ফিচার্ড মত-মতান্তর

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও মিত্রদের প্রতিক্রিয়া

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও মিত্রদের প্রতিক্রিয়া

বেশ কিছুদিন যাবত রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে সেনা ও সমরাস্ত্র মোতায়েন করছিল। ্ররাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে মর্মে ইউক্রেন সরকার বিশ্ববাসীকে অবগত করেছিল। দেখতে দেখতে রাশিয়া অন্ততঃ ১,৫০,০০০ সেনা মোতায়েন করে। তারা বিমান ও নৌ আক্রমণেরও  ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। অবস্থা ঘোরতর রূপ নিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রণ, জার্মাণ প্রেসিডেণত ওলাফ শুলজসহ বহু নেতা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিনের সাথে সামনা সামনি ও ভারচুয়াল বৈঠক করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করেন। একই সাথে ন্যাটো জোট,যুক্তরাষ্ট ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে সম্ভাব্য আক্রমণ মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ করতে থাকেন।

একইসাথে তারা ইউক্রেন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিতে থাকেন। রুশ প্রেসিডেন্ট বরাবরই বলতে থাকেন ইউক্রেনের উপর আক্রমণের তার কোন পরকল্পনাই নাই, ইহা শুধুই পশ্চিমা প্রচারণা। নিজের সকল উক্তি ও প্রতিশ্রুতিকে মিথ্যা প্রমাণ করে গত ২৩ শে মার্চ শেষ রাতে পুতিনের নির্দেশে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। স্থল, জল ও আকাশ পথে পরিচালিত এই আক্রমণ ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ানক, নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক আক্রমণ। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় রাশিয়ানরা ইউক্রেনের প্রতিটি শহরের বড় বড় স্থাপনা ও বিমান বন্দর ধ্বংস করেছে এবং চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রসহ দেশটির বেশীর ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।এ মুহূর্তে রুশ বাহিনী রাজধানী কিয়েবের উপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে। মর্মান্তিক ব্যাপার এই যে প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এহেন সংকটকালে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ায় নি। তারা কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর অবরোধ আরোপ করে দায়িত্ব শেষ করেছে। পশ্চিমা নেতারা কাজের চেয়ে কথা বেশী বলতে পারদর্শী। আরও দুঃখজনক যে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো যুদ্ধক্ষেত্রের আসল চিত্র তুলে  না ধরে নেতাদের লিপ সার্ভিসই প্রচার করছে। আলজাজিরা এবং ভারতীয় ইংলিশ ও হিন্দি মিডিয়ায় ইউক্রেনের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখানো হচ্ছে। যারা রণাঙ্গণের সঠিক চিত্র পেতে চান তারা আল জাজিরা, Zee News, Republic, India Today, Times Now, India News, ABP News ইত্যাদি চ্যানেল টিউন করতে পাড়েন। আগামী ১/২ দিনের মধ্যেই রাজধানী কিয়েভের পতন হবে বলেই মনে হয়।

একবিংশ শতাব্দীতে একটি দেশ শুধুমাত্র গায়ের জোরে অন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতিসংঘের সদস্য দেশকে দখল করে নিচ্ছে বা ধ্বংস করে দিচ্ছে অথচ কোন দেশ বা জাতিসঙ্ঘ কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না, এরচেয়ে মর্মান্তিক ও হতাশাব্যঞ্জক আর কি হতে পারে। গত রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এক ভিডিও বার্তায় বিশ্ব নেতাদের বলেছেন “এরপর হয়তঃ আমাকে আর জীবিত দেখতে পাবেন না”। এই প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদমির জেলেনেস্কির  একটি পরিচিতি দেয়া আবশ্যক। জেলেনেস্কি ব্যক্তি জীবনে একজন অভিনেতা ছিলেন। তাঁর কয়েকটি সিনেমা হিট হবার পর তিনি নিজেই ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর অভিনীত ও নির্মিত প্রথম ও একমাত্র ছবির নাম “সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল”। এই ছবিটি ইউক্রেনে চুড়ান্ত জনপ্রিয়তা লাভ করলে  ২০১৮ সালে তিনি “সার্ভেণ্ট অব দ্য পিপল” নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন। ঐ নির্বাচনে ৭৯% ভোট কাষ্ট হয় এবং তিনি ৭৩% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য যে তাঁর পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট ছিলেন রাশিয়ার সেবাদাস এবং চুড়ান্ত দুর্নীতিবাজ। গণবিদ্রোহের কারণে তিনি মস্কো পালিয়ে গেলে ২০১৯ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জেলেনস্কি ইউক্রেনের এযাবতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রনেতা। তিনি রাশিয়ার দাসত্ব মানতে রাজি না হওয়ায় পুতিন তার উপর ক্ষিপ্ত।,যাই হোক ইউক্রেনের স্বাধীনতা বিপন্ন, প্রেসিডেন্টের জীবন বিপন্ন। এই অবস্থায় সারা বিশ্বের মানুষ ইউক্রেন আক্রণের প্রতিবাদের রাস্তায় নেমেছে খোদ রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে এই আক্রমণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করলে রুশ পুলিশ ইতিমধ্যে ১৭০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে, বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্লক করে দিয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে ভেলেনেস্কি ভারতের প্রধানমন্ত্রিকে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করার অনেরোধ করেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্র মোদী এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আলোচনা করেছেন। আলোচনা ফলাফল জানা যায় নি, তবে আরও যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ক্রমশঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন বলেই মনে হয়। কারণ ইতিপূর্বে একইভাবে আক্রমণ করে তিনি জর্জিয়াকে তিন টুকরো করে নিজের আজ্ঞাবহ বানিয়েছেন। স্বাধীনচেতা দেশপ্রেমিক জেলেনেস্কি রুশ দাসত্ব মানতে রাজি না হওয়ায় বর্তমান পাশবিক রুশ আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ইউক্রেন বা তার প্রেসিডেন্টের ভাগ্যে যাই ঘটুক বিশ্ব ইতিহাসে পুতিন হিটলারের মতই নিন্দিত হতে থাকবেন এবং পশ্চিমা জোটভুক্ত দেশগুলো সারা বিশ্বের কাছে অনির্ভরযোগ্য বলেই চিহ্নিত হবেন।

লেখকঃ -লেখক, প্রাক্তন এডভোকেট এবং সমাজ সচেতন ব্যক্তিত্ব

 


সংবাদটি শেয়ার করুন