দেশের সংবাদ

সন্তানের সামনে আদিবাসী নারীকে নির্যাতন


সন্তানের সামনে আদিবাসী নারীকে নির্যাতন

ঘাটাইল উপজেলায় চোর সন্দেহে সন্ধ্যা রানী নামে বর্মণ সম্প্রদায়ের এক নারীকে সন্তানদের সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। ১০ জানুয়ারি রাতে নির্যাতিতা ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা হলেন- মনিরুল ইসলাম ভূইয়া, তার দুই ছেলে মোস্তফা ভূইয়া ও সজিব ভূইয়া, দুই মেয়ে মোছা. খুকি ও সুমি আক্তার।

নির্যাতিতা উপজেলার সাগরদিঘি ইউনিয়নের মালিরচালা গ্রামের নারায়ণ বর্মনের স্ত্রী। বিষয়টি গতকাল জানাজানি হয়। গতকাল গণমাধ্যমকর্মীরা মামলা সূত্রে ঘটনা জানতে পারেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, সন্ধ্যা রানীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আসামিদের সন্তানদের সঙ্গে তার ছোট ছেলে পলাশ (৮) খেলাধুলা করত এবং ঘুড়ি ওড়াত। ঘটনার ১৫ দিন আগে পলাশ আসামি মনিরুল ইসলাম ভূইয়ার বাড়ি থেকে ঘুড়ি বানানোর জন্য একটি পত্রিকা নিয়ে আসে। সেটি দিয়ে ঘুড়ি বানিয়ে আসামির সন্তানদের সঙ্গে ওড়ায় সে। হঠাৎ মনিরুলের বাড়ি থেকে স্বর্ণ ও টাকাসহ মূল্যবান কাগজপত্র চুরি যায়। ৩ জানুয়ারি পলাশকে তারা ধরে নিয়ে মারধর করেন এবং মালামাল চুরি করে মায়ের কাছে জমা রেখেছে বলে স্বীকারোক্তি দিতে বলে। অন্যথায় তার মাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ভয়ে পলাশ স্বীকারোক্তি দেয়। ৯ জানুয়ারি খুকি ও সুমি সন্ধ্যা রানীর বাড়িতে গিয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়। পরে তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে করিম ভূইয়ার বাগানে রশি দিয়ে আকাশমনি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। সেখানে আসামিরা ওই নারীকে এলাপাতাড়ি লাঠি দিয়ে মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। এদিকে মামলা করার পর সন্ধ্যা রানী ও তার পরিবারকে আসামিরা হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আসামি মোস্তফা ভূইয়া বলেন, আমার ছোট বোনের গহনা চুরি করে সন্ধ্যা রানীর ছেলে পলাশ। সে চুরি করা গহনা তার মায়ের কাছে জমা দেয়। বারবার চাইলেও তারা দেয় না। তাই আমার ছোট বোন সুমি সন্ধ্যা রানীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। আমরা কিছু জানি না।

প্রত্যেক্ষদর্শী মহানন্দচন্দ্র বর্মণ বলেন, সন্ধ্যা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা সন্ধ্যা রানীকে বেঁধে রাখা হয়। তখন তার ৬ মাসের বাচ্চা কান্না করছিল। এর মাঝে বাচ্চাটাকে মায়ের দুধও খেতে দেওয়া হয়নি। পরে দুই বন্ধুর সহযোগিতায় সন্ধ্যা রানীকে উদ্ধার করি। এখন পর্যন্ত সে আমার বাড়িতে আছে।

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাগরদিঘি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বর্মণ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, এটি অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। সাধারণত গরিব মানুষ, অসহায়, আদিবাসী হলে তারা খুব অসহায় থাকে। সমাজের ধনী মানুষগুলো তাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করে নোংরা আনন্দ পায়। নারী ও শিশুর প্রতি তারা সহিংসতা করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, আইন হাতে তুলে নিয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

ঘাটাইল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ছাইফুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

 

এসএস/সিএ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন