জন্মভূমি সম্পাদক মোস্তফা আল্লামা’র মৃত্যুতে গভীর শোক
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত সাপ্তাহিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং চিরকুমার মোস্তফা আল্লামা আর নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাঁর মৃত্যু সংবাদে দেশে ও প্রবাসে শোকের ছায়া নেমে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান শহরের নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৭১ সালে মোস্তাফা আল্লামা’র সম্পাদনায় মুদ্রিত হয়ে ‘জন্মভূমি’ পত্রিকাটি বের হতো তৎসময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপ, রণাঙ্গনের খবরা খবর, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয়ের সংবাদ, শরণার্থী শিবিরের দূর্দশা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা ধরনের তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে যোদ্ধা ও সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করা হতো।
জানা গেছে, দুই-তিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের লোকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে (বাংলাদেশ সময় আজ রবিবার সকাল) বাসার দরজা ভেঙে ঢুকে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। ফেসবুক লাইভে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান শহরে বসবাসরত বাঙালি কমিউনিটি নেতা সুলতান জে শরীফ।
স্থানীয় সময় আগামীকাল সোমবার বাদ এশা মসজিদুন নূরে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
মোস্তফা আল্লামার জন্ম ১৯৪৯ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজারে। তিনি ফটোগ্রাফার হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ওসমানীর সঙ্গেও কাজ করেছেন। তাঁর মৃত্যু দেশের মতো বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক গাথা, শোক বাণী এবং স্মৃতিচারণ করে যাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক সাংবাদিক তাজুল মোহাম্মদ মোস্তাফা আল্লামা’র মৃত্যুতে এভাবেই শোকগাথা লিখেছেন ‘
ঘুম ভাঙ্গলো স্বপন ভাইয়ের ফোনে। এ সময়ে ফোন মানেই দুঃসংবাদ। সাহস পেলাম না ফোন ধরতে।বাথরুম সেরে এসে কলব্যাক করলাম।স্বপনভাই দিলেন মোস্তফা আল্লামার মৃত্যু সংবাদ।
এক সময় পরিচয় ছিল তাঁর -বঙ্গবন্ধুর ফটোগ্রাফার বলে। তারপর হয়ে যান জেনারেল ওসমানীর
ফটোগ্রাফার।হ
তারুণ্যে উচ্ছ্বল সেই সময়ের তরুণ গেলেন মুক্তিযুদ্ধে।মুজিবনগর থেকে প্রকাশ করলেন সাপ্তাহিক জন্মভূমি। সে সময়ে রঙিন পত্রিকা কেউ কল্পনা করেনি।হয়ে যায় পত্রিকাটি পাঠকপ্রিয়।
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর যে হেলিকপ্টারে করে সিলেট যাচ্ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী, চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুর রব, ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও জেনারেল ওসমানীর এ. ডি. সি.বঙ্গবন্ধু তনয় শেখ কামাল সে আকাশযানের অপর যাত্রী ছিলেন মোস্তফা আল্লামা।আকাশেই গুলিবিদ্ধ হয় হেলিকপ্টারটি। ভূপাতিত হন তাঁরা ফেন্চুগন্জের কাছে -হাওরে।সেখান থেকেও বেঁচে গিয়েছিলেন সবাই।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি কর্মজীবনে ট্রেভেলস্ ব্যবসা,হোটেল ব্যবসা, গাড়ির ব্যবসা, আরো কতকিছু করেছেন। আল্লামা গোল্ড কাপ আয়োজন করে পরিচিতি পেয়েছিলেন ব্যাপকভাবে। সিলেট- ৬ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন ১৯৮৮ সালে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আস্হাশীল মুক্তিযুদ্ধের এই কলম সৈনিকের তিরোধান সংবাদে শোকাভিভূত হয়ে ফেইসবুকে ঢুকতেই চোখ আটকে যায় আজিজুল পারভেজের স্ট্যাটাসে।
ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহ- সভাপতি, কবি,লেখক,দৈনিক সংবাদের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক, কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাতও চলে গেছেন -না ফেরার দেশে। এই দুই কলমযোদ্ধার প্রয়ান সংবাদ দিয়েই শুরু হলো দিন।এইতো মাত্র সেদিন খুকু ভাবি(ভাষা বিগ্ঞানী প্রফেসর ড. হায়াৎ মামুদের স্ত্রী)ফোনে জানিয়েছিলেন হাসনাত ভাইয়ের অসুস্হতার সংবাদ।বললেন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরপর আর কোন খোঁজ নেয়া হয়নি।এর আগেই চলে গেলেন তিনি। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায় এই দুই গুনী মানুষের মহাপ্রয়ানে।এত তাড়া ছিল কিসের হাসনাত ভাই?আল্লামা ভাইও সারা জীবনের ন্যায় তাড়াহুড়ো করে পাড়ি জমালেন।তাঁদের দু’ জনেরই আত্নার শান্তি কামনা করছি। যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন দু’ জন।
এসএস/সিএ
সর্বশেষ সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন