দেশের সংবাদ

মাকে বরণ করতে প্রস্তুত কমলগঞ্জের ১৫২টি পূজা মন্ডপ


পূজাকে ঘিরে নেই আগের সেই উৎসবের আমেজ, থাকছে না বর্ণিল আলোকসজ্জা

মাকে বরণ করতে প্রস্তুত কমলগঞ্জের ১৫২টি পূজা মন্ডপ
সজীব দেবরায় মৌলভীবাজার থেকে।।  মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় দূর্গা মাকে বরণ করতে প্রস্তুত পূজামন্ডপগুলো। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে সনাতনী ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। চারিদিকে পূজা পূজা গন্ধ। চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে দূর্গাপূজাকে ঘিরে আগের সেই উৎসবের আমেজ না থাকলেও দূর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ প‚জামন্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষ করে রং তুলির খেলায় প্রতিমাকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা।

এদিকে এবার করোনায় পূজার আয়োজন সীমিত করতে বলা হয়েছে। আয়োজকদের ২৬টি নির্দেশনা অনুসরণ ও প্রতিপালনের কথা বলেছে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহালয়ার অনুষ্ঠান সীমিত করা, নিচু শব্দে ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকা এবং সব ধরনের সাজসজ্জা ও মেলার আয়োজন বন্ধ রাখা, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার।

এবারের পূজার প্রতিমায় ব্যতিক্রম আনার চেষ্টা করেছেন বেশ কয়েকটি প‚জামান্ডপ। তবে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার মন্ডপগুলোতে তেমন আলোকসজ্জা দেখা যাবে না। সরকারি নির্দেশনা মেনে সাজানো হচ্ছে মন্ডপগুলো। তবে পূজামন্ডপগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি বিভিন্ন নির্দেশনা মানতে অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ভিন্ন নির্দেশনা থাকায় অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন আয়োজকরা। এবারের পূজোয় থাকছে না ঝাক-ঝমকপূর্ণ কোন অনুষ্ঠান। এরপরও থেমে নেই কোন কাজ। সরকারি নির্দেশনা মেনে সাজানো হচ্ছে মন্ডপ ও তার আশপাশ। হাতে আর কয়েকদিন বাকি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাত-দিন চলছে পূজার প্রস্তুতি।

কমলগঞ্জ উপজেলায় মোট প‚জা মন্ডপের সংখ্যা ১৫২ টি। তারমধ্যে কমলগঞ্জ পৌরসভায় ৭টি, ১নং রহিমপুর ইউনিয়নে ১৯ টি, ২ নং পতনউষার ইউনিয়নে ১৬টি, ৩নং মুন্সীবাজার ইউনিয়নে ১৫টি, ৪ নং শমসেরনগর ইউনিয়নে ১৪টি, ৫নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৭টি, ৬নং আলীনগর ইউনিয়নে ২০টি, ৭নং আদমপুর ইউনিয়নে ১৩টি, ৮নং মাধবপুর ইউনিয়নে ১৮টি ও ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নে ১০টি প‚জামন্ডপ রয়েছে। এবং ১৩টি ব্যাক্তিগত পূজামন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে প‚জা উদযাপনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি স্বাস্থবিধি সম্পর্কিত গাইডলাইন মেনে দূর্গাপূজা উদযাপনের জন্য কমলগঞ্জ উপজেলার প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দূর্গাপূজা সার্বিক তদারকির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্টোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পূজা মন্ডপগুলোতে যাতে একত্রে বেশি জনসমাগম না হয় সে দিকে বিশেষ নজরদারির জন্য মন্ডপ কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনার কারনে প্রতিটি মÐপে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দর্শনার্থী, ভক্ত, পুরোহিতসহ সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মÐপে নারী ও পুরুষদের যাতায়াতের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে। আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার করা যাবে না।

কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ আরিফুর রহমান ও ওসি(তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাস জানান, কমলগঞ্জের ১৫২ টি পূজামন্ডপে শান্তিপ‚র্ণ ভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবকটি পূজামন্ডপ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা জোড়দার করা হয়েছে। পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের ১০টি মোবাইলটিম পূজা চলাকালিন সময়ে সার্বক্ষণিক কাজ করবে। এবার পূজা চলাকালিন সময়ে মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষায় স্থায়ীভাবে আনসার বাহিনী না থাকায় মন্ডপ কমিটিগুলোকে বিভিন্ন সিপ্টের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কমলগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, শারদীয় দূর্গাপূজা আনন্দঘন ও শানিন্তপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা সর্বপ্রকার সর্তকতা অবলম্বন করছি। সার্থিকভাবে পূজা করার জন্য মন্ডপ কমিটিগুলোকে অভিহিত করেছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অধিকতর নিরাপত্তা জোড়দারের জন্য প্রত্যেক মন্ডপে মন্ডপ কমিটির নিজ উদ্যোগে অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আয়োজকদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কমলগঞ্জে শেষ মুহূর্তে জমজমাট পূজার বাজার

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ ও প্রধান উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জে পূজাকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে অভিজাত মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলোর পূজার বাজার। পূজার জন্যে বিভিন্ন রঙের পোশাকে দোকান সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবার পূজার বাজার কিছুটা স্থবির ছিলো। তবে পূজার দিন ঘনিয়ে আসায় বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে।
কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজার, শমসেরনগর, আদমপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প‚জায় নতুন জামা কাপড় কিনতে ফুটপাতসহ সর্বত্রই লেগেছে কেনাকাটার ধুম। নতুন কাপড়ের সাথে সাথে জুতার দোকানেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষণীয়। পূজার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত হচ্ছেন দোকানীরা।
শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর বাজারগুলো। এবারের পূজার বাজারে- মহিলাদের জামদানী ও কাতান শাড়ি, মেয়েদের থ্রী পিস, সেলোয়ার-কামিজ, ফতোয়া, স্কার্ট-টপস, ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, লং ও শর্ট পাঞ্জাবি, ফতোয়া, শার্ট, জিন্স ও টি-শার্টসহ বাচ্চাদের নানা রঙ ও ডিজাইনের পোশাকের সমাহার ঘটেছে বিভিন্ন পোশাক বিপণীতে।
ভানুগাছ বাজারের জননী বস্ত্রালয়ের মালিক প্রশান্ত চন্দ্র সংগ্রামের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, পূজার দিন ঘনিয়ে এসেছে এখন বেচা বিক্রি জমে উঠেছে। মেয়েদের ও শিশুদের আইটেমগুলো সবচেয়ে বেশি চলছে। পূজা উপলক্ষে স্কার্ট-টপস, থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে। তবে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে অন্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম হচ্ছে। আগের বছরগুলোতে ২০ দিন আগে থেকেই পূজোর বাজার জমে উঠে। এবার তা দেখা যায়নি।
আরো কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, এখন গরম যেমন আছে, তেমনি বৃষ্টির আসা-যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ভালো পণ্য আর সুলভ ম‚ল্যকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
পরিবার নিয়ে বাজার করতে আসা মিতালী ধর জানান, কয়েকদিন আগ থেকে বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটার প্রস্তুতি ছিলো! কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে বাজারে বের হতে ভয় হচ্ছিলো। বছরে একবার পূজা আসে তাই ভয়কে উপেক্ষা করে পরিবারের বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। বাচ্চাদের জামাকাপড় কেনা শেষ হলে পরিবারের বড় সদস্যদের কেনাকাটা হবে।
শেখর ঘোষ সন্তুষ জানান, প‚জোর আর বেশিদিন নেই। তবে এখন পর্যন্ত পরিবারের কেউ কিছু কিনে নি। আমি আজ দেখছি। কাল বাবা, মা ও স্ত্রী’কে নিয়ে বাজার করার চিন্তা আছে।

 

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন