দেশের সংবাদ

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড -অজ্ঞাত দু’জন কারা

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড -অজ্ঞাত দু'জন কারা
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড

অজ্ঞাত দু’জন কারা  ।। আদালতে র‌্যাবের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন

একাত্তর দফা পেছানোর পর ৭২তম তারিখে গতকাল সোমবার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের পক্ষ থেকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তবে এই হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। ডিএনএ নমুনার মাধ্যমে তদন্ত যেভাবে এগিয়ে চলেছে, গতকালের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে র‌্যাব তা তুলে ধরেছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড -অজ্ঞাত দু’জন কারা এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে!

এর আগে ২০১৫ সালের জুনে আদালতে দেওয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে র‌্যাব জানিয়েছিল, ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পাঠিয়ে ফরেনসিক ও রাসায়নিক পরীক্ষায় দু’জন অজ্ঞাত পুরুষের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ বৃত্তান্ত পাওয়া গেছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে যে অজ্ঞাত দু’জনের ডিএনএ শনাক্ত হয়েছিল, বর্তমানে তাদের চেহারাও  শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্নিষ্ট ল্যাবের কাছে র‌্যাবের পক্ষ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলের সূত্র ধরে তাদের চেহারা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম সমকালকে বলেন, সাগর-রুনির ঘটনায় অজ্ঞাত দু’জনের ডিএনএ আলামত অনেক আগেই মিলেছিল। আগে মৌখিকভাবে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে জানানো হয়েছিল। এবার তা হলফনামা আকারে লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে।

র‌্যাবের তদন্ত ও ফরেনসিক বিভাগের পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, সাগর-রুনির হত্যায় জড়িত সুনির্দিষ্ট কারও পরিচয় এখনও জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আলামতের সূত্র ধরে অজ্ঞাত যাদের ডিএনএ প্রোফাইল মিলেছিল, সেসবের মাধ্যমে জড়িতদের চেহারা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। নতুন একটি প্রযুক্তি দিয়ে ডিএনএ নমুনার সূত্র ধরে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তির চেহারা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সাগর-রুনির ডিএনএ আলামত যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে রয়েছে। তাদের তাই বলা হয়েছে ওই নমুনার সূত্র ধরে জড়িতদের চেহারা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় কিনা, তা জানাতে। তবে এখনও এ ব্যাপারে ল্যাব কর্তৃপক্ষের উত্তর মেলেনি।

সাংবাদিক সাগর সারওয়ারের মা সালেহা মনির গতকাল রাতে বলেন, অজ্ঞাতনামা অজ্ঞাতনামা অনেক দিন ধরেই শুনছি। এখন আসল খুনির চেহারা দেখতে চাই। কারা কেন ওদের খুন করেছে, মরার আগে তা জানতে পারলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। বলা হয়েছিল, সগিরা মোর্শেদকে ছিনতাইকারীরা খুন করেছে। ৩০ বছর পর অন্য কাহিনি বের হলো। তদন্তকারীরা চাইলে নিশ্চয়ই সবকিছু বের করে আনতে পারে।

সূত্র জানায়, সাগরের হাতে বাঁধা চাদর এবং রুনির টি-শার্টসহ অন্যান্য আলামতের সূত্র ধরে অজ্ঞাত দুই পুরুষের ডিএনএর নমুনা মিলেছে। এই মামলায় তানভীরের অবস্থা ছিল রহস্যজনক। মামলা থেকে (বিচারিক আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে) তাকে অব্যাহতি দেওয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আগামী ৪ মার্চ বা তার আগে এ মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা এবং অপরাধের সঙ্গে তানভীরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রতিবেদন হলফনামাসহ দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এদিকে ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারের পর জামিনে থাকা মো. তানভীর রহমান তার বিরুদ্ধে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল র‌্যাব মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে।

গতকাল সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তদন্তসংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিলের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ালে অনেকের মনে আশার সঞ্চার হয়। অনেকের বিশ্বাস, দেরিতে হলেও এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। পরদিন সকালে সেখান থেকে পুলিশ তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে। ওই দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। একই বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়মিত ক্রাইম কনফারেন্সে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, ‘তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুব শিগগিরই এর রহস্য উন্মোচন করা হবে।’

কিন্তু তারপর দীর্ঘ আট বছর পেরোলেও নৃশংস এই হত্যাকাে র তদন্ত সেই তিমিরেই রয়েছে। খুনিরা রয়েছে অধরা। যদিও পাল্টেছে মামলার তদন্ত সংস্থা। হত্যার মোটিভ কিংবা খুনিদের আদৌ গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে কিনা, সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের বছরের ২৬ এপ্রিল হত্যার ৭৫ দিন পর কবর থেকে লাশ তুলে ভিসেরা পরীক্ষা করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টের মাধ্যমে র‌্যাব শনাক্ত করতে চেয়েছিল, সাগর-রুনিকে হত্যার আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কিনা। তবে লাশ পচন ধরায় সে প্রতিবেদনে এমন আলামত পাওয়া যায়নি। থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) তদন্তের ব্যর্থতার পর আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে র‌্যাব বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। এ ছাড়া ওই মামলায় বিভিন্ন সময়ে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও দারোয়ান এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যায় ব্যবহূত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগর-রুনির পরনের কাপড় ও সাগরের হাত-পা বাঁধা কাপড় ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। হত্যায় সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনাও বিদেশি ল্যাবে পাঠানো হয়। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন তদন্ত সংস্থার হাতে এসেছে। তবে তা দিয়ে আসামি শনাক্তের জন্য কার্যকর ক্লু মেলেনি। আদালতে জমা দেওয়া প্রতিটি প্রতিবেদনে শুধু ‘গুরুত্বসহ তদন্ত চলছে’ বলেই উল্লেখ করা হচ্ছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাগর-রুনিকে মৃত্যুর আগে কোনো প্রকার বিষাক্ত বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করানো হয়নি। আর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছুরিকাঘাতে রক্তক্ষরণ ও আঘাতের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

সাংবাদিক দম্পতি হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেলে মামলার রহস্য উদ্‌?ঘাটিত হবে বলে তদন্ত সংশ্নিষ্টরা বিভিন্ন সময় আশা প্রকাশ করেছিলেন। তবে ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পরও দীর্ঘদিন খুনিদের শনাক্ত করা যায়নি। এখন অপেক্ষা, ডিএনএ আলামতের সূত্র ধরে খুনিদের চেহারার কোনো বর্ণনা বের হয় কিনা।

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ     
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − fifteen =