চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি ও শাকের উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাজারে সরবরাহ হচ্ছে প্রচুর। এতে ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী কম দামে শীতকালীন শাক-সবজি কিনতে পারছেন। তবে দাম কমে যাওয়ার কারনে উৎপাদন খরচ উঠাতে পারছে না কৃষকরা। লাভের আশা বাদ দিয়ে তাঁরা এখন লোকসানের হিসাব কষছেন।
ঢাকার বাইরে সবজিভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত কয়েকটি এলাকায় কৃষক পর্যায় থেকে রাজধানীর বাজারে শাক-সবজি ৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকরা ক্ষোভের নিয়ে বলছেন, সার, বীজ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপাদানে খরচের তুলনায় সবজির দাম পাওয়া যাচ্ছে না। যে দামে মাঠ পর্যায়ে সবজি বিক্রি করা হচ্ছে, তা ঢাকায় আনতে পরিবহনভাড়াও উঠছে না।
বগুড়া, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও নওগাঁর কৃষক পর্যায়ে ভালো মানের বেগুন ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। মুলা পাঁচ-ছয় টাকা, শিম ২৫ থেকে ৩২ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ১৮ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি নতুন আলু ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে ভোক্তারা প্রতি কেজি বেগুন পাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং নতুন দেশি আলু ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
অন্যান্য নিত্যপণ্যের তুলনায় সহনীয় দামে সবজি পেয়ে রাজধানীর ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তিতে। তবে ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ তুলে লাভ করা নিয়ে শঙ্কিত কৃষক।
বগুড়া জেলার বাজারগুলোতে ব্যাপক আমদানি হচ্ছে শীতকালীন সবজি। বগুড়ার চারটি উপজেলার কৃষকরা আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। পাইকারি বাজার ও সবজির আড়তের দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বগুড়ার খুচরা বাজারগুলোতে।
গতকাল মহাস্থান বাজারে শিবগঞ্জ উপজেলার দেবীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বাবলু জানান, গত বৃহস্পতিবার বাজারে যে শিম এক হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, দুই দিনের ব্যবধানে সেই শিমের বাজার মণপ্রতি ২০০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, বগুড়ায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। আগাম জাতের সবজি চাষ করা হয় চার হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। তিনি বলেন, আগাম জাতের সবজিতে কৃষক অনেক ভালো দাম পেয়েছেন। এখন মৌসুমি সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এ কারণে দাম কিছুটা কম।
রাজশাহী পবার খড়খড়ি বাজারে গতকাল সকালে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করা হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। সে হিসাবে এক কেজি বেগুনের দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা। অথচ ১০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী শহরে সেই বেগুন বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। এভাবে প্রতিটি সবজির দাম শহরে এসে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
দুর্গাপুরের সবজি চাষি আকবর হোসেন বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে ক্ষেতে ফসল ফলাই। কিন্তু সেই হারে কখনো দাম পাই না। ফসলের দাম কমুক আর বাড়ুক, তাতে ব্যবসায়ীদের কোনো লোকসান হয় না। যা লোকসান হয়, আমাদের। এখন সবজির দাম কম। ’
নওগাঁ অঞ্চলের কৃষকরা এখন স্থানীয় পাইকারদের কাছে প্রতি মণ বেগুন ৮০০ টাকায় বিক্রি করছে। খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। ফুলকপি পাইকারি বাজারে প্রতিটি ২১ টাকা, খুচরায় ২৫ টাকা। টমেটো প্রকারভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, খুচরায় প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
কুষ্টিয়ায় গতকাল সকালে শহরের সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি বাজার মিউনিসিপ্যালিটি বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ২১ টাকা। আবার সেটিই খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ টাকায়। কৃষক শিম বিক্রি করছেন ৩১ টাকা কেজি দরে।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ