বিজয়ের গৌরবোজ্জ্বল ৫০ বছর ||| বিদ্যুৎ ভৌমিক
১৬ ডিসেম্বর হল গৌরবোজ্জ্বল মহান বিজয় দিবস। গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা ও পরম ভালবাসার সাথে সমগ্র জাতি স্মরণ ও উদযাপন করছে ৫০তম গৌরবোজ্জ্বল মহান বিজয়ের সূবর্ণজয়ন্তি। প্রবাসেও উদযাপিত হচ্ছে ৫০ম গৌরবোজ্জ্বল মহান বিজয়ের সূবর্ণজয়ন্তি।
ব্রিটিশ শাসনাধীন দুইশ বছরের দাসত্ব এবং পাকিস্তানী কুশাসনের ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার দিন হল বিজয় দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর বজ্রকন্ঠে ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। একাত্তরের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে দেশের কোটি কোটি প্রতিবাদী জনতা সেদিন বাংলাভাষা ও মাতৃভূমিকে রক্ষা করার বলিষ্ঠ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশমাতৃকাকে পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার জন্য নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে অকুতোভয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল। মুক্তির প্রবল আকাঙ্ক্ষা সেদিন নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ধর্ম বর্ণ দল-মতনির্বিশেষে প্রতিবাদমুখর সেই জনতা সেদিন যোগ দিয়েছিল মহান স্বধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে। কোন পিছুটান সেদিন তাদের ছিল না, চোখের সম্মুখে ছিল শুধুমাত্র সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও মহান স্বাধীনতার স্বপ্ন। ৫০ বছর আগে এই দিনেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল নয় মাসের যুদ্ধ শেষে মহান বিজয় ও মুক্তির গান। ভারতের সাহায্য ও সহযোগীতায় দীর্ঘ নয় মাসের নিরন্তর মুক্তির লড়াইয়ের পর বিজয়ী হয় বাঙালি জাতি। অবশেষে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও কয়েক লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছিল একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর । ছিনিয়ে আনা হয় লাল-সবুজ পতাকা সম্বলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর একদিকে গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের – বাঁধভাঙ্গা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। আমার প্রাণপ্রিয় পিতাও মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয়েছিলেন । মিত্র বাহিনীর ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ডআক্রমণে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোষর ও সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে পর্যুদস্ত হয়ে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে মিত্র বাহিনীর কাছে । ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্ব মানচিত্রে আলোর ঝর্ণাধারায় প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছিল এক নতুন দেশ যার নাম হল স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’। রক্ত লাল পতাকায় সিঞ্জিত হয় বাঙালির চেতনা । অহঙ্কার, আত্মমর্যাদা ও বিজয়ের গৌরবে আমাদের গৌরবান্বিত হওয়ার দিন হল মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর। ৫০ বছর আগে এই দিনে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে প্রচারিত হয়েছিল নয় মাসের যুদ্ধ শেষের গান। সমবেত কণ্ঠে শব্দসৈনিকরা গেয়ে উঠেছিলেন, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই জ্বলছে।’ সেই আলোর উজ্জ্বল ঝর্ণাধারায় প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছিল বিশ্ব মানচিত্রে এক নতুন দেশ যার নাম স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বিজয়ের গৌরবোজ্জ্বল ৫০ বছর এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবারে একই সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে জাঁকজমকের সঙ্গে মহাআড়ম্বরে। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান – সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ শেখ মুজিবের বাংলাদেশ; সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির বাংলাদেশ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য নির্মাণ এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । দেশব্যাপী উগ্র ধর্মান্ধ রাজনৈতিক শক্তি ও রাজনৈতিক মোল্লাদের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণ করার হুমকি, নারী বিদ্বেষী প্রচারনা, বিভিন্ন স্হানে মন্দির ভাংচুর সহ ধর্মীয় সংখালঘুদের উপর নির্যাতন , মুক্তিযুদ্ধ-সংবিধান-জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-সভ্যতা বিরোধী কর্মকান্ড সরকারকে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি । যারা জাতির পিতাকে অবমাননা ও অমান্য করে তারা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরোধী।
মহান বিজয় দিবসের শপথ হোক, যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, জীবনপণ শপথ নিয়েছিল, ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মহান বিজয় দিবস তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকার, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ সহ আমাদের সকলের । মহান বিজয় দিবসের সূবর্ণজয়ন্তিতে আরও শপথ হউক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি দেশের ভিতরে ও বাহিরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, মহান মুক্তিযুদ্ধ,মহান স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে জানানোর দায়বদ্ধতা সরকার, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ আমাদের সকলের । দেশমাতৃকার উন্নতি বৃহত্তর স্বার্থে ও একই সাথে গনতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার বৃহত্তর স্বার্থেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তি এবং রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও তাদের দোসরদের আস্ফালন রুখে দাড়িয়ে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র, মানবিকতা, ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে হবে ।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। যে রাষ্ট্রের মর্মবাণী হবে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। যে রাষ্ট্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মুক্তির আস্বাদ নিয়ে বসবাস করবে। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও মাদককে প্রতিহত করে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বুকে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করাই হউক বর্তমান বাংলাদেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
বিদ্যুৎ ভৌমিক – কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’র উপদেষ্টা || মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান