“ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান” | আহসানুল কবির ও মোর্শেদা আজিজ
ডবল ডেকার বাসে কেউ চড়েন নাই, কিংবা দেখেন নাই, এমন মানুষ পাওয়া অনেকটা দুষ্কর বিশেষ করে কানাডা কিংবা বাংলাদেশের মানুষের জন্য। কিন্তু ডবল ডেকার মাঁচা! অনেকেই ভাবছেন, এটা আবার কি? আর আমাদের মত সীমিত জমির বাগানিরা ভাবছেন, এটা আবার নতুন কি!
এই বছর সীমিত হয়ে এসেছে আমাদের বাগান শিল্প। বাড়ীর পিছনে এক টুকরো জায়গা। জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্যই এই দোতলা মাঁচার পরিকল্পনা এসেছে। নিচতলার জমির হিসাব করলে তিন তলা বাগান।
অনেকটা ছোটবেলায় মুখস্থ করা “ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান” – পৃথিবীর সপ্তম অত্যাশ্চার্য্য এর নকল সংস্করণ! (বাস্তবে কখনও দেখিনি, ধারণা করে বলছি)।
একদম নীচতলায় অর্থাৎ মাটিতে থাকছে পুঁইশাক, কচুশাক, মুলাশাক, সুইসচার্ড আর লালশাক। কিছু পেঁয়াজ, অ্যাসপ্যারাগাস সঙ্গে কিছু পুদিনা পাতা – বাচ্চাদের যখন তখন বোরহানী আর মেহমান খাওয়ানোর কাবাবের জন্য। ইনশাআল্লাহ্!
পিছনের সাইড ঘেঁষে উঠবে লাউ – শিম – করল্লা। শিম গাছের গোড়া থেকে নাইট্রোজেন তৈরি হয়, এটাও ছোটবেলার বিদ্যা, ছোটবেলার শেখা!
উপরতলায়, অর্থাৎ দোতলায় বাইবে লাউ। তিন ফুট উচুতে এই মাঁচা, যেন খুব সহজেই হাত দিয়ে লাউ এর পরাগায়ন করা যায়; চওড়া প্রায় ৪৫ ইঞ্চি, লম্বা ৯৬ ইঞ্চি। সুর্যের আলো আর তাপের হিসাব করেও এই মাপজোক। একদম উপরতলায় অর্থাৎ তিন তলায় যাবে শিম, ধুন্দুল আর করল্লা। তাদের পরাগায়ন নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করতে হয় না। নিচতলার লাউ পরিবারের কথা ভেবে এই মাঁচার প্রস্থ কমিয়ে রাখা হয়েছে ৩০ ইঞ্চি, যেন তার নিকট প্রতিবেশী পুরো রোদ পেতে পারে।
প্রতিবেশী বলে কথা, কোনরকম হিংসা কিংবা জেলাসী কাউকে সফল করতে পারে না!
পাশাপাশি আরেকটা মাঁচা তৈরি করছি, আলাদা জাতের মিষ্টি লাউ হবে এখানে। সঙ্গে থাকবে চিচিঙ্গা, করল্লা কিংবা ঝিঙা। ইনশাআল্লাহ্!
এক পাশের দিক দিয়ে বেয়ে উঠবে কিছু বরবটি, এদের বেশি জায়গা লাগে না। প্লাস্টিক নেট দিয়ে দিব আকড়ে ধরে রাখার জন্য।
সবার সামনে থাকবে সীমিত সংখ্যক চারাপিটা মরিচ গাছ; একজন বাগানি আপা রেখেছেন আমাদের জন্য, যেহেতু আমার চারাপিটা সব মরে গেছে ।
আশা করছি আমার একতলা, দোতলা, তিনতলার প্রতিবেশীরা মিলে মিশে আমাদের বাগানকে স্বার্থক করে তুলবে ইনশাআল্লাহ্।
আরেক পাশে লম্বা করে, ছোট্ট আর একটা মাঁচা হবে। বিশ লিটারের বালতিতে লাগিয়ে দিব অতিরিক্ত কিছু ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, করল্লা।
স্বপ্ন দেখতে কে না ভালোবাসে। এর মাঝেই কোন একটা মাঁচাকে হয়তো গ্রীন হাউস বানিয়ে ফেলবো সামারের শেষ মুহূর্তে, চারদিকে আর উপরে মোটা স্বচ্ছ পলিথিন জাতীয় কিছু একটা দিয়ে! অভিজ্ঞ গ্রীন হাউসের মালিকেরা তাদের মূল্যবান উপদেশ দিয়ে আমাদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসতে পারেন।
এই বছর বাগানের জন্য চারা তৈরি করেছি : তিন প্রজাতির লাউ – দেশী লম্বা, গোল আর এখানকার সর্ট লাউ, টমেটো, দুই ধরনের যুকিনী, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, করল্লা, সবুজ এবং লাল বরবটি, শিম, মরিচ, রোমানিয়ান বিন, মুলা শাক, কচুশাক। দেশী এবং বিদেশী অনেকেই এসে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন চারা গাছ, নিয়ে যাচ্ছেন বাগান করার জন্য আমাদের থেকে আমাদের সীমিত জ্ঞান।
আমার বর্ণনা শুনে অনেকেই হয়তো ভাবছেন, বিশাল আয়োজন, বিশাল ব্যাপার! খালি চোখে কিন্তু তেমন কিছুই নয়, একেবারেই সাধারণের চেয়েও সাধারণ। আমরা আসলে আলহামদুলিল্লাহ এর উপরেই বেচেঁ আছি।
একজন বাগানির একটা কমেন্টস খুব মনে ধরেছে : আমরা কেউই অভিজ্ঞ নই, আমরা সবাই প্রতি বছর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই বাগান করে যাচ্ছি!
সব বাগানির বাগানের সর্বোচ্চ সফলতার জন্য রইলো প্রার্থণা।
মে ৩০, ২০২১ | কুইন স্ট্রীট/টোরব্রাম রোড, ব্রাম্পটন, অন্টারিও
“ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান” | আহসানুল কবির ও মোর্শেদা আজিজ কানাডার টরন্টোতে সবজিচাষে সম্মাননাপ্রাপ্ত দম্পতি -সম্পাদক
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান