২৫ মিনিটের ‘অপারেশন সিঁদুর’, ৯ সন্ত্রাসী আস্তানায় ২৪ হামলায় নিহত ৭০: ভারত
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার বদলায় ভারত যে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়েছে তা স্থায়ী ছিল মাত্র ২৫ মিনিট; এ সময়ের মধ্যে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৯ সন্ত্রাসী আস্তানায় ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে, যাতে অন্তত ৭০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি ভারতের। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বুধবার প্রথম প্রহরে চালানো এই হামলা স্থায়ী ছিল স্থানীয় সময় রাত ১টা ৫ থেকে দেড়টা পর্যন্ত।
ভারতের বিমান, নৌ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে এ হামলা চালিয়েছে। এনডিটিভি জানায়, বুধবার সকালে নয়া দিল্লিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এবং কর্নেল সোফিয়া কোরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এসব তথ্য দিয়েছেন। তারা বলছেন, এই অভিযান ছিল ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার “পরিমিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ” জবাব। সেদিনের হামলায় এক নেপালি নাগরিকসহ ২৬ জন নিহত হয়েছিল, আহত হয়েছিল অনেকে। ভারত যে কৌশলে পরিবর্তন এনেছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ তারই ইঙ্গিত, বলছেন কর্নেল কোরেশি।
“শেষ তিন দশকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো—যেমন রিক্রুটিং সেন্টার, প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ও লঞ্চ প্যাড—গড়ে তুলেছে ইসলামাবাদ। সেই স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে ভবিষ্যতের হামলা ঠেকাতেই এই অভিযান চালানো হয়েছে,” বলেছেন তিনি। “গোয়েন্দা তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছিল, ভারতের বিরুদ্ধে আরও হামলার পরিকল্পনা আছে। সে কারণে বাধ্য হয়েই—প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা, দুই দিক থেকেই—আজ সকালে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করেছে। আমাদের পদক্ষেপ ছিল পরিমিত, দায়িত্বশীল ও উত্তেজনা না বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া। সন্ত্রাসীদের পরিকাঠামো ধ্বংস করতেই কেন্দ্রীভূত ছিল এই অভিযান,” বলেছেন পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। যেসব স্থাপনায় এ হামলা চালানো হয়েছে সেগুলো হল- মুজাফফরাবাদ, কোটলি, বাহাওয়ালপুর, রাওয়ালকোট, চকসোয়ারি, ভিমবার, নিলম উপত্যকা, ঝিলম ও চকওয়া। এসব এলাকা নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মুহাম্মদ সংশ্লিষ্ট ‘সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য’ হয়ে উঠেছিল বলে অনেকদিন ধরেই ভারতের গোয়েন্দারা সন্দেহ করছিলেন।
যে ৯টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে, এর মধ্যে ৫টিই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত। বাকি চারটি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে, যার মধ্যে আছে বাহাওয়ালপুর, এটিকে জইশ-ই-মুহাম্মদের ঘাঁটি মনে করে নয়া দিল্লি। আর মুজাফফরাবাদ ও ভিমবারকে আগেও ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের ট্রানজিট ও লজিস্টিক কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। নয়া দিল্লি বলছে, বুধবার প্রথম প্রহরে তাদের সব ক্ষেপণাস্ত্রই লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে। ড্রোন নজরদারির মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের কমান্ড সেন্টার, প্রশিক্ষণ শিবির, অস্ত্র ভাণ্ডার ও লঞ্চ প্যাডগুলো যে ধ্বংস হয়েছে তা নিশ্চিত করা গেছে। অভিযানটি বিস্তৃত আকারে হলেও, পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনাকে নিশানা বানানো হয়নি, দাবি তাদের। ৭০ এর অধিক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৬০ জনের বেশি। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়েছে ভূমি ও আকাশ থেকে। বেসামরিক হতাহত ন্যূনতম রাখতে নজরদারি ড্রোনের সাহায্যে ‘রিয়েল-টাইম মনিটরিং’ করা হয়েছে, বলছে ভারত সরকারের একাধিক সূত্র। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে প্রিসিশন-গাইডেড মিউনিশন—যার মধ্যে ছিল লেজার-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র ও স্যাটেলাইট-নির্ভর গ্লাইড বোমা। লক্ষ্য নির্ভুল রাখতে এবং আশপাশে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আকাশ ও স্থল, উভয় প্ল্যাটফর্ম থেকে সমন্বিতভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়; সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো পুরোপুরি সম্পূর্ণভাবে নিস্ক্রিয় করে দিতে একযোগে একাধিক ওয়ারহেড দিয়ে আঘাত হানা হয়, বলছে তারা। –বাংলাদেশ জার্নাল
