ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

মেঘ, বৃষ্টির একটি রাত

মেঘ, বৃষ্টির একটি রাত
-আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস


কী বীভৎস অন্ধকার! বাইরে কোথাও কারও কোন সাড়াশব্দ নেই। শুধু আকাশে মেঘের ডাক আর বৃষ্টি পড়ছে।
অনির্বাণ ব‍্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সেসব শব্দ শুনছে। শুনতে শুনতে হঠাৎই সে শুনতে পায় বাইরে কে একজন তার নাম ধরে ডাকছে—অনির্বাণ দা, ও অনির্বাণ দা!
অনির্বাণ উত্তর দেয়—কে?
—আমি কুদ্দুস, অনির্বাণ দা।
—ও, কুদ্দুস!
—হ‍্যাঁ, অনির্বাণ দা।
—কী হল, বল।
—তোমার বাড়িতে একটু জায়গা হবেনা!
—কেন, তোর বাড়ি?
—কিছুক্ষণ হল আমার বাড়িটা ভেঙে পড়ল। বৃষ্টিতে সব জায়গা ভিজে গেছে। রাত্রে থাকার একটুও জায়গা নেই।
—কীভাবে ভেঙে পড়ল?
—মাটির বাড়ি না! অতি বৃষ্টির কারণে ভেঙে পড়ল।
অনির্বাণ অমনি নীচে নেমে এসে গেট খুলে দিল। কুদ্দুসরা দুই স্বামী-স্ত্রী ও তার একমাত্র মেয়েটা বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বৃষ্টিতে তারা ভিজে গেছে।…তাদের দেখে অনির্বাণের দুঃখ হল!
————-

শোক

কর্ম সূত্রে যে বাড়িটাই আমি ভাড়াই থাকি, ওটা হাই রোডের ধারে। তাই, বাড়ি থেকে বেরোলেই অমনি হাই রোডের উপর পা পড়ে।
গত রাতে একটা কুকুর হাই রোডের উপর  খুব কেঁদেছে। আশপাশের বাড়ির মানুষ সেই কান্না সবাই শুনেছে। কিন্তু কেন কেঁদেছে? কোন বাড়ির কোন লোক বেরিয়ে দেখেনি। প্রচণ্ড শীতে সবাই শুয়ে পড়ে বিছানা থেকে আর বেরায়নি। কিন্তু কুকুরটা? শীত, কুয়াশার রাতে শুধু কেঁদেছে আর কেঁদেছে,  ঘুমায়নি।
কুকুরটা আমার পরিচিত। রোজ সকালে সে তার চারটে বাচ্চা নিয়ে আমার ঘরের সামনে এসে বসে থাকে। আমার ভাত, তরকারি রান্না করা দেখে। দিনে দু’বার আমার রান্না হয়। সকালে আর সন্ধ‍্যাতে। সকালের রান্না খেয়ে আমি কাজে বেরিয়ে যাই। আমি খেয়ে যেটুকু থাকে কুকুরটাকে  দিয়ে যাই। বাচ্চাদের নিয়ে সে মহা উল্লাসে খায়।
অতএব কুকুরটা কাঁদছে কেন দেখার জন্য আমি বের হলাম। কুকুরটা তখন রোডের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাকে দেখে কাছে এগিয়ে এল।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম—কী রে, এত চেঁচাচ্ছিস কেন, কী হল?
কুকুরটা তখন ফের রোডের উপর চলে গেল। আমি তার চলে যাওয়া দেখে বুঝলাম, ওখানে নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। সেটা সে আমাকে দেখাতে চাইছে।
এরপর আমি ওখানে গিয়ে যা দেখলাম, তাতে আমার হৃদয় ফেটে চৌচির হয়ে গেল এবং চোখে জল চলে এল। তার একটা বাচ্চা রোডের উপর মরে পড়ে আছে। নাড়ি, ভুঁড়ি সব বেরিয়ে গেছে। শরীরের মাংস ছিটিয়ে গেছে।…
শোকে আজ আমি সারাদিন মৌন হয়ে আছি।
————-

আমারও একটা মেয়ে আছে

মহাশয়,
আমার সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি একজন ভারতীয় নাগরিক। হরিপুর গ্রামে আমার বাস। আমার বাবার নাম নূর ইসলাম। মায়ের নাম শামীমা খাতুন। মা-বাবা দু’জনেই জীবিত আছেন। তবু আমি কিছু দিন ধরে ভীষণ নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি।

কারণ, আমার পিছনে পয়সা ওয়ালা কিছু লোক ভিড় করে লেগে রয়েছেন। যাঁদের ঘরে মেয়ে আছে। আর মেয়ের বিয়ের জন্য যাঁরা মাস্টার জামাই খুঁজছেন। কারণ, তাঁরা জানেন যে, মাস্টার জামাই ধরে মেয়ের বিয়ে দিতে পারলে আর চিন্তা নেই। মেয়ে পায়ের উপর পা তুলে সারাজীবন বসে খাবে। শখ করতে পারবে দেদার।

তাই, আমার পিছনে তাঁরা লেগে রয়েছেন সারাক্ষণ। আমি একটা সেকেন্ডারি স্কুলের স্থায়ী শিক্ষক জেনে। কিন্তু আমার এখন বিয়ে করবার কোনও ইচ্ছেই নেই। বোনের বিয়েটা আগে দেব তারপর।

অতএব মহাশয়, অনুগ্রহ করে আমার পিছনে যাতে তাঁরা আর না লাগেন এবং আমি যাতে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারি তার সুব‍্যবস্থা করে দিন!
                      ইতি—
মকবুল ইসলাম
দরখাস্তটা পড়ে আইসি সাহেব বললেন—আমার নাম মুজিবুর রহমান, আমারও একটা মেয়ে আছে!

সংবাদটি শেয়ার করুন