এই প্রথম কোন বঙ্গ-সম্মেলনে সামান্য সময়ের জন্যেও আমায় ব্যান্ড পড়তে হয়নি, কেউ দেখতে চায়নি। সবশেষ বলবো, সম্মেলনে বেশ ক’টি এক্সিবিশন’র ব্যবস্থা ছিলো, মানুষ জানতে বা বুঝতে বুঝতেই সম্মেলন শেষ হয়ে যায়, ওদের কষ্টের কোন শেষ নেই! ২০২৩ তো গেলো, ২০২৪-এ এর প্রভাব পড়বে বৈকি। শুনেছি ২০২৪-র গ্রূপ অর্গানাইজড। দেখা যাক, কি হয়! সম্মেলন থেকে ফেরার পর এখন পর্যন্ত কোন ই-মেইল পাইনি। অপেক্ষায় থাকলাম পুরো ঘটনা জানার, একটি অফিসিয়াল বিবৃতি’র। [email protected];