পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান
হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মন্ত্রীসভায় অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাঁকে অভিনন্দন জানাতে আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রায় নানা শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে।বিশ্ববিদ্যালয় পেয়ে উৎসবে সুনামগঞ্জ-এর মানুষ।
রোববার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হাওরের রাজধানী সুনামগঞ্জ উচ্ছ্বসিত মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে।
বিশাল আনন্দ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন হাওর অঞ্চলের উন্নয়নের রূপকার খ্যাত পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, জয়া সেন গুপ্তা, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শামীমা শাহরিয়ার, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান প্রমুখ।
হুডখোলা গাড়িতে লাল-সবুজের পতাকা হাতে হাজার হাজার জনতাকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে এগিয়ে যান জেলা স্টেডিয়ামের দিকে।এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র-শিক্ষাক, ব্যবসায়ী, উন্নয়ন সংস্থার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেতে অংশ নেন । রঙ-বেরঙয়ের ব্যানার-ফ্যান্টুনে সজ্জিত জনতার মিছিলে মিছিলে একাকার হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক। বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বসিত সাধারণ মানুষ রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান।
দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে সমাবেশ শুরু হয় জেলা স্টেডিয়ামে। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসা জনতার পদভারে টইটম্বুর হয়ে যায় গোটা স্টেডিয়াম। অতীতের সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠনের মধ্যমণি হয়ে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃতক করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিবর্তনের নায়ক বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা আমাদেরকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়েছেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাতে আমারা এখানে সমবেত হয়েছি। এমন হাজারো কারণ রয়েছে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের, সব বলার প্রয়োজন নেই। শুধু একটি কথা বলতে চাই, আমাদের জন্য তাঁর মনে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে।
তিনি বলেন, এই বাংলার সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, জেলে- যারা খেটে খায়, যারা প্রতিকূল পরিস্থির মাঝে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য তিনি সবসময় চিন্তা করেন। আমাদেরকে তিনি বলেন, বাংলার পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য প্রথমে কাজ করতে। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে। তিনি মততাময়ী মায়ের হৃদয় নিয়ে তাদের জন্য কাজ করেন।
এমএ মান্নান বলেন, সুনামগঞ্জবাসীকে এখন স্বীকার করতে হবে, আমরা এখন আর আগের মতো বঞ্চিত, অবহেলিত অবস্থায় একপাশে পড়ে থাকা জেলা আর নই। আমরা বাংলার কেন্দ্রে অবস্থান করছি। উন্নয়নের মূলধারায় আমাদের স্থান। শুধু সুনামগঞ্জে নয়, দেশের সবত্র একটি নবজাগরণের উদ্বীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সকল সংশয়, সন্দেহ দূর হয়ে গেছে; বাঙালি, বাংলার পরিচয় নিয়ে এখন আর লজ্জা পাওয়ার, মুখ লুকানোর কোনও প্রয়োজন নাই। এটা সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে। আমরা তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ, তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ হবে না।
তিনি বলেন, দেশের অবস্থা এখন কী বলার প্রয়োজন নেই। চারদিকে কাজ আর কাজ আর কাজ। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে গেলে দেখবেন, সর্বত্র ভাঙা-গড়ার কর্মযজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, মাটির উপর দিয়ে, মাটির নিচ দিয়ে, সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে আমরা উন্নয়ন করছি। কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে ৬ কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গ নির্মাণ করছি। বেশিরভাগ কাজ হয়ে গেছে, আর কয়েক মাস পর বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। ভারতসহ প্রতিবেশী কোনো দেশই এমন কাজে হাত দেয় নাই। পদ্মাসেতু অর্ধেকের বেশি শেষ করে ফেলেছি। আর মাত্র চার-পাঁচ মাস পর সম্পূর্ণ শেষ করে ফেলব। দুই পদ্মসেতু নয়, চার, পাঁচ, ছয়, সাতটি পদ্মাসেতু আমরা ক্রমান্বয়ে নির্মাণ করব। বাংলাদেশের কোনো জায়গা অনুন্নত থাকতে দেব না। মাথার উপরে আমাদের নিজস্ব উপগ্রহ আছে। মহাশূন্যে আমেরিকানরা, রাশিয়ানরা গেলে, ভারত যাওয়ার চেষ্টা করলে; আমরা যেতে পারব না কেন।
মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, শুধু তাদেরকে বাদ দিয়ে যারা বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। যারা বাংলা অস্তিত্বকে সম্মান করে না। যারা বাঙালি বলে গর্ববোধ করে না। এই মুষ্ঠিমেয় মানুষদের বাদ দিয়ে ষোল কোটি মানুষই এক পরিবার।
এমএ মান্নান বলেন, সুনামগঞ্জ সম্পর্কে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে, সবকিছু বলে শেষ করা যাবে না। এই মুহূর্তে বিশাল মেডিকেল কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রাণীগঞ্জ সেতু, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকারণসহ অনেক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো দুটি তিনটি প্রাতিষ্ঠানিক কাজ শেষ করে এই বছরের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ করতে চাইছি। ছাতক থেকে রেল সুনামগঞ্জে নিয়ে আসার কাজ করছি আমরা। এবং এই সরকারে সময়কালের মধ্যেই রেল আসবে। এর ডিজাইনের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে এটা নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের সাথে যুক্ত হবে। সড়কপথে হাওরের উপর দিয়ে ১৩ কিলোমিটার উড়ালসড়ক নির্মাণ করে সুনামগঞ্জের সাথে নেত্রকোনাকে যুক্ত করা হবে। এই কাজটি আমার টেবিলে ইতোমধ্যে এসেছে, আমরা সেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাব। হাওরের মানুষকে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে দিতে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নলকূপ স্থাপন করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনঃএকজন মীজান রহমান এবং কিছু স্মৃতি
তিনি বলেন, এমন উন্নয়নের মহাযজ্ঞ কেবল শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব, কারণ তাঁর ইমান আছে, সাহস আছে দূরদৃষ্টি আছে। ৫০ বছর পরে দেশে কী হবে না হবে তার পরিকল্পনা তিনি করছেন। দেশের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকল মানুষ যাতে সমান মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে বসবাস করতে পারে এমন বাংলাদেশ তৈরি করে যাচ্ছেন তিনি। তার সব ভাল কাজে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সমর্থন সহযোগিতা করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, দুদিন পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার দেখা হবে, সেখানে গিয়ে বলব সুনামগঞ্জবাসী কীভাবে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, এই জেলা মহান মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছে। সেক্টর সদর দফতরসহ দুটি সাব সেক্টর দফতর এই জেলায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করা এই জেলার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের মতো উন্নয়নপ্রেমী একজন নেতা পাওয়ায় আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা তরান্বিত হবে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও এমএ মান্নানের প্রচেষ্টায় আমরা অনেক উন্নয়ন পাচ্ছি। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থখাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাতে জনবল সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে ৬২ জন ডাক্তারের মধ্যে ১২ জন দিয়ে চলছে। একযোগে ২২ জন নার্সকে বদলী করে নেওয়া হয়েছে। কার্ডিয়লজিস্টসহ টেকনিক্যাল পদগুলো বছরের পর বছর ধরে শূন্য। আমরা স্বাস্থ্যখাতে জনবলের দেওয়ার জন্য সংসদের কথা বলি, মন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দেই। কিন্তু এভাবে একযোগে এতগুলো লোক নিয়ে যাওয়া হলে স্বাস্থসেবা ভেঙে পড়বে। জেলার অনেক স্কুল কলেজে শিক্ষকের পদগুলো খালি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যদি ভালভাবে পড়াশোনা না করে তবে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে বড় বড় ভবন নির্মাণ করে আর মেশিন সরবরাহ করে দিয়ে ডাক্তার না থাকলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে না, লাভ হবে ঠিকাদার আর সরবরাহকারীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বহুতল একাডেমিক ভবন করে দিয়ে শিক্ষক না দিলে, ভবনগুলো পড়ে থাকবে মানুষ এর সুফল পাবে না। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পরিকল্পনামন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেন গুপ্তা, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, পৌর মেয়র নাদের বখত, সাবেক এমপি শাহানা রব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক ।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদ রেজা চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে সফল একটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করায় পরিকল্পনামন্ত্রী, সংসদসদস্যবৃন্দ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।
হাওরবাসীর উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে ‘হাওররত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করার প্রস্তাব করেন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার। তার প্রস্তাবকে মুর্হুমুহু করতালী ও শ্লোগান দিয়ে সমর্থন জানান উপস্থিত সকলে।
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন