প্রবাসের সংবাদ

সৌদিতে পুত্রসহ নোয়াখালীর জেসমিনের অবর্ণনীয় জীবন


অবিশ্বাস্য হলেও সত্য,  সৌদিতে পুত্রসহ নোয়াখালীর জেসমিনের অবর্ণনীয় জীবন কাহিনী।  স্বামীর প্রতারণায় সৌদি কারাগারে দু’বছর ধরে বন্দি নোয়াখালীর মেয়ে জেসমিন আক্তার। বন্দিশালায় তার একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে। ভাগ্যের নির্মমতা, ফুটফুটে শিশুটিও বছর খানেক ধরে মায়ের সঙ্গে বন্দিজীবন কাটাচ্ছে! স্বামীর উপস্থিতি প্রমাণ না করে গর্ভধারণের দায়ে তাকে আটক করে পুলিশ। বন্দিদশায় বহু কাঠখড় পুড়িয়ে স্বামী-সন্তানের বৈধতা প্রমাণ করতে সক্ষম হলেও পাসপোর্ট না থাকাসহ অন্যান্য প্রশাসনিক জটিলতায় এখনও আটকে আছে তাদের ( মা-ছেলের) মুক্তি!

জেসমিন তার সন্তানের স্বীকৃতির জন্য জেলে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন ভার্চুয়ালি। সৌদিতে থাকা ভাসুরসহ স্বামী পক্ষের অনেকের কাছে ধর্না দিয়েছেন সকাল-সন্ধ্যা। একাধিকবার ফেসবুক লাইভে এসেছেন, নেট দুনিয়াকে জানিয়েছে তার কষ্টের কথা। সবশেষ লাইভে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন। অবশ্য এতে টনক নড়েছে সংশ্লিষ্টদের।

জেসমিন তার বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজনের বিস্তারিত প্রকাশ করে নোয়াখালির সংসদ সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ্তুমামা্থ সম্বোধন করে তার মুক্তি ও দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে মন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। সৌদিস্থ প্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, জেসমিনের বন্দিজীবনের কষ্ট কথা জনসমক্ষে প্রথম তুলে আনেন প্রবাসী সাংবাদিক মিনাল মাহমুদ। তার চেষ্টায় জেসমিনের পলাতক স্বামীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ, কাবিননামাসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট উদ্ধার সম্ভব হয়। দূতাবাস কর্মকর্তারা কয়েক দফা সরজমিনে জেলখানাটি পরিদর্শন করেন। সেই চেষ্টার ধারাবাহিকতায় জানুয়ারিতে তার পাসপোর্টের আবেদন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা-কারফিউ এবং সব কিছু লকডাউনে পড়ে যাওয়ায় মুক্তির প্রক্রিয়াটি আটকে গেছে। তবে জেসমিনের লাইভে দেয়া বক্তব্য ভাইরাল হওয়ায় দেশ-বিদেশে সাড়া পড়েছে। তার পাসপোর্টও ঢাকায় তৈরি হয়ে গেছে। ঢাকাস্থ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, নথি ঘেঁটে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, করোনাকালীণ ছুটিতে যে ১০ হাজার পাসপোর্ট সৌদি আরবের জন্য প্রিন্ট হয়েছে সেখানে এই আবেদনটিও নিষ্পত্তি হয়েছে। রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ মানবজমিনকে বলেছেন, তারা আগে থেকেই জেসমিনের মুক্তির চেষ্টা করছিলেন। তার আটক বা মুক্তির পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল তার কাছে কাবিননামা বা বিবাহের কোনো ডকুমেন্ট না থাকা। রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন সবই মিলেছে। কিন্তু করোনার কারণে পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। রাষ্ট্রদূতের দাবি জেসমিন জেলে নয়, একটি ডিপোর্টেশন সেন্টারে রয়েছে। সেখানে এসি, ফ্রিজ, খাওয়া-দাওয়া বাইরের সঙ্গে সমুদয় যোগাযোগ স্বাভাবিক। রাষ্ট্রদূত ডকুমেন্ট প্রদর্শন করে দাবি করেন- জানুয়ারিতেই তার পাসপোর্টের আবেদন করা হয়েছিল। করোনার কারণে পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হয়েছে। তাছাড়া তার সঙ্গে বহুবার দূতাবাস কর্মকর্তাদের দেখা হয়েছে। রিয়াদ থেকে প্রায় ৯০০ মাইল দূরের আল জুব সাকাকার একটি ডিপোর্টেশন সেন্টারে রয়েছেন তিনি। দূতাবাস কর্মকর্তাদের ৯০০ মাইল দূরের সেন্টারে গিয়ে তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করা কতটা সহজ বা কঠিন? সেই প্রশ্ন রেখে রাষ্ট্রদূত বলেন, লাইভে এসে জেসমিন তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি দূতাবাসকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তার অভিযোগের সবটুকু সত্য নয়। রাষ্ট্রদূত জানান, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কনস্যুলার কর্মকর্তা ওই সেন্টারে যাবেন। জেসমিনের পাসপোর্ট এবং সন্তানের ট্রাভেল পাস ইস্যু করে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। রাষ্ট্রদূত নিজে এটি মনিটর করবেন বলেও জানান। তিনি স্বীকার করেন, ভাইরাল হওয়া ফেসবুক লাইভে জেসমিনের কান্না দেখেছে দুনিয়া। এটা তাদেরকে বাড়তি চাপে ফেলেছে।
প্রবাসী সাংবাদিকের লেখনি ও জবানীতে ঘটনার বিস্তারিত

সন্তানসহ জেসমিনের বন্দিজীবন নিয়ে সৌদি প্রবাসী সাংবাদিক মিনাল মাহমুদ লিখেন- নিজের ভাগ্য ফেরাতে এসে এক যুবকের প্রতারণার শিকার হয়ে দু্থবছর ধরে বন্দি জেসমিস। দরিদ্র পরিবারের সন্তান, নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সুদূর প্রবাসে পাড়ি জমায়। সৌদি আরবের আল জুব সাকাকার একটি প্রাইভেট হসপিটালে চাকরির সুবাদে কুমিল্লার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়। সাইফুল ইসলামের মনে যে কু-মতলব ছিল এটি হয়তো জানতো না জেসমিন। ফলে নামেমাত্র বিয়ে করে তারা ঘর-সংসার শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের গর্ভে সন্তান আসে, যা জেসমিনের জন্য বিষন্নতা ডেকে আনে। সাইফুল যখন জানতে পারে জেসমিন গর্ভবতী হয়ে পড়েছে, তখন সে চম্পট দেয়। পালিয়ে দেশে চলে যায়। বিমানবন্দরে পৌঁছে জেসমিনকে ফোন করে সাইফুল জানায় কফিল তাকে জরুরি দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। জেসমিনের স্বামীর উপস্থিতি বা তার উপযুক্ত ডকুমেন্ট প্রদর্শনে ব্যর্থতার কারণে ্তুঅবৈধ গর্ভধারণ্থ এর অভিযোগ এনে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে পুড়ে রাখে। আটকের ৯ মাস পর জেলেই তার সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখে। তার নাম রাখা হয় আব্দুর রহমান। ছেলেটির বয়স আজ এক বছর পেরিয়েছে। এখনও মুক্ত আকাশ দেখতে পাইনি। মিনাল গত সপ্তাহে মানবজমিন প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে বলেন, জেসমিনের নিদারুণ কষ্টের কথা জেনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার মুক্তির জন্য বাংলাদেশ থেকে বিবাহের কাবিননামা, নাগরিকত্ব সনদ, প্রত্যয়নপত্রসহ সব ডকুমেন্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের এটাস্টেশনসহ রিয়াদ দূতাবাসের মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা করার ব্যবস্থা করি। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হই এখানে তার স্বামী ছিল, সে এখন দেশে। মিনাল বলেন, বিয়ের প্রমাণপত্র প্রদর্শনে ব্যর্থ হওয়ায় সৌদি আরবের আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে দূতাবাস কর্মকর্তাদের জেল পর্যন্ত নিয়ে গেছি। পাসপোর্টের আবেদন করেছি সেই জানুয়ারিতে। তার স্বামী সন্তানের বৈধতার প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, জুন মাসেও পাসপোর্টটি এলো না। তাছাড়া এখন তো ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে গেলো। আফসোস, এতো চেষ্টার পরও মা আর দুগ্ধজাত সন্তানটি এখনও জেলে!

উল্লেখ্য, ভিকটিম জেসমিন আক্তার মিনুর বাড়ি নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জে। তার বর্তমান স্বামী সাইফুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া, কান্দুঘর বাজার এলাকায়, মনগঞ্জ গ্রামের মোল্লাবাড়ি। তার পিতার নাম কবির মিয়া। সাইফুল জেসমিনকে সৌদিতে বিপদে ফেলে রেখে দেশে ফিরে আবার বিয়ে করেছে। বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে আছে সাইফুল। সূত্রঃ মানবজমিন থেকে

সি/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন