বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস (COVID-19)
বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে । ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড়- সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ও বৈশ্বিক মহামারীর ভয়াল ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত । এ মুহুর্তে নিজেকে বাঁচাতে এবং অপরজনকে বাঁচতে দিতে আমাদেরকে অবশ্যই মানবিক, সহনশীল ও সংবেদনশীল হতেই হবে । এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আরও কত দিনে এ অবস্থার অবসান ঘটবে, এখন পর্যন্ত তা কেউই বলতে পারছে না। বিভিন্ন দেশের সরকার ও অসহায় ও আতংকিত মানুষ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেডিকেল সায়েন্সের সাফল্যজনকভাবে নুতন উদ্ভাবনের দিকে-কবে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস এর দ্রূত প্রতিরোধে এর সাফল্যজনক ভ্যাকসিন ও এর নিরাময়ের ঔষধ বের হবে এবং বৈশ্বিক মহামারীর মহাপ্রাদুর্ভাব থেকে মানুষ কত তাড়াতাড়ি মুক্ত হতে পারবে । এখন মানুষের হৃদয়ের একমাত্র প্রত্যাশা ও দাবী, কত তাড়াতাড়ি তাদের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে । বৈশ্বিক মহামারী কোভিড – ১৯ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্হার সাথে সমন্বয় রক্ষা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০০টির মতো ভ্যাকসিন গবেষণা বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৮টি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। ভ্যাকসিন গবেষণার অতীতের সাফল্যের নিরিখে বলা যায় ১০০টির মধ্যে হয়তো ৬–৭টি ভ্যাকসিন কার্যকর হতে পারে । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এত দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি এবং মানবদেহে প্রয়োগের এমন নজির আর নেই । এদিকে বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আশার আলো দেখছেন ।
৬ মে দুপূর ১ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে দ্রূত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ৩৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ লক্ষ ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি সুখবর হল এই যে, বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১২ লক্ষ ৭৫ হাজারের অধিক মানুষ। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে হলেও চীনকে ছাড়িয়ে এখন চীন থেকেও ১৬ গুণের বেশি মৃত্যুর দেশ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ২৩৭ জন বাংলাদেশি কোভিড -১৯ এ মারা গেছেন। দেশ হিসেবে করোনায় অক্রান্তে এখন শীর্ষ দেশ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র । ভয়ের ব্যাপার হল এই যে, ক্যানাডার নিকটতম প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রে ৬ মে দুপুর টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আমেরিকায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৭২ হাজার ছাড়িয়েছে এবং এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সুস্থ হয়েছেন ২ লাখের অধিক মানুষ। আক্রান্তের দিক থেকে বর্তমানে ২য় স্হানে রয়েছে স্পেন । স্পেনে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ৫৩ হাজারের অধিক মানুষ, স্পেনে মারা গেছেন এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৮৫৭ জন এবং এ পর্যন্ত স্পেনে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজারের অধিক মানুষ। । এরপরের ৩য় অবস্থানে ইতালিতে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৪৫৭ জন, ইতালিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯ হাজার ৬৮৪ জন এবং এ পর্যন্ত ইতালিতে সুস্থ হয়েছেন ৯৩ হাজারের অধিক মানুষ। । ৪র্থ স্হান বৃটেন বা যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ১ হাজার ১০১ জন এবং যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩০ হাজারের অধিক মানুষ । ৫ম স্থান ফ্রান্সে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৫৫১ জন, এ পর্যন্ত ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে এবং ফ্রান্সে সুস্থ হয়েছেন ৫২ হাজারের অধিক মানুষ। ৬ষ্ঠ স্থান জার্মানিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৩৭২ জন, জার্মানিতে মৃতের সংথ্যা ৬ হাজার ৯৯৩ জন এবং জার্মানিতে সুস্থ হয়েছেন ১লক্ষ ৩৭ হাজারের অধিক মানুষ। চীনের পর বর্তমানে ইউরোপ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বলে পূর্বেই জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউরোপে মৃতের সংখ্যা বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে (COVID-19) বেড়ে দাড়িয়েছে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার হাজারের অধিক মানুষ । ৭ম স্থান রাশিয়ায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯২৯ জন, রাশিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩৭ জন এবং রাশিয়ায় এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২১ হাজারের অধিক মানুষ । ৮ম স্হান তুরষ্কে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৭৪৪ জন , তুরষ্কে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ৫৮৪ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৮ হাজারের অধিক মানুষ । । ৯ম স্থান ব্রাজিলে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ২৯৯ জন, ব্রাজিলে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮ হাজারের অধিক মানুয় এবং এবং ব্রাজিলে সুস্থ হয়েছেন ৪৮ হাজারের অধিক মানুষ । ১০ম স্থান ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ১ হাজার ৬৫০ জন, ইরানে মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪১৮ জন এবং ইরানে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮১ হাজারের অধিক মানুষ । একাদশ স্থান চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজারেরও অধিক, চীনে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৩ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৭ হাজারের অধিক মানুষ । আক্রান্তের দিক থেকে দ্বাদশ স্হানে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড -১৯-এ ক্যানাডায় এ পর্যন্ত আক্রানত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৬৩ হাজার ৪০৩ জন ছাড়িয়েছে, ক্যানাডায় এ পর্যন্ত মৃতের সংথ্যা মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ২৯৭ জন এবং এ পর্যন্ত ক্যানাডায় সুস্থ হয়েছেন ২৬ হাজারের অধিক মানুষ । ক্যানাডার ক্যুইবেক প্রদেশেই আক্রান্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৩২৭ জন যা ক্যানাডার অর্ধেক থেকেও বেশী এবং ক্যুইবেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৫১০ জন যা ক্যানাডার ৬০% । অন্টারিও প্রদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৭২২ জন এবং অন্টারিও প্রদেশে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১,৫০৩ জন । ১৩ স্হান ভারতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫২ হাজার ৩৪০ জন , ভারতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৭৬৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজারের অধিক মানুষ। ১৪তম স্হান পেরুতেএ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫১ হাজার ১৮৯ জন এবং পেরুতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৪৪৪ জন । ১৫তম স্হান বেলজিয়ামে আক্রান্ত হয়েছে ৫০ হাজার ৭৮১ জন এবং বেলজিয়ামে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮ হাজার ৩৩৯ জন ।বাংলাদেশে এ পর্যনত আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৭১ ৯জন, বাংলাদেশে এ এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮৬ জন এবং বাংলাদেশে সুস্থ হয়েছেন ১৪০০ অধিক মানুষ।
আগামীকাল এ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়েও যেতে পারে । যদি Miraculously আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আর না বারত, কত না খুশী হতাম ।
স্বাস্থ্য পরিষেবার ফ্রন্ট লাইনে যে সকল ডাক্তার,নার্স, Patient attendant স্বাস্হ্যকর্মীরা এবং জরুরী কার্যে আসীন ব্যক্তিবর্গ যারা আমাদের সবার জন্য নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে প্রতিদিনের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, প্রত্যেককে আন্তরিক অভিন্ন্দন, ধন্যবাদ ও স্যালুট জানাচ্ছি । প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কবলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বানিজ্য, চাকুরী, অর্থনীতি, পর্যটন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা-সবকিছুতেই একধরনের ভয়াবহ সুনামী বা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে । অনেক দেশই আস্তে আস্তে Lock down তূলে অর্থনৈতিক ক্াক্রম চালু শুরু করেছে । তবে সতর্কতার সহিত কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই Factory, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ অবশ্যই সহজ হবে। এর অন্যথা হলে বৈশ্বিক মহামারী এ করোনাভাইরাস এতই ছোঁয়াচে বা Contagious যে, অতি দ্রুত, বুঝে ওঠার আগেই, সতর্ক হবার আগেই একাধিক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পরে রোগটি এবং পরে আরও বেশি হারে ছড়ানোর সুযোগ করে দেয়। এ নীরবে, চোখের পলক ফেলার আগে ছড়িয়ে পরতে পারে শরীর থেকে শরীরে! এতএব করোনাভাইরাস প্রতিরোধে Vaccine বের হওয়ার আগে ও এর কার্যকরী ঔষধ বের হওয়ার আগে সতর্কতার সহিত কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে ।আসুন আমরা বৈশ্বিক মহামারীর এহেন উৎকন্ঠিত ও বিপর্যস্ত পরিসহিতিতে নিজে বেঁচে থাকি এবং অপরকেও বাঁচতে দেই। কোনভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার বা জনসচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ঘনঘন সাবান-পানি Hand sanitizer দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিতে হবে। করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। Physical Distance Two meters মানতে ই হবে । এই বিশ্ব সংকট মোকাবেলায় নিজেকে আলাদা সমাজের না ভেবে আসুন আমরা সবাই মিলে একসাথে সচেতনতার সহিত বৈশ্বিক মহামারীর মোকাবিলা করি। মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় সকল নির্দেশাবলী আমরা সবাই সঠিকভাবে মেনে চলি । বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দয়াকরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে চলুন ও নিজ নিজ সরকারের ও স্বাস্হ্যদফতরের নিয়ম বা Guidelines মেনে চলুন ।এটিকে রুখতে হলে সারা বিশ্বকেই একসাথে লড়তে হবে। কোন এক দেশ এটি সম্পূন্ন নির্মূল করতে সমর্থ হলেও অন্য দেশ থেকে আবার ভাইরাস চলে আসবে এবং সকল রাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন । ।বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা সর্বান্তকরণে সকলের সুস্হতা, মঙ্গল ও কল্যান প্রর্থনা ও কামনা করছি ।
সূত্র: Worldometer data ও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম
বিদ্যুৎ ভৌমিক, কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ৬ মে ২০২০
সিবিএনএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন