শুভ বড়দিন ||| বিদ্যুৎ ভৌমিক
২৫ ডিসেম্বর হল শুভ ও পবিত্র বড়দিন (The Effulgent and Glorious Christmas Day)। বিশ্বব্যাপী খ্রীস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হল Christmas। আজ থেকে ২ হাজারেরও কয়েক বছর বেশি আগে এই শুভ ও পবিত্র দিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন মুক্তি, সত্য ও সুন্দরের আলোকদিশারী খ্রীস্টধর্মের মহান প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট (Jesus Christ)। প্যালেষ্টাইনের বেথেলহামের এক গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির (Virgin Mary) কোলে জন্ম নেন যিশুখ্রীস্ট । এইদিনে মহান যিশুখ্রীস্ট (Jesus Christ) পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন সত্য, সুন্দর, প্রেম, ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং ক্ষমার অনিন্দসুন্দর বাণী নিয়ে । ততকালীন শাসকচক্রের রোষানলে পড়ে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় যিশুখ্রীস্টকে। পরবর্তী সময় তার মানবিক শিক্ষা, ভালোবাসা, ক্ষমা ও সহনশীলতার পথ অনুসরণ করে পৃথিবীব্যাপী এক ধর্ম সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে যার নাম খ্রীস্টধর্ম। উপহার প্রদান, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, ধর্মীয় গান, গীর্জায় ধর্মোপাসনা, ভোজ, ক্রিসমাস ট্রি, আলোকসজ্জ।, গৃহসজ্জা, এবং Holly সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে বড়দিন (Christmas) উৎসব উদযাপনের অঙ্গ । খ্রীস্টধর্ম হল পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম ধর্ম । সারা বিশ্বে প্রায় ২৪০ কোটি খ্রিস্টধর্মের অনুসারী আছে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার এক–তৃতীয়াংশ। কানাডা, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানী, ইটালী, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, অষ্ট্রিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মত উন্নত, সমৃদ্ধ, গনতান্ত্রিক, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমৃদ্ধ দেশগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই খ্রীস্টধর্মাবলম্বী বা Christians. এদের কাছ থেকে শিক্ষনীয় ও সুন্দর জিনিস এই যে, এ সমস্ত উন্নত, সমৃদ্ধ, গনতান্ত্রিক ও আইনের শাসনে সমৃদ্ধ দেশগুলোর ক্ষমতাসীন সরকার, রাজনৈতিক দল ও বিরোধীদল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম খ্রীষ্ঠধর্ম বা Christianity নিয়ে বাড়াবাড়ি করেনা এবং ধর্মকে রাজনেতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেনা। এজন্যই এ সমস্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশগুলো জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আরও এগিয়ে চলার পথ মসৃন করেই চলেছে।পৃথিবীর যিশুর অমৃতময় বাণী ও তাঁর ভালোবাসা, ক্ষমা, ত্যাগ,তিতিক্ষা সম্পন্ন আলোকিত জীবনবোধ বিশ্বজুড়ে মানব সমাজে বড় ধরণের প্রভাব রেখে চলেছে মানবকল্যাণে ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়।
যিশুখ্রীষ্ট (Jesus Christ ) এই বিশ্বকে হিংসা–বিদ্বেষ ও গ্লানি থেকে মুক্ত করতে জীবন দিয়েছিলেন । হিংসা–বিদ্বেষ ও গ্লানি থেকে এই বিশ্বকে মুক্ত করতে যিশুখ্রিস্ট (Jesus Christ)র মহান বাণী থেকে শিক্ষা লাভ করা অপরিহার্য বর্তমানে।
প্রত্যেক ধর্মেরই মূল বাণী মানবতা, শান্তি ও সম্প্রীতি । বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম, প্রীতি ও শান্তির বাণী প্রচার করা হয় তার মূলেও রয়েছে মানবতা, প্রেম ও শান্তি। কোন ধর্মই এই বোধ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বড়দিন মানুষকে শান্তি, প্রেম ও সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। সারাবিশ্বের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ক্রিসমাস ট্রি, আলোকসজ্জা, বিশেষ কেক, বিশেষ প্রার্থনা সহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করছেন তাদের এই সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা Christmas । বড় দিন বা Christmas বর্তমানে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে । খ্রীস্টান– হিন্দু–বৌদ্ধ মুসলমান– সবাই এ আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। আপনাদের সবাইকে শুভ বড় দিন বা Christmas উপলক্ষ্যে হৃদয় দিয়ে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। Online newspaper CBNA পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে (Merry Chistmas) বা শুভ খ্রীস্টমাসের প্রীতি, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইলো।
বিদ্যুৎ ভৌমিক- লেখক, কলামিষ্ট ও CBNA এর উপদেষ্টা মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা। ২৪ ডিসেম্বর ২০২২