প্রবাসের সংবাদ

সৌদিতে নির্যাতিতা সুমাকে দেশে ফেরানোর আকুতি পরিবারের

সৌদিতে নির্যাতিতা সুমাকে দেশে ফেরানোর আকুতি পরিবারের

সৌদিতে নির্যাতিতা সুমাকে দেশে ফেরানোর আকুতি পরিবারের

সৌদিতে নির্যাতিতা সুমাকে দেশে ফেরানোর আকুতি পরিবারের ।। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আমতল গ্রামে ৪ মেয়ে ও ২ ছেলেকে নিয়ে কাঠমিস্ত্রি মরম আলী অতি কষ্টে দিনাতিপাত করেন। মেয়েরা বড় হলেও অর্থের অভাবে পারছিলেন না বিয়ে দিতে। তার এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখিয়ে দালাল কবির দুই মেয়ে খাদিজা এবং সুমাকে বিদেশে প্রেরণ করে। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর তাদের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। গোপনে বাথরুমে বসে ইমোতে কল দিয়ে তাদের দুর্দশার কথা জানালে সরকারি উদ্যোগে খাদিজাকে জর্ডান থেকে ফেরত আনলেও সন্ধান নেই সৌদি আরবে থাকা সুমার। দেড়মাস পূর্বে সুমা ইমোতে তাকে উদ্ধারের আর্তি জানালেও এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সুমার পরিবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার আমতল গ্রামের মরম আলী একজন দিনমজুর। কখনও কাঠুরে আবার কখনও কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন গ্রামে গ্রামে। কষ্টের মাঝেই ৬ ছেলে মেয়ে বড় হচ্ছিল। স্ত্রী করফুন নেছা গৃহিনী হিসাবে দেখভাল করতেন। মেয়েরা লেখাপড়ায় ভালো হলেও অভাবের জন্য তেমন আর অগ্রসর হতে পারেনি। তার পরিবারের দুর্দশার সুযোগ নেয় চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের যাত্রাগাঁও গ্রামের দরবেশ আলীর ছেলে কবির মিয়া (৪০)। তার রিক্রুটিং এজেন্সি এ এ ওভারসিস লিমিটেডের মাধ্যমে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সুমাকে সৌদি আরব পাঠায়। কিছুদিন পর খাদিজাকে পাঠায় জর্ডান। মেয়েদেরকে বিদেশে প্রেরণ করতে গরু বিক্রিসহ ধার-দেনা করতে হয় মরম আলীকে। কিন্তু বিদেশে গৃহকর্মীর কাজের কথা বলে প্রেরণ করলেও কোনো কাজ না দিয়ে তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের চেষ্টা চালায় মালিকপক্ষ। পরে গোপনে বাথরুমে বসে ইমোতে ভিডিও কলে পরিবারকে বিষয়টি জানালে মরম আলী ও তার স্ত্রী ছুটে যান দালাল কবির মিয়ার কাছে। কবির মিয়া তাদেরকে হুমকি দিয়ে বলে বিষয়টি কাউকে না জানাতে। আর মেয়েকে দেশে আনতে দাবি করে দেড় লাখ টাকা।

মরম আলী অতিকষ্টে ৫০ হাজার টাকা দালালের হাতে তুলে দিলেও তিনি খাদিজা এবং সুমাকে ফেরত আনার কোনো ব্যবস্থা না করে পাল্টা হুমকি দেয়। পরে নিরুপায় হয়ে মরম আলী যোগাযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে। পরে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে গত শনিবার জর্ডান থেকে বাড়িতে ফেরত আসেন খাদিজা। কিন্তু এখনও সন্ধান নেই সৌদি আরবে থাকা সুমার। যেকোনো মূল্যে সুমাকে ফেরতা চান তার বাবা মা।

সরেজমিন চুনারুঘাট উপজেলার আমতল গ্রামে গেলে জানা যায় মরম আলী পার্শ্ববর্তী নালভাঙ্গা এলাকার রশিদ মুল্লার বাড়িতে কাজ করতে গেছেন। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, দালাল কবির আমার সর্বনাশ করেছে। দুই মাস পূর্বে বাথরুমে বসে ইমোতে ভিডিও প্রেরণ করে সুমা। সেখানে সে বলেছে তার সাথে এমনভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে যা বাবার কাছে বলা সম্ভব নয়। এই কথা বলে তিনি কেঁদে ফেলেন এবং সরকারের কাছে তার মেয়েকে ফেরত আনার দাবি জানান।

পরে বাড়িতে গেলে দেখা হয় সুমার মা করফুন নেছার কাছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, দালাল কবির মিয়া আমার ৪ মেয়ের বয়স বাড়িয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে প্রেরণের কথা বলে লোভ দেখায়। গরু বিক্রি এবং ঋণ করে দালালের কাছে টাকা দেই। এখন সে পাল্টা হুমকি দেয়।

গত শনিবার জর্ডান থেকে দেশে ফেরত আসেন সুমার বোন খাদিজা। তিনি জানান, বিদেশে কাজ করার কথা বললেও দালালের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। একটি টাকাও দেওয়া হয়নি আমাকে। সুমাও পায়নি কোনো কাজ এবং টাকা।

বড় দুই বোনের দুর্দশা দেখে ছোট দুই বোন আয়েশা এবং তাসলিমা আর বিদেশ যেতে চায় না। তারা প্রয়োজনে একবেলা খাবে তারপরও বিদেশ যাবে না বলে জানায়। তারা দালালের কাছ থেকে তাদের পাসপোর্ট উদ্ধার এবং বোন সুমাকে ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।

আয়েশা জানায় তাকে দালাল মেডিক্যাল করানোর কথা বলে দুই বার মেডিক্যাল করিয়েছে এবং তাসলিমাকে চার বার মেডিক্যাল করিয়েছে। দালালের উদ্দেশ্য ভালো নয়। দালালের খপ্পরে পড়ে তাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে দালাল কবির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার নাম্বারে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকায় দালালদের এমন হয়রানি নিয়মিতই হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, ভারতীয় সীমান্ত ও প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র লোকজনকে প্রলুব্দ করতে সেখানে শতাধিক দালাল কাজ করেন। তারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে বিদেশে প্রেরণ করলেও পরে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। আর কথা মতো মেলে না অর্থ।

মিরাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন জানান, তার এলাকায় অনেক দালাল কাজ করে। বিদেশে মেয়েদেরকে গৃহকর্মী হিসাবে প্রেরণ করে বলে জানান তিনি।

এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক জানান, চুনারুঘাটের প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক দালাল কাজ করে। তারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মেয়েদেরকে বিদেশে প্রেরণ করলে প্রায় সময়ই দরিদ্র মেয়েরা প্রতারণার শিকার হয়। আর দালালদের পকেট হয় ভারি। তারা বড় বড় দালান নির্মাণ করেছে এলাকায়।

চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক জানান, এ ধরনের দালালদের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চুনারুঘাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, মরম আলীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে মন্ত্রণালয় এবং দুতাবাসের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে খাদিজাকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। সুমাকেও ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি দালালের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ                                 

কানাডার সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =