দেশের সংবাদ ফিচার্ড

তুলসীর বক্তব্য, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোথায় দাঁড়িয়ে?

মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড

তুলসীর বক্তব্য, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোথায় দাঁড়িয়ে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কী হতে পারে, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। এমন এক পটভূমিতে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংবাদ সূত্র বিবিসি বাংলা।

তুলসী গ্যাবার্ডের দিল্লি সফরে সেখানকার মিডিয়ায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থার উত্থান, সন্ত্রাসবাদের হুমকি, সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে এনেছেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধানের এমন বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে, নাকি এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অংশ- এসব প্রশ্ন সামনে আসছে।

কূটনীতি বিষয়ে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, তুলসি গ্যাবার্ডের বক্তব্যে এসেছে এক ধরনের সতর্কবার্তা যা বাংলাদেশের জন্য নতুন করে শঙ্কা তৈরি করতে পারে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষিক সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের নীতি এখনও স্পষ্ট না হওয়ায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে বলে বলছেন বিশ্লেষকেরা।

তাদের মতে, এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে প্রমাণ করতে হবে তারা গণতন্ত্রের পথে হাঁটছে। দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হলে বাংলাদেশকে অনির্বাচিত সরকারের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ঝুঁকি থাকছে।

তবে দেশে এখন সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের মতই একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে।

অন্যতম প্রধান দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।”

জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ইসলামীপন্থি দলগুলোও একইভাবে দেখছে। ইসলামি চরমপন্থার উত্থানের অভিযোগ নিয়েও আপত্তি রয়েছে এই দলগুলোর।

কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঢাকায় মিছিল হওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজার ভাঙার ঘটনা, নাটকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা করে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।

কতটা গুরুত্ব বহন করে তুলসীর বক্তব্য

মার্কিন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানের পদে আছেন তুলসী গ্যাবার্ড।

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের এই পদ সৃষ্টি করা হয় ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পর। এই পরিচালকের যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সম্পর্কিত গোপন সব নথি পাওয়ার অধিকার আছে। একইসঙ্গে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রধান গোয়েন্দা পরামর্শক হিসেবেও কাজ করবেন।

গত নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে তুলসী গ্যাবার্ডের নাম ঘোষণা করেন। সে সময় এই মনোনয়ন নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছিল।

এমন সমালোচনাও এসেছিল যে, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে রাজনীতিকীকরণ ঘটতে পারে এবং তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

তবে সমালোচনা উপেক্ষা করে তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়োগ দেওয়া হলে ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেছেন তিনি।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রধান গোয়েন্দা পরামর্শক এবং গোয়েন্দা প্রধান যখন বক্তব্য দেন বা উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন, তখন তা গুরুত্ব বহন করে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

তারা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলসী ব্যাগার্ডের বক্তব্যকে যদি গুরুত্ব দেওয়া না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঠিক হবে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তুলসী গ্যাবার্ড

ছবির উৎস,Getty Images ছবির ক্যাপশান,জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান পদে তুলসী গ্যাবার্ডের মনোনয়ন নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছিল

অন্তর্বর্তী সরকার কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে

সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। কারণ তার বক্তব্যে ইসলামী চরমপন্থা, খেলাফতসহ যে বিষয়গুলো এসেছে, সেগুলো সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।

এছাড়া যখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির বিষয় সামনে আসছে, সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ পর্যায়ের কারও এমন বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্বস্তিতেও ফেলেছে।

ফলে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য গুরুত্ব পেয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তুলসী গ্যাবার্ডের করা মন্তব্য “বিভ্রান্তিকর” এবং “বাংলাদেশের সুনাম ও ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।

কারণ “বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে”।

বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে, “গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি” বরং “পুরো জাতিকে মোটা দাগে ও অযৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে”।

সরকারের একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য নিয়ে সরকারের ভেতরে নানা আলোচনা রয়েছে।

তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, গত বছরের পাঁচই অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের পর থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ধর্মীয় সন্ত্রাসের অভিযোগকে সামনে আনছে প্রতিবেশি দেশ ভারত। তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে ভারতের বয়ান বা ব্যাখ্যাই উঠে এসেছে।

সরকারের ভেতরে এই আলোচনাও আছে যে, ভারত সফরে এসে সেখানকার মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড মন্তব্য করেছেন।

ফলে তুলসীর বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কি না, এই সন্দেহের কথাও সরকারের কেউ কেউ বলছেন।


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন