রানী এলিজাবেথকে পেছনে ফেলে ব্রিটেনে সম্পদশালী নারী অক্ষতা মূর্তি
সম্পদের মালিকায় এবার ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে পিছনে ফেললেন অক্ষতা মূর্তি। তিনি দেশটির অর্থমন্ত্রী বা চ্যান্সেলর ঋষি সুনাকের স্ত্রী ও ভারতীয় অন্যতম শীর্ষ ধনী বিলিয়নিয়ার এনআর নারায়ণ মূর্তির কন্যা। পারিবারিক সম্পদে তার নিজস্ব শেয়ার রয়েছে কমপক্ষে ৪৩ কোটি পাউন্ডের।
অন্যদিকে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্পদের পরিমাণ ৩৫ কোটি পাউন্ড। এর ফলে বৃটেনে সবচেয়ে সম্পদশালী যেসব নারী আছেন তার মধ্যে অন্যতম ঋষি সুনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। খবর ডেইলি মেইলের।
ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনাকালে সাক্ষাত হয় ঋষি সুনাক ও অক্ষতা মূর্তির। সেই সাক্ষাত থেকেই প্রেম। প্রেম থেকে প্রণয়।
সম্প্রতি তাদের অর্থের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাতে জানানো হয়, অক্ষতা মূর্তি ও তার আত্মীয়রা যে মাল্টিমিলিয়ন পাউন্ডের শেয়ার মালিক, তার মধ্যে বড় অংকের শেয়ার রয়েছে অক্ষতা মূর্তির।
উল্লেখ্য, অক্ষতা মূর্তির ভারতের শুধু অন্যতম শীর্ষ ধনীই নন, তাকে দেশটির আইটি সেক্টরের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়া সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১২ জন ব্যবসায়ীর মধ্যে তিনি অন্যতম।
অন্যদিকে ঋষি সুনাক হলেন ভারতের যশবীর ও উষা সুনাকের পুত্র। তার মা একজন ফার্মাসিস্ট। তিনি ১৯৬০ এর দশকে পূর্ব আফ্রিকা থেকে পাড়ি জমান সাউদাম্পটনে। ঋষি সুনাক পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। এর আগে তিনি স্ট্যানফোর্ডে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান। সেখানেই ভবিষ্যত সাক্ষাত হয় অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে।
তবে গত মাসে নিজের আর্থিক অবস্থার তথ্য প্রকাশের জন্য বড় চাপে পড়েন ঋষি সুনাক। বলা হয়, গত বছর জুলাইয়ে তাকে ট্রেজারিতে চিফ সেক্রেটারি বানানোর পর তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি ‘ব্লাইন্ড ট্রাস্ট’। কিন্তু তিনি এত অর্থ কোথায় পেলেন, এ নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। বলা হয়, সবচেয়ে ধনী এমপি ঋষি সুনাক। তিনি কিভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন। তারই জবাবে বেরিয়ে এসেছে তথ্য।
তাতে বলা হয়েছে, তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি হলেন ভারতের একজন উদ্যোক্তার মেয়ে। অক্ষতার বাবা ভারতের প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সেখানে অক্ষতা মূর্তির রয়েছে ব্যক্তিগত শতকরা ০.৯১ ভাগ শেয়ার। যার মূল্য ৪৩ কোটি পাউন্ড। এছাড়া অ্যামাজন কোম্পানির সঙ্গে তার রয়েছে পারিবারিক ব্যবসা। সেখানে বছরে ৯০ কোটি পাউন্ড আয় হয়। এছাড়া শেয়ার আছে জেমি অলিভারের জেমিস ইতালিয়ান এবং ভারতে বার্গার চেইন বলে খ্যাত ওয়েন্ডিসে।
বৃটিশ অর্থমন্ত্রী বা চ্যান্সেলর বানানোর আগে ঋষি সুনাক ব্রিটেনে যতটা পরিচিত ছিলেন, তার চেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন ভারতে। বিশেষ করে তিনি যখন বিলিয়নিয়ার নারায়ণ মূর্তির কন্যা অক্ষতাকে বিয়ে করেন। তখন সবার মুখে মুখে উড়তে থাকে ঋষি সুনাকের নাম। অক্ষমতার বাবা ভারতের ৫১তম শীর্ষ ধর্নী।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে, তিনি সারাবিশ্বের বিলিয়নিয়ারের তালিকায় ১১৩৫ নম্বর অবস্থানে। তার বাড়ি ভারতের ব্যাঙ্গালোরে। দু’সন্তানের জনক তিনি। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিজ্ঞানে মার্স্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন নারায়ণ মূর্তি। এর আগেই তাকে বানানো হয় ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। ৩০ বছর এই কোম্পানিতে কাজ করার পর ২০১১ সালে তিনি পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপর ২০১৩ সালে আবার তিনি ফিরে আসেন। তাকে কোম্পানির প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা বানানো হয় ২০১৪ সালে।
অন্যদিকে, ঋষি সুনাকের জন্ম সাউদাম্পটনে। তিনি যখন ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান তখন এই প্রযুক্তি জায়ান্টের অর্থের মূল্য ২০০ কোটি পাউন্ড। ওই সময় অক্সফোর্ডে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়া অক্ষতার সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। সেই সাক্ষাত তাদেরকে সারাজীবনের জন্য আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। বর্তমানে নারায়ণ মূর্তির সেই ব্যবসার অর্থমূল্য ৩৩৩০ কোটি পাউন্ট। এতে নারায়ণ মূর্তির নেট শেয়ার ২৩০ কোটি পাউন্ড। তার কোম্পানির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নারায়ণ মূর্তির স্ত্রী সুধা মূর্তি, যিনি একজন লেখিকা, তিনি বর্তমানে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পরিষদে আছেন। এছাড়া ইনস্টিটিউট ফর এডভান্সড স্টাডি ইন নিউ জার্সি এবং ইউনাইটেড নেশনস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। নারায়ণ র্মূতি কর্নেল ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্টন স্কুল, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস, অক্সফোর্ডের রোডস ট্রাস্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা পরিষদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ইনফোসিস বলেছে, নারায়ণ মূর্তি সারাবিশ্বে দিনরাত ২৪ ঘন্টা কাজ করার ধারণা প্রচলন করেন।
২০০৯ সালে ব্যাঙ্গালোরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সুনাক ও অক্ষতা। ওই বিয়ের অনুষ্ঠান হয় দু’দিন ধরে। এতে উপস্থিত হয়েছিলেন এক হাজার অতিথি। বর্তমানে নিজের ক্ষমতাবলে ঋষি সুনাক একজন মাল্টি-মিলিয়নিয়ার। রানী এলিজাবেথকে পেছনে ফেলে ব্রিটেনে সম্পদশালী নারী অক্ষতা মূর্তি তবে রাজনীতিতে আসার আগে তিনি বছরে ৪২ হাজার পাউন্ড খরচের উইনচেস্টার কলেজে পড়াশোনা করেন। পরে পড়তে যান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। ব্যবসার সময়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া, ভারত, ব্রিটেন এবং বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছেন। তার বিনিয়োগ আছে গোল্ডম্যান স্যাসের মতো প্রতিষ্ঠানে। পরে তিনি নিজেই ব্যবসা দাঁড় করান। এর নাম দেন থেলেমি পার্টনার্স। ২০১০ সালে শুরু করা এই ব্যবসার প্রাথমিক মূলধন ছিল ৫৩ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড।
-এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন