মডেল দিয়ে ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইল করে ধরা খান পাপিয়া । প্রায় দুই মাস আগে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কক্ষে এক মডেল পাঠান নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। এর পর ওই মডেল ও ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও করেন পাপিয়াসহ তার সঙ্গীরা। ইজ্জত বাঁচাতে পাপিয়াকে ২০ লাখ টাকা দেন ওই ব্যবসায়ী। র্যা বের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
র্যা বের সূত্রটি জানায়, অভিযোগ পেয়ে রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে খোঁজখবর নিতে শুরু করে র্যা ব। তবে এই খবর পাপিয়ার কাছে পৌঁছে যায়। পরে পাপিয়া ও তার সঙ্গীরা বিদেশ পালানোর চেষ্টা করেন।
সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন। এই খবর জানতে পারে র্যা ব। পরে শামীমা নূর পাপিয়া, তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী, সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে গ্রেফতার করে র্যা বের একটি দল।
পাপিয়ার মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘র্যা বের গোয়েন্দারা পাপিয়াকে নজরদারিতে রাখার পর জানতে পারেন, পাপিয়া শুধু ওই ব্যবসায়ী নন, এমন অনেক অভিজাত লোককে সুন্দরী তরুণী পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
ক্ষমতাবান ও বিত্তশালীদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে পাপিয়া দেশ-বিদেশের উঠতি মডেলদের ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসতেন মডেলদের। মোটা অঙ্কের লেনদেন হতো মডেলদের সঙ্গে। মডেলদের বাংলাদেশে এনে কিছু দিন রেখে আবার পাঠিয়ে দেয়া হতো। মডেলদের বিমান ভাড়া দিতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা।
শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে এক মাস আগে রাশিয়ার কয়েকজন মডেলও নিয়ে এসেছিলেন পাপিয়া। এর পর ইমিগ্রেশন থেকে ওই মডেলদের আটকে দেয়া হয়। কারণ তারা বাংলাদেশে আসার নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেননি। এর পর শামীমা নূর পাপিয়া বিভিন্ন ক্ষমতাশালীকে দিয়ে ওই মডেলদের বের করে নিতে সক্ষম হন।
এ বিষয়ে র্য্অবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, পাপিয়ার বিদেশ থেকে মডেল আনার খবর আমরাও শুনেছি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আমরা কিছুই জানি না। আমরা এই মামলার তদন্তভার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তদন্তের দায়িত্ব পেলে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, আমাদের কাছে পাপিয়ার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলসহ নানা ধরনের অভিযোগ ছিল। আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনেছি। এর পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে কয়েক মাস ধরে বুক করে অবৈধ নারী, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া। র্যা ব বলছে, গত তিন মাসে শুধু ওই হোটেলেই পাপিয়া বিল দিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। হোটেলটির বারে তিনি প্রতিদিন বিল দিতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এই হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট বরাদ্দ ছিল পাপিয়ার।
ওয়েস্টিন হোটেলের ২২ তলায় সবচেয়ে বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটটিতে থাকতে বহু টাকা গুনতে হতো পাপিয়াকে। চার বেডরুমের ওই সুইটের প্রতিরাতের ভাড়া সাধারণভাবে দুই হাজার ডলারের মতো।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাপিয়া তার অতিথিদের প্রথমে নিয়ে যেতেন ওয়েস্টিনের লবিতে। পরে লাঞ্চ বা ডিনার শেষে সেখান থেকে নিয়ে যেতেন তার নামে বরাদ্দকৃত বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটে।
২৩ তলাবিশিষ্ট ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের লেভেল-২২ এ ১ হাজার ৪১১ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট। সেখানে অতিথিদের সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বৈঠক করতেন পাপিয়া।
এর পর পছন্দসই তরুণীকে নিয়ে গোপন কক্ষে প্রবেশ করতেন ভিআইপিরা।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে প্রথম অনলাইনভিত্তিক যৌন ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম ‘এসকর্ট’ গড়ে তোলেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। এটি গড়ে তুলতে রাজনীতিকে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।
এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুন্দরী তরুণী সরবরাহ করা হতো। কয়েক বছর আগে ‘এসকর্ট’টি গড়ে তোলা হলেও এরই মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোয়।
যৌনব্যবসার অনলাইনভিত্তিক সাইট ‘এসকর্ট’ এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। রিমান্ডের প্রথম দিনেই জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া। এসকর্টের সঙ্গে জড়িত দেহব্যবসায়ী সুন্দরী তরুণী এবং তাদের খদ্দেরদের নামও বলেছে পাপিয়া।
র্যা বের এক কর্মকর্তা জানান, রাজনীতির নারীদের নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করতেন পাপিয়া। রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোয় মাঝেমধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন। এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকত এসকর্ট গ্রুপের উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।
মদের নেশায় টালমাটাল আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কৌশলে ধারণ করা হতো ওই তরুণীদের অশ্লীল ভিডিও। পরে ওইসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন পাপিয়া। বনিবনা না হলেই ফেসবুকে ছড়িয়েও দেয়া হতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যা বের ওই কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পাপিয়ার কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথা ঘুরিয়ে দেয়া খবর। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গীদের ধরতে এরই মধ্যে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলছে।
র্যা বের ওই কর্মকর্তা বলেন, পাপিয়ার মূল ব্যবসা ছিল উঠতি শিল্পপতি-ব্যবসায়ীসহ সমাজের উঁচুস্তরের লোকদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়।
আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, নরসিংদী ও ঢাকার অনেক তরুণীকে চাকরির নামে তারকা হোটেলে ডেকে পার্টি গার্ল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তাদের করা হতো এসকর্টের সদস্য।
এসকর্টের সুন্দরীদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বিত্তবানদের শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করতেন পাপিয়া। এসব কুকর্মের বেশ কিছু ভিডিও এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
এসব বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর বিমানবন্দর থানার এক মামলার রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে তদন্ত কর্মকর্তাদের নানা তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। আমরা যেসব তথ্য পাচ্ছি, তাতে অবাক হচ্ছি। যাচাই করা ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
তিনি বলেন, পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে হোটেলের কে কে জড়িত ছিল, তার অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার পার্টনারই বা কারা ছিল, তার সঙ্গে পাওয়া জাল টাকার উৎসই বা কি, কাদের আশ্রয়-প্রশয়ে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন- সব বিষয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের প্রতারণার শিকার কয়েক ব্যক্তি থানায় এসে আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে গেছেন। আমরা সবকিছুই তদন্ত করছি। এই মুহূর্তে অনেক তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন