বন্ধু
-পুলক বড়ুয়া
বন্ধু, এলোমেলো দিনগুলি মনে পড়ে? মনে আসে অগোছালো রাত্তির ? তোলপাড় তোলে? মুগ্ধ কথা কয় ? এখনও কী শূন্যে মুঠি ওঠে? ঊর্ধ্বস্বরে জোড় পায়ে জোর পায়ে ছোটে—মিছিলের দিনগুলি লোটে—মিটিংয়ের দিনগুলি—জামায়েত ডাক দেয়—ঘিরে ধরে জম্পেশ-জমাটি আড্ডা : আবার হবে নাকি ফেরারী ঘোরাঘুরি ! তেরছা-খাড়া-এলিয়ে- ঝুঁকেপড়া-বাঁকাচোরা মচকানো-ভঙ্গুর-হত দিনরাত্রি—থেমে যাওয়া—ছুটে যাওয়া—ক্ষয় হওয়া : ভোর-দুপুর-সন্ধ্যা-রাত্রি—হয়তবা বারেবারে—কখনওবা একটানা—যখন-তখন—ইচ্ছে মতোন—এদিক-ওদিক—এখানে-সেখানে—দেখা হলেই—খুঁজে নিয়ে—একটা কোথাও : অঘোষিত—অলিখিত—কতিপয় মনের ঠিকানায় : নদী ছিল—গিরি ছিল—ছিল ঝিরিঝর্ণা রোদ ছিল বৃষ্টি আর কুয়াশার কান্না
ঘোর লাগা—নেশা ধরা—বুঁদ হওয়া—ঝিম মারা—
শলাকার মতো আমরা কালুর ডেরা ধ্রুব জেনে
প্রিয়টানে সটান হাজিরা দিতাম; আনমনে আপন মনে, আহা, মুঠো থেকে মুঠোয় জমে ওঠা কৌটোর মতোন একেকটি পুরিয়া দিনরাত্রি। তার পেটে চালান হয়ে যাওয়া আমরা এক দঙ্গল সতীর্থ-সহযাত্রী এক স্নিগ্ধ প্রাঞ্জল মৌতাতে
ঘোর লাগা সোনাঝরা সময়ের খনিতে ফুঁ দিতাম সেই নিভে যাওয়া মনে পড়া ফেলে আসা ক্ষণগুলি ওর রেস্তোরাঁর রসুইঘরের উনুনের মতো আজো গনগনে তা দেয়, দাবানলের মতো ছুটে আসে—লেলিহান হাঁক দেয়—পুড়ে যাওয়া জীবনে পোড় খাওয়া জীবনে, পড়ে থাকা জীবনে—ছাইয়ের মতো কয়লার মতো সকাল-দুপুর- সন্ধ্যা-রাত্রি—উড়ে যাওয়া মুছে যাওয়া জমে থাকা লেগে থাকা স্মৃতির কস্তুরী : আমরা কজন যৌবধুম্রদন্ড, একগুচ্ছ রুচির চোয়ানী-ডোবা, সম্মিলিত অভিরুচির ফুলকি, অরণ্য জনপদে আরণ্যক দিনরাত্রি সেঁকে, নিসর্গের প্ররোচনা ও মৌন ইন্ধন চুবিয়ে নিয়েছি
কালুর চা-খানার টগবগে কড়াইয়ের মতো আমাদের মনের চুল্লিতে অবিরাম ফুটতে থাকি কালু্র সৌজন্যে পাওয়া পিছুডাকা স্মৃতিলীন অদৃশ্যের অলীক সোয়ারীগণ । কালু্র কল্যাণে কুলীন প্রিয় ঋণ আজ অনন্ত সফরে । স্মৃতির কবরে।
পথ থেকে পথে রথ থেকে রথে পা থেকে পায়ে সরে গেছে চলে গেছে চাপা পড়া : আজো সেই গল্পগুলি : নদী ও পাহাড়ের বুক খুলে আলো-হাওয়ার অতলে ডূব সাঁতার কেটে মৌন ও জাগর চাহনিতে চেয়ে আছে কথা কয় ছুটে আসে—হাতড়ে বেড়াই তাহাদের । কী যে ভালো লাগে—একা একা একসঙ্গে । মনটাকে একটু মেলে ধরলে । হৃদয়ের এলবাম খুলে গেলে । ওল্টালে । হঠাৎ উঁকি দিলে । শিকেয় তোলা দিনগুলোকে চল পেড়ে আনি । একটু নামাই । এ জীবনে !