কানাডার সংবাদ ফিচার্ড

কানাডায় স্বজনহারাদের স্মৃতি আর ছবি দেখেই পালিত হচ্ছে প্রবাসীদের ঈদ 

কানাডায় স্বজনহারাদের স্মৃতি আর ছবি দেখেই পালিত হচ্ছে প্রবাসীদের ঈদ 

লায়লা নুসরাত, কানাডা/ ১৩ মে।  প্রবাসীদের ঈদ আনন্দ আর স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিশ্ব মহামারির করোনা । নানা জটিলতায় ঈদ উৎসব আর প্রিয়জনদের শেষ মুহূর্তেও বাংলাদেশে গিয়ে কাছ থেকে দেখা করতে পারছেন না অনেকেই। গত দুই বছরে অনেক প্রবাসী ধৈর্য ধরতে গিয়ে হারিয়েছেন প্রিয় স্বজনদের। 
স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উৎসব করতে হলে একদিকে বিমানে ওঠার আগে কানাডা সরকারের ৭২ ঘণ্টার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেটের আল্টিমেটাম অন্যদিকে ভ্রমণের পর এবং কানাডায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু’দেশের কোয়ারেন্টাইনের আল্টিমেটামে বিচলিত প্রবাসী বাঙালিরা।
অনেকেই করোনাকালে মুঠোফোন আর ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখছে প্রিয় স্বজনদের সঙ্গে। ব্যথিত হৃদয় চিত্তে ভার্চুয়ালি দেখে নিচ্ছে প্রিয় স্বজনদের কখনো বা ঘরে কখনো বা হাসপাতালের বেডে। আর শঙ্কায় এই বুঝি শেষ দেখা। জীবনের এই চরম বাস্তবতায় দিনযাপন করছে কানাডার প্রবাসী বাঙালিরা। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও দু-একজন যে দেশে যাচ্ছে না তা নয়, কিন্তু সেটার সংখ্যা হাতেগোনা। এরমধ্য আরও যোগ হয়েছে বিমান যোগাযোগ ও তার সীমাবদ্ধতা।
অন্যদিকে কানাডায় প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি নিজেরাও করোনা আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন। তাদের শরীর ও পরবর্তী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও অনেকে আবার স্বদেশে যাচ্ছেন না। সবকিছু মিলে এ এক অন্যরকম প্রবাসী জীবন যা বাঙালিরা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি। স্মৃতির আল্পনা, হারানো প্রিয়জনদের কথা, আর তাদের ছবি দেখেই কাটবে প্রবাসীদের ঈদ।
ঈদের দিন এবছর ও এখানে কর্ম দিবস। মসজিদে নামাজ শেষে পরিবার পরিজন নিয়ে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের বাসায় ঘুরতে যাওয়া আর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সবাই একত্রিত হয়ে নানা গল্প-আড্ডায় মেতে উঠাকে করোনা ম্লান করে দিয়েছে কানাডাজুড়ে প্রবাসী বাঙ্গালীদের। অনেকেরই দেশে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ না করতে পারার আক্ষেপ আর স্বজন হারানোর ব্যাথায় নয়ন ভেসে আসে জলে।

কানাডার আলবার্টা হেলথ সার্ভিসেসের হিউম্যান রিসোর্স কো-অর্ডিনেটর ইসমাত জেরিন বললেন-গত ডিসেম্বরের ২৬ তারিখে বাবাকে হারিয়েছি ।করোনার এই সময়ে নানা জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত দেশে যেতে পারিনি। প্রবাস জীবনের এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যাবে না। হয়তো আগের মতো আমার জীবনে আর ঈদ আসবে না।


কানাডার অ্যাভম্যাক্স এভিয়েশন এর হিউম্যান রিসোর্স কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ রাকিবুল কাইয়ুম জানালেন– গতমাসে বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মূত্য বরন করেছেন, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়া সত্বেও মায়ের কাছে যেতে পারছি না, এর চাইতে কষ্ট প্রবাস জীবনে আর কি হতে পারে?

কানাডার বারাকা এ্যপায়েরল এর স্বত্বাধিকারী আরিফা রব্বানী জানালেন-স্বজন হারানোর বেদনা যে কি তা প্রবাস জীবনে মর্মে মর্মে আমরা উপলব্ধি করছি। আপনজনদের শেষ বিদায়টুকু ও শেষ সময়ে দিতে পারছিনা। আমি এক সপ্তাহের ব্যবধানে বোন ভাগ্নি কে হারিয়েছি, এখন বুঝি প্রবাস জীবন কি? আমরা আর কোন আপনজন হারাতে চাই না।
করোনামুক্ত হয়ে উঠবে বিশ্ব, অচিরেই মিলন ঘটবে আপনজনদের,স্বজন হারানোর বেদনা, আর্তনাদ এবং কান্নায় আর যেন ভারী না হয়ে ওঠে প্রবাস জীবন, পবিত্র এই ঈদের দিনে পরম করুণাময়ের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের।
সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 3 =