ধর্ম-কর্ম ফিচার্ড

শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব আজ ষষ্ঠী

durga-pooja

বছরব্যাপী অপেক্ষার প্রহর শেষে শুরু হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন- ‘শারদীয় দুর্গোৎসব’। হিন্দু শাস্ত্রমতে দুষ্টের বিনাশ ও সৃষ্টের পালন করতে বছর ঘুরে আবারো দুর্গতিনাশিনী দশভুজা ‘মা দুর্গা’ এসেছেন ধরায়। আজ মহাষষ্ঠী। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুর ধ্বনির মাধ্যমে বেল গাছের নিচে পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজই হবে কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। অধিবাসনের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হবে দেবীকে।

দেবীর এই আগমনকে ঘিরে প্রতিটি এলাকার মন্দির-মণ্ডপে ব্যস্ত সময় পার করছে সনাতনী নারী-পুরুষসহ সংশ্লিষ্টরা। সরজমিনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারো প্রস্তুত করা হয়েছে মহামায়া দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। বাহারি সব রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব প্রতিমা। জাতীয় মন্দির হওয়ায় এখানকার প্রতিমাগুলোতে একটু বেশিই নজর থাকে দর্শনার্থীদের। তাই পূজা শুরুর আগেই শেষ হয়েছে প্রতিমার রঙ-তুলির আঁচড়। ত্রিশূল, চক্র, ঢাল-তলোয়ারসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে দশভুজা দেবী দুর্গাকে। রঙ-বেরঙের আলোকসজ্জা আর নানা রঙের ডিজাইনের কাঠামো ও জমকালো সাজে সাজানো হয়েছে পুরো ঢাকেশ্বরী মন্দিরের অন্দরবাহির। আগত দর্শনার্থী ও নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্নের জন্য পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ জুড়ে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। পূজা কমিটির উদ্যোগে খোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ। অধিক জনসমাগমের কথা চিন্তা করে অনেকেই আসছেন প্রতিমা ও সাজসজ্জা দেখতে।

এদিকে বনানী মাঠে গিয়েও দেখা গেছে, এবারো গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন পক্ষ থেকে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাহারি সব রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ সব প্রতিমা। নানা রঙের ও ডিজাইনের কাঠামো দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজাঙ্গন। প্রতিবারের ন্যায় এবারো গুলশান-বনানী সার্বজনীন বনানী পূজামণ্ডপে সন্ধ্যারতি, ধূনচী নাচসহ পূজার পাঁচদিনই থাকছে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা। খামারবাড়ী কৃষি ইনস্টিটিউটের দুর্গাপূজা মণ্ডপেও একই চিত্র। খামারবাড়ী মোড়ে তৈরি করা হয়েছে আলোকসজ্জা দিয়ে বিশাল প্রবেশদ্বার। রাস্তার দু’ধার সাজানো হয়েছে লাল-নীল বাতি দিয়ে। নারী-পুরুষ উভয় দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার।

পঞ্জিকা মতে, আগামীকাল সোমবার মহাসপ্তমী তিথিতে সপ্তমীবিহিত পূজা।

চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করা হবে দেবীর মৃণ্ময়ীতে। একই সঙ্গে ব্রহ্মণী (কলা), কালিকা (কচু), দুর্গা (হলুদ), কার্ত্তিকী (জয়ন্তী), শিব (কৎবেল), রক্তদন্তিকা (ডালিম), শোকরহিতা (অশোক), চামুণ্ডা (ঘটকচু), লক্ষ্মী (ধান) এই ৯টি উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করা নবপত্রিকাকে দেবী দুর্গার ৯টি শক্তির প্রতীক হিসেবে একত্রিত করে নবপত্রিকা রূপে শস্যদেবীর পূজা করা হবে। মঙ্গলবার মহাঅষ্টমী তিথিতে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে নতুন কাপড় পরিধান করে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবে। এইদিনই হবে সন্ধিপূজা। মাতৃরূপে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় দেবীর ৬ষ্ঠ রূপ ‘উমা’। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। বুধবার নবমী পূজা শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। সবশেষ বৃহস্পতিবার দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, শাস্ত্রমতে বলা হয় সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমীতে গমন হয়। আর দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন ও গমন যে বাহনে, তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছর পৃথিবীবাসীর কেমন কাটবে। এ বছর দেবীর আগমন গজে (হাতি) এবং প্রস্থান হবে দোলায় (পালকি)। শাস্ত্রমতে, গজে আগমন শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য-শ্যামলার প্রতীক। তবে দোলায় প্রস্থানকে মহামারি বা মড়কের ইঙ্গিত বহন করে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, এবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সেই হিসাবে এবার ১ হাজার ৮৯৪টি দুর্গাপূজা বেশি হচ্ছে। আর ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার ঢাকা মহানগরেও ৭টি পূজা বেশি হচ্ছে। পূজা নির্বিঘ্নে পালন করতে এবার সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও আমাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তারাও ব্যাপক নজরদারি রাখছে। এছাড়াও প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করি আড়ম্বরের সঙ্গেই এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হবে।

এদিকে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বলেছেন, সরকার দুর্গাপূজার জন্য এ বছর মোট পাঁচ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবি এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র ও মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা এবং বিজয়া শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজারসহ বিভিন্ন মন্দিরে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

সূত্র: মানবজমিন

এফএইচ/বিডি


CBNA24  রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।

সংবাদটি শেয়ার করুন