মুরাদনগরে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ফজর আলী নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীকে মারধর ও বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী জানান, বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফজর আলী তাদের বাড়িতে এসে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে এবং তাকে যৌন নির্যাতন করে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে আরও সাত-আটজন ব্যক্তি ঘরে ঢুকে তাকে এবং ফজর আলীকেও মারধর করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভিডিও ধারণ করে এবং তা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
রোববার (৩০ জুন) নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি একাই ছিলাম বাড়িতে। হঠাৎ ফজর দরজায় ডাক দেয়। আমি না খোলায় সে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমার ওপর অত্যাচার করে। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন লোক এসে আমাদের মারধর করে এবং ভিডিও তোলে।”
তিনি আরও জানান, তার সঙ্গে ফজর আলীর কোনো সম্পর্ক ছিল না; শুধুমাত্র পারিবারিকভাবে সুদের টাকা নেয়া-দেয়ার সূত্রেই তার পরিচয় ছিল।
ভিডিও ভাইরালের পর দেশজুড়ে ক্ষোভ: ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী বিবস্ত্র অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছেন, এবং কয়েকজন যুবক তাকে মারধর করছেন। নারীটি কাঁদতে কাঁদতে আকুতি করলেও তারা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, “আমরা বাড়িতে ছিলাম না। অনুষ্ঠান শেষে এসে দেখি মেয়েকে মারছে আর ভিডিও করছে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি, আত্মীয়স্বজন সবাই জেনে গেছে। এখন মুখ দেখানোর উপায় নেই।”
গ্রেপ্তার ও আইনানুগ পদক্ষেপ: পুলিশ জানায়, ঘটনায় ধর্ষণ, নির্যাতন ও ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। একটিতে ফজর আলীকে ধর্ষণের আসামি করা হয়, অন্যটিতে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া ও নির্যাতনের অভিযোগে অনিক, সুমন, রমজান ও বাবু নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফজর আলীকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানান, “ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: এ ঘটনায় ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তিনি সুদের ব্যবসার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন। কেউ কেউ দাবি করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ, আবার কেউ বলছেন—তিনি বিএনপির কর্মী ছিলেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে রোববার কুমিল্লায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, “ফজর আলী বিএনপির কেউ নন, তিনি মূলত আওয়ামী লীগের সহযোগী। তার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।” তারা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান।
উল্টো স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান—যিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তিনি বলেন, “ফজর আলী আমার বডিগার্ড ছিলেন না। কেউ কেউ আমাদের একসঙ্গে তোলা ছবি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” তিনি বিএনপি নেতা এবং সবার পরিচিতি। পনিস্কার, এতে কোনোও বিতর্ক নেই। রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের জন্য ঘটনাটি অন্যভাবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক। দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও দ্রুত বিচার ও যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। –বাংলাদেশ জার্নাল