দেশের সংবাদ

শোকের ছায়া ‘এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা তিনি’ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আজ স্যার আবেদের দাফন

ফজলে হাসান আবেদ
ফজলে হাসান আবেদ

পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিবেদিত ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ আজ রোববার চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ রাখা হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। এরপর সেখানেই জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে। গতকাল শনিবার ব্র্যাকের কর্মীরা আসেন মহাখালীর ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। এ ছাড়া আত্মীয়-স্বজন ভিড় করেন তার গুলশানের বাসায়। সেখানে তারা ফজলে হাসান আবেদের শোকার্ত স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি সমবেদনা জানান।

বিশাল এই ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে বিশিষ্টজন গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, শারীরিকভাবে প্রস্থান করলেও তার দীর্ঘ কর্মময় জীবন যুগ যুগ ধরে মানুষের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হয়ে থাকবে। এমন মহান মানুষের মৃত্যু নেই। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সমাজের যে বিপুল পরিবর্তন হয়েছে, আবেদ তার প্রধান রূপকার। সমাজের যত ভাঙাচোরা অলিগলি, চোরাবালি, অলীক নিয়মনীতির ফাঁদ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল, সবকিছুতে ফজলে হাসান আবেদ তার সৃজনশীল প্রতিভার ছোঁয়া লাগিয়েছেন। এই ছোঁয়া লাগিয়ে সবকিছু পাল্টে দিয়ে তাকে নতুন কাঠামোয় নিয়ে আসাই ছিল তার ব্রত।

ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, অসাধারণ দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার গভীর জীবন দর্শন ও নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব স্যার ফজলে হোসেন আবেদ।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ হাসপাতালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তার মৃত্যুর খবর দেন। তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার পরই সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্তদের প্রতি সমবেদনা জানান। গভীর শোক জানিয়ে বিবৃতি দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবীর, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিফা হাফিজ, সাবেক এমপি ফজলুল আজিমসহ বিশিষ্টজন এবং শুভান্যুধায়ীরা।

স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও শোক প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস এবং নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জী।

ড. হোসেন জিল্লুর ও ব্র্যাকের বিবৃতি:, স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে এক বিবৃতিতে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ অসাধারণ দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার গভীর জীবন দর্শন ও নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। সবচেয়ে পিছিয়েপড়া মানুষেরও ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে- এই বিশ্বাসে ভর করেই সফলভাবে গড়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ যা সারাবিশ্বে সমাদৃত। ওই সাহস, ওই আকাঙ্ক্ষা একেবারেই শেকড় থেকে আসা। চলে যাওয়ার বেদনার এই মুহূর্তেও পরপার থেকে তার স্মিত হাসি তাই ভরসা দিচ্ছে সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও শ্রম আঁকড়ে ধরে আরও বহুদূর যাওয়া যাবে, যেতে হবে। কারণ পৃথিবীতে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের সংখ্যা এখনও অগণিত। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিদায়।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তার শ্রম ও সাধনায় ব্র্যাকই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। তার মৃত্যুতে ব্র্যাকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে- ‘এই মুহূর্তে কোনো সমবেদনা বা সান্ত্বনার ভাষাই তাকে হারানোর কষ্ট কমাতে পারবে না। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে শান্ত থাকা ও এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষাই তিনি সবসময় আমাদের দিয়েছেন। জীবনভর যে সাহস আর ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি আমরা তার মাঝে দেখেছি, সেই শক্তি নিয়েই আমরা তার স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান জানাব।’

বিশিষ্টজনের উচ্চারণ: স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ফজলে হাসান আবেদ দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এনজিওতে পরিণত করেছিলেন ব্র্যাককে। তিনি যেমন দেশকে সম্মানিত করেছেন, একইভাবে তাকেও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে সম্মানিত করা হয়েছে। এটিও দেশের জন্য সম্মানের। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব ছিল দীর্ঘদিনের। তার মৃত্যুতে আমি শোকগ্রস্ত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, তার মৃত্যুতে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তার সুনাম বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশ এক কিংবদন্তি নায়ককে হারাল। গরিব মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে সারাবিশ্বে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, স্যার ছিলেন বটবৃক্ষ। তার কাছ থেকে শিখেছি, কী করে মানুষের সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। তার স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া। তিনি তৃণমূল থেকে কাজ করে এসেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, তিনি একজন অসাধারণ বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তিনি বলতেন, সমস্যাকে সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যেতে হবে। সবসময় তার মুখে প্রচ্ছন্ন হাসি লেগেই থাকত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আজ যে বাংলাদেশ দেখছি, তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে ব্র্যাক জড়িত। আমাদের আশা থাকবে তার যে চিন্তাভাবনা, কর্মকাণ্ড একাত্তরে শুরু হয়েছিল, সেটি সামনে এগিয়ে নেবেন বর্তমানে ব্র্যাকের কর্ণধাররা।

শোকবই:  ব্র্যাকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মরণে আজ রোববার বেলা ২টা থেকে মহাখালীর প্রধান কার্যালয় ব্র্যাক সেন্টারে একটি শোকবই খোলা হবে। এ ছাড়া আড়ং, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আগামীকাল সোমবার এবং সারাদেশে ব্র্যাকের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শোকবই খোলা থাকবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + 13 =

দেশের সংবাদ

শোকের ছায়া ‘এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা তিনি’ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আজ স্যার আবেদের দাফন

ফজলে হাসান আবেদ
ফজলে হাসান আবেদ

পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নিবেদিত ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ আজ রোববার চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ রাখা হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। এরপর সেখানেই জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে। গতকাল শনিবার ব্র্যাকের কর্মীরা আসেন মহাখালীর ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। এ ছাড়া আত্মীয়-স্বজন ভিড় করেন তার গুলশানের বাসায়। সেখানে তারা ফজলে হাসান আবেদের শোকার্ত স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি সমবেদনা জানান।

বিশাল এই ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে বিশিষ্টজন গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, শারীরিকভাবে প্রস্থান করলেও তার দীর্ঘ কর্মময় জীবন যুগ যুগ ধরে মানুষের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হয়ে থাকবে। এমন মহান মানুষের মৃত্যু নেই। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সমাজের যে বিপুল পরিবর্তন হয়েছে, আবেদ তার প্রধান রূপকার। সমাজের যত ভাঙাচোরা অলিগলি, চোরাবালি, অলীক নিয়মনীতির ফাঁদ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল, সবকিছুতে ফজলে হাসান আবেদ তার সৃজনশীল প্রতিভার ছোঁয়া লাগিয়েছেন। এই ছোঁয়া লাগিয়ে সবকিছু পাল্টে দিয়ে তাকে নতুন কাঠামোয় নিয়ে আসাই ছিল তার ব্রত।

ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, অসাধারণ দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার গভীর জীবন দর্শন ও নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব স্যার ফজলে হোসেন আবেদ।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ হাসপাতালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তার মৃত্যুর খবর দেন। তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার পরই সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বার্তায় এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্তদের প্রতি সমবেদনা জানান। গভীর শোক জানিয়ে বিবৃতি দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবীর, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিফা হাফিজ, সাবেক এমপি ফজলুল আজিমসহ বিশিষ্টজন এবং শুভান্যুধায়ীরা।

স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও শোক প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস এবং নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জী।

ড. হোসেন জিল্লুর ও ব্র্যাকের বিবৃতি:, স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে এক বিবৃতিতে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ অসাধারণ দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার গভীর জীবন দর্শন ও নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। সবচেয়ে পিছিয়েপড়া মানুষেরও ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে- এই বিশ্বাসে ভর করেই সফলভাবে গড়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ যা সারাবিশ্বে সমাদৃত। ওই সাহস, ওই আকাঙ্ক্ষা একেবারেই শেকড় থেকে আসা। চলে যাওয়ার বেদনার এই মুহূর্তেও পরপার থেকে তার স্মিত হাসি তাই ভরসা দিচ্ছে সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও শ্রম আঁকড়ে ধরে আরও বহুদূর যাওয়া যাবে, যেতে হবে। কারণ পৃথিবীতে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের সংখ্যা এখনও অগণিত। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিদায়।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তার শ্রম ও সাধনায় ব্র্যাকই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। তার মৃত্যুতে ব্র্যাকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে- ‘এই মুহূর্তে কোনো সমবেদনা বা সান্ত্বনার ভাষাই তাকে হারানোর কষ্ট কমাতে পারবে না। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে শান্ত থাকা ও এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষাই তিনি সবসময় আমাদের দিয়েছেন। জীবনভর যে সাহস আর ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি আমরা তার মাঝে দেখেছি, সেই শক্তি নিয়েই আমরা তার স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান জানাব।’

বিশিষ্টজনের উচ্চারণ: স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ফজলে হাসান আবেদ দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এনজিওতে পরিণত করেছিলেন ব্র্যাককে। তিনি যেমন দেশকে সম্মানিত করেছেন, একইভাবে তাকেও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে সম্মানিত করা হয়েছে। এটিও দেশের জন্য সম্মানের। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব ছিল দীর্ঘদিনের। তার মৃত্যুতে আমি শোকগ্রস্ত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, তার মৃত্যুতে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তার সুনাম বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশ এক কিংবদন্তি নায়ককে হারাল। গরিব মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে সারাবিশ্বে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, স্যার ছিলেন বটবৃক্ষ। তার কাছ থেকে শিখেছি, কী করে মানুষের সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। তার স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া। তিনি তৃণমূল থেকে কাজ করে এসেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, তিনি একজন অসাধারণ বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তিনি বলতেন, সমস্যাকে সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যেতে হবে। সবসময় তার মুখে প্রচ্ছন্ন হাসি লেগেই থাকত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আজ যে বাংলাদেশ দেখছি, তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে ব্র্যাক জড়িত। আমাদের আশা থাকবে তার যে চিন্তাভাবনা, কর্মকাণ্ড একাত্তরে শুরু হয়েছিল, সেটি সামনে এগিয়ে নেবেন বর্তমানে ব্র্যাকের কর্ণধাররা।

শোকবই:  ব্র্যাকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মরণে আজ রোববার বেলা ২টা থেকে মহাখালীর প্রধান কার্যালয় ব্র্যাক সেন্টারে একটি শোকবই খোলা হবে। এ ছাড়া আড়ং, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আগামীকাল সোমবার এবং সারাদেশে ব্র্যাকের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শোকবই খোলা থাকবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =