মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের শরীরেও ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস! ।।যুক্তরাষ্ট্রে একদিনেই আক্রান্ত ২৩০০ ব্যক্তি, মৃত্যু হয়েছে ১৪০ জনের ।।চীনে নতুন করে আক্রান্ত হয়নি কেউ, সারাবিশ্বের সর্বশেষ তথ্য ।।ইতালির চিকিৎসকের বয়ান‘জীবনে আমরা কখনো এমন অবস্থা দেখিনি’
মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের শরীরেও ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস ।। প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের দুই সদস্যের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। ওই দুই সদস্য হলেন রিপাবলিকান দলের রাজনীতিবিদ মারিও দিয়াজ-বালার্ট ও ডেমোক্রেটিক দলের বেন ম্যাকঅ্যাডামস।
যুক্তরাষ্ট্রে আগ্রাসী রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস। মার্কিন কংগ্রেস সদস্য দিয়াজ-বালার্টের কার্যালয় থেকে বুধবার রাতে জানানো হয়, গত শনিবার সন্ধ্যায় দিয়াজ-বালার্টের শরীরে করোনার উপসর্গ জ্বর ও মাথা ব্যথার লক্ষণ প্রকাশ পায়। কিছুক্ষণ আগে তার করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এ ভাইরাসকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য বেন ম্যাকঅ্যাডামস বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, আমার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। আমি এখনো বাড়িতে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থেকে আমার এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্রে একদিনেই আক্রান্ত ২৩০০ ব্যক্তি, মৃত্যু হয়েছে ১৪০ জনের
যুক্তরাষ্ট্রে ৮ হাজার ৫০০ বেশি ব্যক্তি কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল বুধবার আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩০০ এর বেশি মানুষ। এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে দেশটিতে ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সবকটি অঙ্গরাজ্যেই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। গত বুধবার সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। এদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২ হাজার ৩০০ আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে চীনে হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। সূত্র: সিএনএন
চীনে নতুন করে আক্রান্ত হয়নি কেউ, সারাবিশ্বের সর্বশেষ তথ্য
চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে কেউ শনাক্ত হয়নি বলে আজ বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই প্রথম কোনো দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটল। সেই সঙ্গে সুসংবাদও রয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে আজ বাড়ি ফিরেছেন চীনের ৩৪ জন নাগরিক।
চীনের ন্যঅশনাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, আগে থেকেই আক্রান্ত হওয়া ৩৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে আটজনের প্রাণহানি ঘটেছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে একশ ৫২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এতে করে সে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার পাঁচশ ৬৫ জনে ঠেকেছে বলে কোরিয়া সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন থেকে জানানো হয়েছে।
গত বুধবারের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় পরদিন আক্রান্তের সংখ্যা একশ জন কমেছে।
মেক্সিকো
মেক্সিকোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেখানে একশ ১৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় বিমান পরিষেবা সংস্থা কান্তাস আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। দেশটির পক্ষ থেকে গত বুধবার নাগরিকদের জানানো হয়, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিমানে চলাচল না করার ব্যাপারে। এর পরই আজ বৃহস্পতিবার বিমান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কান্তাস।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশের ভিসাধারীদের প্রবেশ স্থগিত করা হয়েছে। আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াম জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে একশ ১৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সে দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ব্রাজিল
ব্রাজিলের শহর সাও পাওলোতে সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র
সে দেশের দুজন সাংসদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে জরুরি ত্রাণ তহবিলে সাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইতালি
ইতালিতে নতুন করে চারশ ৭৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে বিশ্বজুড়ে দুই লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ। তবে আট হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ইতালির চিকিৎসকের বয়ান
‘জীবনে আমরা কখনো এমন অবস্থা দেখিনি’
আমি ইতালির একজন চিকিৎসক। কিন্তু আমি ও আমার সহকর্মীদের কেউ কখনো এমন সংকটময় অবস্থা দেখিনি। আমরা ভালো করেই জানি কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনা, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া এমনকি ভূমিকমেপর পর পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাস এখানে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। প্রতিদিন অবস্থা পূর্বের দিনের তুলনায় আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আমরা কি এই অবস্থা সামাল দিতে পারছি? উত্তর হচ্ছে, না।
মহামারি বিষয়টা আমাদের কাছে এমন যে, আমরা সবসময় ভাবি এটা পৃথিবীর অপর প্রান্তে ইউরোপ থেকে অনেক দূরে সংক্রমিত হতে পারে। এই বিশ্বাস আমাদের মধ্যে কুসংস্কারের মতো গেঁথে গিয়েছিল।
কিন্তু এবার এই মহামারি একদম আমাদের শহরে হানা দিয়েছে। আমরা যাদেরকে ভালোবাসি, যারা আমাদের প্রতিবেশী কিংবা সহকর্মী তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে।
ইউরোপের করোনা সংক্রমণের কেন্দ্র ইতালির প্রদেশ লোমবার্ডি। আমি সেখানকার একটি হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়াবিদ। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি ইতালিতে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। আমাদের হাসপাতাল মূলত কার্ডিয়াক সার্জারি বিষয়ক। তবে আমরা সেদিন সিদ্ধান্ত নিলাম যে, যেসব রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সাহায্য করতে আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থা নেবে। অন্য হাসপাতালগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা একটি টাস্কফোর্স গঠন করলাম। যাতে করোনা ভাইরাসের অবস্থা যত খারাপই হোক আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি।
আমাদের সার্জারির সকল শিডিউল বাতিল করা হলো। ইনটেনসিভ কেয়ারের বেডগুলো করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা হলো। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল নতুন ইনটেনসিভ কেয়ার খুলতে শুরু করলো। এ জন্য সাধারণ অপারেশন থিয়েটার ও অ্যানেসথেটিক কক্ষগুলোকে পরিবর্তন করা হয়। এ ছাড়া, করোনা আক্রান্তের জন্য আরো ৪০টি বেড ছেড়ে দেয়া হয়।
কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যার তুলনায় এটি ছিল একেবারেই অপ্রতুল। মঙ্গলবার নাগাদ ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২০০০। এরমধ্যে মারা গেছেন ২৫০৩ জন আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৯৪১ জন। ইতালিতে সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছে লোমবার্ডি প্রদেশ। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬২২০ জন। মারা গেছেন ১৬৪০ জন। ইনটেনসিভ কেয়ারে আছেন ৮৭৯ জন। আমি আশঙ্কা করছি, ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শিগগিরই ধ্বংস হয়ে যাবে।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এখানে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, চিকিৎসকরা বাধ্য হয়েছেন সিদ্ধান্ত নিতে যে কাকে চিকিৎসা দেবেন আর কাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রাখবেন। যদিও আমাদের হাসপাতালে এমন অবস্থা হয়নি। এখানে সব রোগীই তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেয়েছে। তবে ঝুঁকি রয়ে গেছে। কোনোভাবে যদি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু না করে তাহলে পরিস্থিতি দ্রুতই আমাদের ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদেরও সেসব রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে যাদের বেঁচে যাওয়ার সুযোগ অন্যদের থেকে বেশি।
ইতালির চিকিৎসকরা মানবতার জন্য বড় ধরনের ত্যাগ স্বীকার করছেন। আমরা জানি যে, দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কতখানি দরকার। এই ভাবনাটিই আমাদের শক্তি যোগায়, মানসিক ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেয়। আমি জানি না আর কতদিন এমন ভয়াবহ প্রতিরোধ ধরে রাখতে হবে আমাদের। ইতিমধ্যে, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ইনটেনসিভ কেয়ারে আছেন, মৃত্যুঝুঁকি ব্যাপক।
তারমধ্যেও খুব করে বিশ্বাস করতে চাই যে, এই মহামারির শেষের শুরু হয়েছে। কিন্তু এই বিশ্বাস সত্যি হবে কিনা তা তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে, যখন নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসতে শুরু করবে। হয়তো বিশাল এই কন্টেইনমেন্ট প্রচেষ্টা সফল হবে। হয়তো সপ্তাহ শেষে আমরা ভালো খবর পাবো। কিন্তু এখনকার মতো, আমরা একটি গভীর সংকটে নিমজ্জিত।