হাসিন দোস্তি |||||| প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি
“প্রমিতা দত্ত” – আমার স্কুল জীবনের সবচেয়ে সুখকর অধ্যায়ের সাথে নিবিড়ভাবে সন্নিবেশিত একটি নাম । সে class II তে “The Flowers KG & High School ” এ ভর্তি হয়। তখন সদ্য আমার best friend “সামিয়া ইসলাম তনিমা” স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে স্বপরিবারে বিদেশে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে পারি জমিয়েছে । সে সময় স্কুল কী? তা সবে মাত্র বোঝা আরম্ভ করেছি।
” Class- III তে থাকাকালীন একদিন সহপাঠী রাদীফ আমাকে তার জুতো খুলে দিতে বলার পর যখন দেখলাম, সামিয়া এর তীব্র প্রতিবাদ জানালো, তখন বুঝতে পারলাম বন্ধুত্ব শুধু সহপাঠী হলেই হয় না, হয় পরস্পর আত্মার সাথে আত্মার মিলনের প্রেক্ষিতে । তাই এরকম একজন শুভাকাঙ্ক্ষীকে বিদায় নিতে দেখে মন বেশ দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়েছিল। তখন আমার জীবনে মুশকিল আসান হয়ে এলো এই ” প্রমিতা দত্ত ” স্বভাবে শান্ত -শিষ্ট, কারোর সাথে একবার মিশে গেলে তাকেও সে নিজের পরিবারের একজন সদস্য হিসাবে ভাবতে দ্বিধা বোধ করে না। তার এই গুণটি আমাকে তার প্রতি বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে। এহেন কারণে অনেকটা নিজের মতো মনে হয় তাকে। এ প্রসঙ্গে একটি স্মৃতি মনে নাড়া দিয়ে উঠলো, class 5 এর Half yearly exam এ আমি, প্রমিতা ও আমার কাকাতো ভাই অভিষেক চৌধুরী প্রাঙ্গণের সহপাঠী মীজু আক্তার ঘটনাচক্রে একই বেঞ্চে পড়লাম। বাংলা পরীক্ষার দিন হঠাৎ প্রদীপ চন্দ্র নাহা স্যার আমাদের তিনজনকে দাঁড় করিয়ে বললেন, ” তোমাদের তিনজনের চেহারার মধ্যে অনেকটা সাদৃশ্য রয়েছে। সেটা যে আমার বা প্রমিতার আগে কখনো মনে হয়নি তা নয়, কিন্তু প্রদীপ স্যারের মুখ থেকে কথাটা শোনার পর খানিক নিশ্চত হলাম দুজনে। অবাক ও হলাম। দীর্ঘ সাড়ে বারো বছরের স্কুল জীবনে, প্রমিতার সাথে সাড়ে সাত বছরের বন্ধুত্বে আমাদের কোনোদিন ঝগড়া হয়েছে বলে মনে পড়ে না। তার কোনো সমস্যায় যেমন আমি সর্বদা মুশকিল আসান হবার প্রয়াসে থাকতাম, তেমনি তারও আমার যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা থাকতো সতত। তার সাথে মাঝে মাঝে স্কুল শেষে ফুচকা খেতে যাওয়া, স্কুলের practical exam এ লুকিয়ে guide book দেখে answer লিখা, শিক্ষকের কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে একে অপরকে ইশারায় সাহায্য করা, ক্লাস চলাকালে লুকিয়ে টিফিন খাওয়া, হঠাৎ কোথাও দেখা হলে দুজনের উৎফুল্ল চিত্তে photo shooting করা আরও কতো কী! গত বছর সিলেটে বন্যা সংঘটিত হলে তার ও তার পরিবারের বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ বিতরণের বিষয়টি অতি প্রশংসনীয়। তাতে অবশ্য আমারও কিঞ্চিত আর্থিক যোগান ছিল। তার সমস্ত কথাবার্তা, আচার – ব্যবহার, দোষ করলে বোনের মতো শাসন – আমার জীবনের এক চিলতে অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকবে চিরকাল। ভালো থাকিস। আর নিজেকে যতটূকু সম্ভব এমনটাই রাখার চেষ্টা করিস সারাজীবন। আজ তার জন্মদিনে সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
শুভ জন্মদিন।
১৬/০৭/২০২৩ ইং