বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি পর্যটকের সাথে ভয়ংকর অভিনব প্রতারণা করেছে এক সিএনজি চালক। ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে বেড়াতে এসেছিলেন এক বাংলাদেশি ব্লগার। দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে একটি সিএনজি (অটো) ভাড়া করেছিলেন। পরে ভাড়া মেটাতে গিয়ে ওই বাংলাদেশি পর্যটকের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠে চালকের বিরুদ্ধে।
ওই চালক কিভাবে সেই পর্যটকের কাছ থেকে বেশি অর্থ নিয়ে তা জামার হাতায় ঢুকিয়ে রাখছেন সেই ভিডিও ধরা পড়ে ওই ব্লগারের ক্যামেরায়। পরে ৩৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি টুইট করে বেঙ্গালুরু পুলিশকে ট্যাগ করে দেন কলকাতার অন্য এক ব্লগার। তদন্তে নামে পুলিশ। এরপর অত্যন্ত তৎপরতার সাথে অভিযুক্ত সিএনজি চালককে গ্রেফতার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
মৃত্যুঞ্জয় সরদার নামে কলকাতার ওই ব্লগার টুইট করে লেখেন ‘বাংলাদেশী ব্লগার এবং তার বান্ধবী বেঙ্গালুরু প্যালেস দেখতে যাচ্ছিলেন। একটি স্থানীয় সিএনজি চালক তাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। কেমন ভাবে আমরা বিদেশিদের সাথে ব্যবহার করি, দেখুন! দয়া করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিন।’
জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটে এক সপ্তাহ আগে। মোহাম্মদ ফিজ নামে বাংলাদেশি ব্লগার এবং তার বান্ধবীকে নিয়ে বেঙ্গালুরু শহরের ‘সাইট সিন’গুলো দেখার জন্য একজন সিএনজি চালককে ঠিক করেন। এবং ঠিক হয় সিএনজি’র মিটার অনুযায়ী তারা ভাড়া দেবেন। এরপর ওই বাংলাদেশি নাগরিক যখন তাদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছায় দেখা যায় ৩২০ রুপি ভাড়া হয়েছে। মোহাম্মদ ফিজ তখন তার মানিব্যাগ থেকে ওই চালককে একটি ৫০০ রুপির নোট দেন। কিন্তু ওই বাংলাদেশি পর্যটকের সাথে কথা বলতে বলতেই সিএনজি চালক অত্যন্ত কৌশলে ৫০০ রুপির নোটটি তার জামার বাম হাতার তলায় ঢুকিয়ে দেন। পরিবর্তে বাম হাতের তালুতে থাকা ১০০ রুপির নোট দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। স্বাভাবিকভাবেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন ওই পর্যটক এবং ওই চালককে আরেকটি ৫০০ রুপির নোট দিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দেন।
যদিও পরে ওই বাংলাদেশি পর্যটক যখন তার ক্যামেরায় ধারণকৃত সিএনজি চালক ও ভাড়া মেটানোর ভিডিওটি এডিট করতে যান, তখনই ওই ভিডিও দেখে তিনি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং ওই সিএনজি চালকের এই অভিনব প্রতারণার ঘটনাটিও সামনে আসে।
পরে ওই ভিডিওটি নিজের ফেইসবুক ও ইউটিউবে পোস্ট করে ঘটনার বিবরণ দেন মোহাম্মদ ফিজ। তিনি বলেন, বাঙ্গালুরু শহরটা ঘুরে দেখার জন্য চিন্তা ভাবনা করি। তখন দুইজন সিএনজি চালক আমার কাছে আসে। তাদের মধ্যে একজনের সাথে চুক্তি হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার মানিব্যাগ বের করার আগেই সিএনজি চালক ১০০ রুপির একটা নোট তার হাতে রেখে দিয়েছিল। সে আমার থেকে ৫০০ রুপির নোটটি নেয়ার পরে সে তা জামার হাতায় গুঁজে রাখে। পরিবর্তে তার হাতে থাকা ১০০ রুপির নোট দেখিয়ে বলে ৩২০ রুপি ভাড়া হয়েছে।’
ফিজ আরো বলেন, ‘প্রথমে আমি ভেবেছিলাম আমি হয়তো ভুল করেছি, ৫০০ রুপি ভেবে আমি হয়তো ১০০ রুপির নোট দিয়েছি। পরে আমি আরেকটি ৫০০ রুপির নোট দিই।’
বাংলাদেশি ব্লগারের আক্ষেপ অনলাইন অ্যাপ’এর মাধ্যমে ওই সিএনজি বুক করলে তাকে প্রতারিত হতে হতো না। যদিও বা প্রতারিত হতেন, পরবর্তীতে ওই সিএনজির নাম্বার দিয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে পারতেন। সেক্ষেত্রে খুব সহজেই ওই অভিযুক্ত সিএনজি চালককে খুঁজে বের করা যেত।
যেহেতু কলকাতার ওই ব্লগার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই ভিডিওটি বেঙ্গালুরু পুলিশকে জানায়, স্বাভাবিকভাবেই অভিযুক্ত ওই সিএনজি চালককে গ্রেফতার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেও টুইট করে জানানো হয়, ‘অভিযুক্ত সিএনজি চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তাকে সদাশিবনগর থানার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’ সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন