সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করোনাভাইরাসের ।। চীনে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া নতুন এই ভাইরাসে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
নতুন এক প্রাণঘাতী ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের নববর্ষের অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে করা এক বিশেষ বৈঠকে এ মন্তব্য করেছেন তিনি। দেশ ‘মারাত্মক পরিস্থিতি’র মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জিনপিং।
উহান শহরে প্রথম লক্ষ্মণ দেখা যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৫৬ জন মারা গেছে এবং হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৯৭ জন চীনে (হংকং, মাকু ও তাইপেসহ) এছাড়া আমেরিকায় দুইজন, ফ্রান্সে ৩ জন কোরিয়ায় ২ জন ভিয়েতনামে ২ জন থাইল্যান্ডে ৪ জন সিঙ্গাপুরে ৩ জন, অস্ট্রেলিয়া ৩, জাপানে ৩ জন সর্বশেষ নেপালে একজনকে সনাক্ত করা হয়েছে।
এদিকে ভারতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের তথ্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেল এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতের বিষয় কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশ পর্যন্ত কোন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সন্ধান মিলেনি বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর।
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না।
চীনে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে একাধিক শহরে ঢোকা এবং শহর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। রবিবার থেকে উহানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় পত্রিকা পিপল’স ডেইলি জানিয়েছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি সেবাদানের লক্ষ্যে ১৩০০ শয্যাবিশিষ্ট দ্বিতীয় একটি হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু করা হবে এ সপ্তাহের মধ্যেই। এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
উহান শহর যে প্রদেশে অবস্থিত, সেই হুবেই প্রদেশে বিশেষজ্ঞ সেনা চিকিৎসা দল পাঠানো হয়েছে।
যে কারণে ভাইরাসটির বিস্তার রোধ করা কঠিন
যুক্তরাজ্যের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিস অ্যানালাইসিসের বিজ্ঞানীরা বলছেন ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, যেটি এই ভাইরাসের এত বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারার ‘একমাত্র যৌক্তিক ব্যাখ্যা।’
বিজ্ঞানীদের অনুমান, একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে আড়াইজন মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে। ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ছঢ়িয়ে পড়ার হার ৬০% কমাতে হবে। তবে বিজ্ঞানীদের মতে এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করা সহজ নয়।
ভাইরাস সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আনতে এমন রোগীদেরও আলাদা করতে হবে যাদের মধ্যে সাধারণ সর্দিজ্বরের সামান্য লক্ষণও দেখা গেছে।
অন্যদিকে, ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী এবছরে ১১ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের অনুমান সত্যি হলে এই সংখ্যা সার্স’এ আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে বেশি।
করোনাভাইরাস কী?
করোনাভাইরাস সংক্রমনের লক্ষ্মণ সাধারণ সর্দিজ্বরের মতোই। তবে এই ভাইরাস এর আগে কখনো দেখা যায়নি, তাই এটিকে বলা হচ্ছে ২০১৯-এনকভ, অথবা ‘নভেল করোনাভাইরাস।
পশু থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার পর নতুন ভাইরাস মানুষের মধ্যে সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এর আগে ২০০৩ সালে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম) শুরুতে ছড়িয়ে পড়েছিল বাদুরের মাধ্যমে এবং পড়ে তা বিড়াল জাতীয় প্রাণীর মধ্যে সংক্রমিত হয়, যা সবশেষে মানুষের মধ্যে আসে।
নতুন এই করোনাভাইরাসও শ্বাস-প্রশ্বাসকে সংক্রমিত করে। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।