ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সারাদেশ এখন উত্তাল ও সোচ্চার
বিদ্যুৎ ভৌমিক || ডিসেম্বর মাস হল বাঙ্গালি জাতির বিজয়ের মাস । ডিসেম্বর মাস উৎসব ও আনন্দের মাস । বিশ্বের মানচিত্রে আলোর ঝর্ণাধারায় প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছিল এক নতুন দেশ যার নাম হল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। । অহঙ্কার, আত্মমর্যাদা ও বিজয়ের গৌরবে আমাদের গৌরবান্বিত হওয়ার দিন আবারও আসছে মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর । মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য নির্মাণ এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের এই মাসে একদল দুস্কৃতিকারী রাতের আঁধারে কুষ্টিয়ায় স্বাধীনতার মহান স্হপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের নিষ্ঠুর ঘটনা কোন শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন বিবেকবান মানুষ করতে পারে না।
১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদদেরকে আত্তত্যাগ অস্বীকার করে তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের তাবেদার জামাতে ইসলাম সহ উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সহায়তায় রাজাকার/আলবদররা বংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মহান স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল, ঠিক একই ভাবে আজও তারা ডিজিটেল বাংলাদেশ সহ দেশের সকল উন্নতি ও এগিয়ে যাওয়ার ধারা অমান্য করে বঙ্গবন্ধুকে ও তাঁর ভাস্কর্য নিয়ে গভীর সংকট তৈরি করে এই উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা আবারো দেশকে অনিশ্চিয়তার মধ্যে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র করছে । শুধু ভাস্কর্য বিরোধীতা তাদের মুখ্য বিষয় নয় ভাস্কর্যের বিরোধীতা সহ মূর্তি পূজা বন্ধ করা অর্থাৎ মূর্তি পূজা বা প্রতিমা পূজার বিরোধীতা করে প্রতিমা পূজো বন্ধ করে প্রতিমা পূজারীদের বিতারিত করাই ধর্মান্ধ গোষ্টির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ও পরিকল্পনা । ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিশংসভাবে হত্যা এবং । ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ৪ জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্যেই রোপীত হয়েছিল পাকিস্তানী ধারায় ধর্মান্ধের বিষ বিক্ষ,সেটা তিল তিল করে বড় হয়ে বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও ঐতিহ্যকে দুমুড়ে মুচুড়ে দিয়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার দৃষ্ঠতা দেখাচ্ছে । দেশব্যাপি উগ্র ধর্মান্ধ রাজনৈতিক শক্তি ও রাজনৈতিক মোল্লাদের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণ করার হুমকি, নারী বিদ্বেষী প্রচারনা, বিভিন্ন স্হানে মন্দির ভাংচুর সহ ধর্মীয় সংখালঘুদের উপর নির্যাতন , মুক্তিযুদ্ধ-সংবিধান-জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-সভ্যতা বিরোধী কর্মকান্ড সরকারকে কঠোর হস্তে দমন করা এখনই উচিৎ হবে। উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ও দলগুলোর প্রতিনিয়ত আসফালনে ও প্রতিনিয়ত প্রভাবের ফলই হল পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সোমালিয়া ঝূকিপূর্ণ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পর্যবসিত হয়েছে। যারা জাতির পিতাকে অবমাননা ও অমান্য করে তারা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরোধী। এই সব অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক কার্যকালাপ ও উগ্র মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। রাতের আধারের শক্তি,ষড়যন্ত্র , স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাবিরোধী মদদদাতাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি ।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সারাদেশ এখন উত্তাল ও সোচ্চার । দেশের সর্বত্রই প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছে । সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর হামলার মতো ধৃষ্টতা যারা দেখাবে, তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ভাস্কর্য ভাঙ্গা বা ভেঙ্গে ফেলার হুমকির মতো ঘটনা যারা ঘটাবে সেটিতো অবশ্যই সংবিধান ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। কারণ বঙ্গবন্ধু তো আমাদের জাতির পিতা সাংবিধানিকভাবে ।
জাতির পিতার ভাস্কর্য ধ্বংসের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। সোমবার সংবাদপত্রে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশে এক শ্রেণীর ধর্মীয় মৌলবাদী প্রবক্তা এবং ’৭১-এর পরাজিত ঘাতক-দালাল সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠী সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গা ও ধ্বংস করার মতো যে ক্ষমাহীন ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও পবিত্র সংবিধানবিরোধী। আমরা সরকারকে এই মানবতার শত্রু দেশদ্রোহীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি। বিবৃতি দাতারা হলেন- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, শামসুজ্জামান খান, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, সারোয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, আবদুস সেলিম, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, শফি আহমেদ, আবুল মোমেন, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সারা যাকের ও শিমূল ইউসুফ।
কলামিষ্ট , লেখক ও সিবিএনএ’র উপদেষ্টা,
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন