লেখালেখি

বৈশ্বিক মহামারী করুনা ভাইরাস  (COVID-19) প্রসঙ্গ

বৈশ্বিক মহামারী ১৭ এপ্রিল হল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস, আজ কানাডায় ভিক্টোরিয়া ডে ছুটির দিন !

 

বৈশ্বিক মহামারী করুনা ভাইরাস  (COVID-19) প্রসঙ্গ ।। বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি মিনিট ও ঘন্টায় বেড়েই চলেছে । রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর তাগিদে ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে বাধ্যতামূলক অবরুদ্ধ বা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে । ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সবরকম যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ স্বাভাবিক জীবনযাপন। সরকরী নির্দেশে চালু হয়েছে  একজন অপরজন থেকে দুই মিটার Physical Distance দূরে অব্স্হান । ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড়- সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ও বৈশ্বিক মহামারীর ভয়াল ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত । এ মুহুর্তে নিজেকে বাঁচাতে এবং  অপরজনকে বাঁচতে দিতে আমাদেরকে অবশ্যই মানবিক, সহনশীল  ও সংবেদনশীল হতেই হবে । এহেন ভয়াবহ পরিস্হিতিতে আরও কত দিনে এ অবস্থার অবসান ঘটবে, এখন পর্যন্ত তা কেউই বলতে পারছে না।  রাত ১৫ এপ্রিল রাত ৮ টায় এ রিপোর্ট  লেখা পর্যন্ত  ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলে দ্রূত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লক্ষ ৭৮ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে  ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি সুখবর হল এই যে, বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ লক্ষ ১০ হাজারের অধিক মানুষ।  প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে হলেও চীনকে ছাড়িয়ে এখন চীন থেকেও আট গুণের বেশি মৃত্যুর দেশ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। একমাএ যুক্তরাষ্ট্রেই ১৪৪ জন বাংলাদেশি  কোভিড -১৯ এ মারা গেছেন। দেশ হিসেবে করোনায় অক্রান্তে এখন শীর্ষ দেশ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র । ভয়ের ব্যাপার হল এই যে, ক্যানাডার নিকটতম প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রে  ১৫  এপ্রিল রাত ৮ টায় এ রিপোর্ট   লেখা পর্যন্ত  আমেরিকায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ লক্ষ ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে এবং  মৃতের সংখ্যা ২৮  হাজার ছাড়িয়েছে । খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক হলেও সত্যি, মাএ ৭ দিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার থেকে বেড়ে ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে । New York City তে মৃত্যুর সংখ্যা  ১০ হাজার ছাড়িয়েছে । করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন করা যুক্তরাষ্ট্রের World’s largest Financial Centre নিউইয়র্ক শহরই ভয়াবহ Epicenter হয়ে দাড়িয়েছে ।  আক্রান্তের দিক থেকে বর্তমানে ২য় স্হানে রয়েছে স্পেন । স্পেনে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৮০ হাজারের  অধিক এবং স্পেনে মারা গেছেন এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮১২ জন । এরপরের ৩য় অবস্থানে  ইতালিতে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে  ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ১৫৫ জন এবং  ইতালিতে  এ পর্যন্ত মারা গেছেন  ২১ হাজার ৬৪৫ জন । ৪র্থ স্হান ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা  হয়েছে  ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৬৩ জন এবং  ফ্রান্সে  মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে । ৫ম স্হান জার্মানিতে আক্রান্ত ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৩৪ জন  এবং জার্মানিতে মৃতের সংথ্যা ৩ হাজার ৮০৪ জন ।  ।  ৬ষ্ঠ স্হান বৃটেন বা যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে  ৯৮  হাজার ৪৭৬ জন এবং  যুক্তরাজ্যে  এ পর্যন্ত মারা গেছেন  ১২ হাজারের অধিক মানুয় । চীনের পর বর্তমানে ইউরোপ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বলে পূর্বেই জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউরোপে মৃতের সংখ্যা বৈশ্বিক মহামারী করুনা ভাইরাসে (COVID-19) বেড়ে দাড়িয়েছে ৮৫ হাজার । ৭ম  স্হান   চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজারেরও অধিক । চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৪২  জন ।  ৮ম স্্হান ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার ৩৮৯ জন এবং ইরানে মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৭৭ জন । ৯ম  স্হান  তুরষ্কে আক্রান্ত হয়েছে  ৬৯  হাজার ৩৯২ জন এবং তুরষ্কে   এ পর্যন্ত মারা গেছেন  ১ হাজার ৫১৮ জন । ১০ম  স্হান  বেলজিয়ামে আক্রান্ত হয়েছে  ৩৩  হাজার ৫৭৩ জন এবং  বেলজিয়ামে  এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ৪৪০  জন ।একাদশ স্হান ব্রাজিলে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে  ২৮  হাজার ৬১০ জন এবং   ব্রাজিলে এ পর্যন্ত মারা গেছেন  ১ হাজার ৭৫৭ জন । আক্রান্তের দিক থেকে দ্বাদশ স্হানে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড -১৯-এ ক্যানাডায় এ পর্যন্ত  আক্রানত রোগীর সংখ্যা বেড়ে  ২৮ হাজার ৭৬৫ জন ছাড়িয়েছে ।  এক সপ্তাহের মধ্যে ক্যানাডায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুন বেড়ে ১ হাজারের অধিক মানুষ মারা গেছেন । ক্যানাডার ক্যুইবেক প্রদেশেই  আক্রান্ত হয়েছে  ১৪ হাজার ৮৬০ জন যা ক্যানাডার অর্ধেক এবং ক্যুইবেকে  এ পর্যন্ত মারা গেছেন  ৪৮৭ জন  । অন্টারিও প্রদেশে  এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে  ৮ হাজার ৪৪৭ জন এবং অন্টারিও প্রদেশে  এ পর্যন্ত মারা গেছেন  ৪৪৫ জন   । বৃটিশ কলম্বিয়ায়  এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে  ১ হাজার  ৫৬১ জন এবং বৃটিশ কলম্বিয়ায়  প্রদেশে  এ পর্যন্ত মারা গেছেন  ৭৫ জন   । বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৩১ জন আক্রান্ত  এবং ৫০ জন মারা গেছেন  । ভারতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১২ হাজার ৩৭০ জন হয়েছে এবং মারা গেছেন ৪২২  জন । আগামীকাল এ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়েও যেতে পারে । যদি  Miraculously আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আর না বারত, কত না খুশী হতাম ।

এদিকে আমেরিকার প্রেসিডৃন্ট ট্রাম্পের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  (ডব্লিউএইচও )তার মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে । তিনি এই সংস্থার বিরুদ্ধে ভাইরাসটির বিস্তার রোধে অব্যবস্থাপনা ও লুকোচুরির অভিযোগ আনেন । ।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দেন । এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রিয়াসুসের। করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয় । ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দীর্ঘদিনের অকৃত্রিম বন্ধু। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই সম্পর্ক চলমান থাকবে।’ সংবাদ সম্মেলনে তিনি করোনা মোকাবিলায় বিশ্বকে এক হতে বলেন ।

স্বাস্থ্য পরিষেবার ফ্রন্ট লাইনে যে সকল ডাক্তার,নার্স, Patient attendant স্বাস্হ্যকর্মীরা এবং জরুরী কার্যে আসীন ব্যক্তিবর্গ যারা আমাদের সবার জন্য নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে প্রতিদিনের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, আমি প্রত্যেককে আন্তরিক অভিন্ন্দন, ধন্যবাদ ও Salute জানাচ্ছি ।প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কবলে আন্তর্জাতিক ব্যবসাবানিজ্য, চাকুরী, অর্থনীতি, পর্যটন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা-সবকিছুতেই একধরনের ভয়াবহ সুনামী বা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ।  আসুন আমরা বৈশ্বিক মহামারীর এহেন উৎকন্ঠিত  ও  বিপর্যস্ত পরিসহিতিতে নিজে বেঁচে থাকি এবং অপরকেও বাঁচতে দেই। অতএব কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ অবশ্যই সহজ হবে। কোনভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার বা জনসচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ঘনঘন সাবান-পানি Hand sanitizer দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিতে হবে। করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। Physical Distance Two meters মানতে ই হবে ।  অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। এই বিশ্ব সংকট মোকাবেলায় নিজেকে আলাদা সমাজের না ভেবে আসুন আমরা সবাই মিলে একসাথে সচেতনতার সহিত বৈশ্বিক মহামারীর মোকাবিলা করি। মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় সকল নির্দেশাবলী আমরা সবাই সঠিকভাবে মেনে চলি । বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দয়াকরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে চলুন ও নিজ নিজ সরকারের ও স্বাস্হ্যদফতরের নিয়ম বা Guidelines মেনে চলুন ।এটিকে রুখতে হলে সারা বিশ্বকেই একসাথে লড়তে হবে। কোন এক দেশ এটি সম্পূন্ন নির্মূল করতে সমর্থ হলেও অন্য দেশ থেকে আবার ভাইরাস চলে আসবে এবং  সকল রাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন । ।বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা সর্বান্তকরণে সকলের সুস্হতা, মঙ্গল ও কল্যান প্রর্থনা ও কামনা করছি ।

সূত্র:  Worldometer data ও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম  

বিদ্যুৎ ভৌমিক, কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা

মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা ১৫  এপ্রিল ২০২০

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =