বড় বিচিত্র এই পরিবেশ ।।। সিদ্ধার্থ সিংহ
কথায় আছে, বড় মাছ সব সময় ছোট মাছকে খায়। ঠিক তেমনি জঙ্গলে যত জীবজন্তু আছে, তারা সব সময় তার চেয়ে কম জোরি বা ছোট প্রাণী দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাকে খায়। এ ভাবেই তারা জীবন ধারণ করে। আর এটাই হল প্রকৃতির নিয়ম। পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখার একমাত্র ফর্মুলা।
নিয়মের যে ব্যতিক্রম হয় না, তাও নয়। এই তো কিছু দিন আগেই একটি ভিডিওতে দেখলাম, একটি মা-হরিণ সদ্য বাচ্চা প্রসব করতে করতে যেই দেখেছে একটি বাঘ তার দিকে ধেয়ে আসছে, এমনি সে কোনও রকমে বাচ্চাটি ফেলেই প্রাণভয়ে দে ছুট।
বাঘটি এসে দেখল, আশপাশে কেউ নেই। তখন সদ্যোজাতকে সে জিভ দিয়ে চাটতে শুরু করল। আমি তো ভাবলাম, হয়ে গেল। সদ্যোজাতটির খেল খতম। এক্ষুনি বাচ্চাটাকে খেয়ে ফেলবে।
কিন্তু অবাক কাণ্ড, দেখা গেল সে ওই হরিণের বাচ্চাটির গোটা গা জিভ দিয়ে চেটে চেটে পরিষ্কার করল। যেটা মা-হরিণটির করার কথা ছিল। তার পর মুখে করে ঘাড়টি ধরে একটি গাছের আড়ালে নিয়ে গেল।
না, বাচ্চাটির গায়ে সে এতটুকুও দাঁত বসায়নি। বরং বাচ্চাটিকে খাবার জন্য যখন অন্য বাঘেরা ছুটে এল, তখন এই বাঘটিই তাদের সঙ্গে লড়াই করে সেই সদ্যজাত হরিণছানাটিকে রক্ষা করল।
শুধু রক্ষাই করেনি, তার পর থেকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রেখেছে। যাতে বনের অন্য কোনও জীবজন্তু তাকে আঁচড় কাটতে না পারে। যাতে এই বাচ্চাটি তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাফাতে ভুল পথে গিয়ে হারিয়ে না যায়।
তাই সন্ধ্যা নামতেই একেবারে মুখে করে নিজের ডেরায় নিয়ে গেছে। বুকের কাছে নিয়ে ঘুম পাড়িয়েছে। আর বাচ্চাটিও হয়েছে তেমন ন্যাওটা। সারাক্ষণই বাঘটির পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই-ই নয়, বাচ্চাটি বারবার কিছুটা গিয়েই ছুটে এসে গোত্তা মারছে বাঘটির পায়ে। পেটের তলায়। কিন্তু বাঘটি একটুও বিরক্ত হচ্ছে না। উলটে আদর করছে। সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে।
এই ধরনের ঘটনাই প্রমান করে, পরিবেশ মানেই শুধু খাদ্য আর খাদকের সম্পর্ক নয়, তার ব্যাতিক্রম ঘটে।