প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

স্বপ্নের শেষ হাতকড়া-শিকলে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আরও ৩০ বাংলাদেশি

স্বপ্নের শেষ হাতকড়া-শিকলে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আরও ৩০ বাংলাদেশি

উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অপমানজনকভাবে ফেরত আসতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। প্রত্যাবাসনকালে হাতে পরানো হচ্ছে হাতকড়া, শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে শরীর। অবৈধভাবে অবস্থানের অভিযোগে দেশটি থেকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন আরও একদল বাংলাদেশি।

এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হলো আরও ৩০ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে। উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে দেশটিতে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু অবৈধভাবে অবস্থানের অভিযোগে শেষ পর্যন্ত ফেরত আসতে হলো বাংলাদেশে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফেরত আসাদের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ এবং ১ জন নারী রয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত তিন দফায় ১৮৭ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ঢাকার বিমানবন্দরে পৌঁছলেও ফেরত আসা অভিবাসীদের কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও এইচএসআইএর ইমিগ্রেশন বিভাগের সূত্র বলছে, এর আগে চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। ফিরিয়ে আনা ৪২ বাংলাদেশির মধ্যে ১৬ জনের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ পরিচয়পত্র যাচাই নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্রে মামলায় হেরেও সেখানে অবস্থান করছিলেন, আরেকজন আলাদা মামলায় সাজা ভোগ করেছিলেন। সবাইকে অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৬ দিনে একাধিক চার্টার্ড ফ্লাইটে অন্তত আরও ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে ২৭ বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে। তাঁরা বিশেষ ফ্লাইটে এসেছিলেন, আর যাত্রাপথে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। এই দৃশ্য তখন দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এভাবে শিকল পরানোয় মানবাধিকার ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন, যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে আলোচনাও হয়েছিল।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যাবাসনের সময় হাতকড়া ও শিকল ব্যবহার সীমিত করা উচিত। শুধু বিশেষ নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি থাকলেই শুধু হাতকড়া পরানো যেতে পারে।

অপরাধমুক্ত ও অসহিংস অভিবাসীদের হাতকড়া বা শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থী। ফেরত আসা ব্যক্তিদের পুনর্বাসন সহায়তা নিশ্চিত করা, সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা এবং পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, মার্কিন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাঁদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কারণে চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটের ব্যবহার বেড়েছে। বেশির ভাগ অভিবাসী মেক্সিকো বা লাতিন আমেরিকার দেশ হয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। – প্রথম আলো

সংবাদটি শেয়ার করুন