ভয় – ৩
পূর্ব প্রকাশের পর… ধা রা বা হি ক
… সে জগৎ কখনো হয় আধ্যাত্মিক কখনো হয় কাল্পনিক। আধ্যাত্মিক জগতে কেউ দেখা পায় পরমাত্মার। ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ভাসায় বুক, বাধে কোন ভক্তিরসের গান। আবার কেউ দেখে চোখের সামনে দাড়িয়ে আছে মূর্তিমান মৃত্যু- হাতে কোন ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র নিয়ে। বাঁচাও বাঁচাও বলে করে উঠে চিৎকার । আমাদের সমাজে এজাতীয় মানুষকে মানুষিক বিকারগস্ত হিসেবে ধরা হয়। ওদের পাঠানো হয় মানুষিক চিকিৎসকের কাছে, মানসিক চিকিৎসালয়ে। কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতে বিচরণশীল মানুষদের দেওয়া হয় বিশেষ মর্যাদা । ওদের হয় না কোন চিকিৎসা। আমরা ওদেরকে ওদের অজান্তেই মহামানব বানিয়ে এমন জায়গায় নিয়ে যাই যেখানে ওরা কখনো যেতে চায়নি। ছোটবেলা থেকে আমরা আমাদের আশেপাশে, আমাদের নিজের সংসারে এমন অনেক বিচিত্র মানুষ দেখে দেখে দেখে বড় হয়েছি।
আমাদের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে ঘটে যায় কতো জটিল মিথস্ক্রিয়া। এ জটিল মিথস্ক্রিয়ায় কেউ হয় মহামানব, কেউ হয় পাগল। এই মিথস্ক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে অজস্র হরমন, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হোল ডোপামিন। এই ডোপামিনকে বলা হয় নিউরোট্রান্সমিটার, যা আমাদের ব্রেনকে সঙ্কেত দেয় কষ্টে, দুঃখ, শোকে কাঁদতে হবে, আনন্দে হতে হবে উল্লসিত। এ ডোপামিনের ভারসাম্যহীনতাই আমাদের মনোজগৎকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এর আধিক্যে আমরা কেহ হই সন্দেহপ্রবণ, কেউ মোহগ্রস্ত, কেউ মহামানব, আমার কেউ বা ঘোরতর পাগল। আবার এই ডোপামিনের অভাবে মানুষ ভোগে বিষণ্ণতায়, নিদ্রাহীনতায়, মনোযোগহীনতা সহ অসংখ্য মানুষিক রোগে।
আবারো ফিরে আসি সেই ভয়ের কাছে। ভয় শব্দটাই ভয় জাগায়। কিন্তু কে এই ভয় দেখায়? একটা সময় এ প্রশ্ন আমি আমাকে করেছি। আমার বন্ধুবান্ধবরা কেউই ভুত প্রেত সহ আধিভৌতিক কোন স্বত্বাতে ভয় পেত না। যেহেতু বস্তুবাদী দর্শনে এগুলোর স্থান নেই তাই ওরা প্রায় সবাই অস্বীকার করতো এই ভয় নামক বস্তুকে। শুধু ভয় পেতাম আমি। আদালতের বদ্ধভুমির ঐ ভয় আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। রাত্রে বাড়ী ফিরতে মনে হতো কেউ আমার পিছু নিয়েছে,, আমাদের সূনু ঘাস চিবুতে চিবুতে হেলতে দুলতে বাড়ী ফিরছে আমারি পিছু পিছু। পাছে আমার প্রগতিশীলতার আবরণ ওদের সামনে খুলে পড়ে সেই ভয়ে কখনো বলি নি আমার এ ভয়ের কথা। নিজকে মনে হতো ভীতু, তুলা রাশি জাতক। এতো দিন পড়ে বুঝলাম ভয় হল সহজাত। ভয় হল আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষামুলক ব্যবস্থা। আমাদের আপাত বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য আমাদের পূর্বজের কাছ থেকে বিবর্তনের ধারায় বয়ে আসা এক জটিল ব্যবস্থাপনা। হয়তো আমাদের কোন পূর্বজ বিপদসংকুল ঘন অরণ্যে পথ চলতে চলতে দেখতে পেয়েছিল কোন মৃতদেহ। মৃতদেহ দেখে সে বুঝতে পেরেছিল এ ঘন অরণ্য নিরাপদ নয়। তাকে পালাতে হবে। হয়তো ওরা ছুটে পালিয়েছিল। হয়তো অপর কোন দল পালাতে গিয়ে মুখোমুখি হয়েছে হিংস্র কোন শ্বাপদের, যেখানে ওদের যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। যুগান্তরের এ বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা আমাদের জিনে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। তাই কোন মৃত দেহ, কোন হিংস্র প্রাণী দেখলেই আমাগডিলা আমাদের হাইপোথ্যালামাসকে খবর পাঠায় সামনে বিপদ। কোন ঝুঁকি নেয়া চলবে না – তুমি ট্রিগার চেপে দাও যুদ্ধ অথবা পলায়নের। হাইপোথ্যালামাস sympathetic nervous system ও adrenal-cortical system কে খবর পাঠায় জরুরী ব্যবস্থা নেবার জন্য। ওরা এই ভয়কে মোকাবেলা করার জন্য রক্তে ত্রিশের অধিক হরমন ছেড়ে দেয়। চোখগুলো হয়ে যায় গোল গোল অধিক আলো নেবার জন্য, হৃৎপিণ্ডের কম্পন যায় বেড়ে, যুদ্ধ অথবা পলায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মাংসপেশিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে অতিরিক্ত জ্বালানির সরবরাহ করতে, সঙ্কট-কালীন সময়ে শরীরের অপ্রয়োজনীয় অংশ যেমন পাকস্থলী, ত্বক থেকে রক্ত চলে যায় হৃৎপিণ্ড, হাত ও পায়ের মাংসপেশিতে। ত্বক, নখ, হাতের আঙ্গুল থেকে রক্ত সরে যাবার পেছনেও প্রকৃতির রয়েছে এক সুচিন্তিত পরিকল্পনা । যুদ্ধ অথবা পালাতে যেয়ে রক্তক্ষরণে যেন ভীত সন্ত্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যু না ঘটে তার জন্য প্রকৃতি গড়ে তুলেছে এমন প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা…
চলবে….
।। সুশীল পোদ্দার ওয়াটারলু, কানাডা নিবাসী । ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স, মাস্টার্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স, ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পি, এইচ, ডি, ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স, ওয়াটারলু, বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।।
কাঅ/এসএস