সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, একাধিক বিয়ের খবরে এলাকায় তোলপাড় চলছে। শ্রীরামপুর ইউপির সদস্য ছিল হাবিবুর রহমান হবি। এক সময় তার ছিল প্রতাপ। ছোটবেলা থেকে ছিলেন জেদি। সেই জেদে ৭০ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন ৯টি। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৭৬ সালে। শেষ ৯ নাম্বার বিয়ে করেন ২০১২ সালে। স্ত্রীরাও জানেন না কে কত নাম্বার স্ত্রী। গ্রামবাসীরা জানায়, হবি মেম্বার গ্রামের বিচার করতেন। বিচারে কোন নারী এলে তাকে পছন্দ হলেই বিয়ে করার চেষ্টা চালাতেন। পছন্দ করা মেয়ে বিয়ের জন্য রাজি না হলে তার পিছনে টাকা ব্যয় করেই করতেন বিয়ে। এভাবে ৯টি বিয়ে করে আলোচিত হয়ে উঠেন হবি মেম্বার। গ্রামের সবাই তাকে উপাধি দিয়েছেন বিয়েপাগল হবি মেম্বার।
তিনি জানান, বউদের খারাপ ব্যবহারে ৯টি বিয়ে করি। বউরা ভালো আচরণ করলে এত বিয়ে করতাম না। তিনি জানান, আমি ৯টি বিয়ে করেছি। ৯ জন স্ত্রীকে এক কিলোমিটার দূরে দূরে বাড়ি করে দিয়েছি। যেন এক বউয়ের সঙ্গে অন্য বউয়ের ঝগড়া না হয়। তিনি আরো জানান, ৯ নাম্বার বউকে ৮ বউ মেনে নেয়নি তাই বিরোধ। তারা মনে করছে, আমি ১০ নাম্বার বিয়ে করবো। সে জন্য বের করে দিয়েছে আমাকে। আমি আড়াই মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। কামারের হাট মোস্তাকিন জানান, এলাকার মেয়ে বা বিধবা মহিলা দেখলেই তাকে বিয়ে করার চেষ্টা করে। সুবিধা না পেলে মামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করে বিয়ের। ওই এলাকার তাহের মিয়া জানান, হবি মেম্বার যে বিয়ে পাগল তার জন্য আমরা স্ত্রী-কন্যা নিয়ে ভয়ে থাকি। হবি মেম্বারের ৯ স্ত্রীর মধ্যে একজন তার অত্যাচারে মারা গেছে। ৩ জন স্ত্রী প্রতিবাদ করায় দিয়েছেন তালাক। বাকি ৫ স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন তিনি। ইসলামী শরীয়া মতে, ৪ স্ত্রীর বেশি হওয়ায় তাকে সমাজচ্যুত করেছে গ্রামবাসী।
এলাকার আলেম-ওলামারা তাকে এক বউ না ছাড়লে এলাকায় সমাজে থাকতে দিবে না বলে ফতোয়া জারি করায় বিপাকে পড়েছে হবি মেম্বার। বুড়িমারীর উফামারা নাটারবাড়ী গ্রামের মসজিদের ঈমাম হাসানুর জানান, ইসলামী শরীয়া মতে হবি মেম্বার যেহেতু ৪টির অধিক বিয়ে করেছে সে জন্য তাকে সমাজে বয়কট করা হয়েছে। হবি মেম্বারের ৯ স্ত্রীর মধ্যে রহিমা খাতুন, শেফালী খাতুন, নুর নাহার ও সামসুন্নাহার তারা জানান, ৫ স্ত্রীর মধ্যে একজনকে তালাক দিতে হবে। না হলে সমাজ মানবে না। এখন কোন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে হবি মেম্বার সমাজের বয়কট ভাঙবে তা নিয়ে টেনশনে পড়েছেন তিনি। সমাজপতিরাও অটল তাদের সিদ্ধান্তে। ওদিকে হবি মেম্বারের ১০ম বিয়ের খবরে আন্দোলনে অটল স্ত্রীরা।
স্ত্রীদের আন্দোলনে আড়াই মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। হবি মেম্বারের বড় ছেলে ইউপি সদস্য রফিকুল জানান, আমার বাবার এত বিয়ে করায় আমরা সমাজের চোখে মুখ দেখাতে পারি না। সমাজ আমার বাবার কর্মকাণ্ডে আমাদের পরিবারের সবাইকে বয়কট করেছে। ঈদের নামাজও আমরা পড়তে পারিনি।। হবি মেম্বারের স্ত্রীরা জানান, আমাদের স্বামী ভালো না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিশাদ জানান, হবি মেম্বার কারো কথা শুনেন না। তার মন চাইলে বিয়ে করেন। বিচার ডাকলে মানে না। পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, হবি মেম্বার থানায় নিরাপত্তা চাইলে দেয়া হবে। লালমনিরহাটের বুড়িমারীর নাটারবাড়ী গ্রামের হবি মেম্বারের স্ত্রীদের আন্দোলন গড়িয়েছে প্রশাসনের দ্বারে। স্ত্রীরা এক জোট হয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার নিকট লিখিত দিয়েছে অভিযোগ। লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জানান, বিষয়টি পারিবারিক। তারপরেও থানায় গেলে পাটগ্রাম ওসি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। সূত্রঃ মানবজমিন