কানাডায় ৪৪তম ফেডারেল পার্লামেন্টের নির্বাচন প্রসঙ্গে
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কানাডা ৪৪তম ফেডারেল পার্লামেন্টের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাছে। ফেডারেল নির্বাচনের আর মাএ ৫ দিন বাকী। সারা কানাডাব্যাপীই নির্বাচনী প্রচারণা এখন তুঙ্গে রয়েছে এবং নির্বাচন ঘোষনার পর থেকে আজ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণার ৩২ দিন চলছে। চারটি ফেডারেল রাজনৈতিক দলই অর্থাৎ কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো, কনজারভের্টিভ পার্টি নেতা এরিন ও’টুল, এনডিপি নেতা জাগমিত সিং, গ্রীন পার্টির নেতা এনামিয় পল নিজ নিজ দলের পক্ষে ব্যাপকভাবে কানাডার সর্বএই নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে ক্যুইবেকোয়া পার্টি ব্লক ক্যুইবেকোয়ার নেতা ফ্রানসোয়া ব্লানসেটের নির্বাচনী প্রচারণা ক্যুইবেকের মধ্যে সিমাবদ্ধ রয়েছে। অন্যদিকে এককালীন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার দল People’s Partyর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ৩৩৮ আসন বিশিষট কানাডার পার্লামেন্টের (হাউজ অব কমনস্ের) এ নির্বাচনে কানাডার লোকসংখ্যার অনুপাতে কানাডার ১০টি প্রদেশ ও তিনটি টেরিটরীর মধ্যে কানাডার বৃহওম প্রদেশ অনটারিও প্রদেশে রয়েছে ১২১ টি আসন, ২য় বৃহওম প্রদেশ ক্যুইবেকে রয়েছে ৭৮ টি আসন, বৃটিশ কলম্বিয়ায় রয়েছে ৪২ টি আসন এবং আলবার্টায় রয়েছে ৩৪টি আসন। অতীতে দেখা গেছে ১২১টি আসন বিশিষ্ট অন্টারিও প্রদেশে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় সে দলের কানাডায় সরকার গঠন করার সম্ভাবনা থাকে। এ পর্যন্ত ৪৪তম ফেডারেল পার্লামেন্টের নির্বাচন নিয়ে তিনটি টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠান হয়েছিল যেখানে লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, কনজারভের্টিভ পার্টি নেতা এরিন ও’টুল, এনডিপি নেতা জাগমিত সিং সহ ৫টি রজনৈতিক দলই টেলিভিশন বিতর্কে অংশগ্রহন করে বিতর্কে প্রতিপক্ষকে কাবু করার প্রচেষ্ঠাসহ তাদের নির্বাচনী এজেনডাগুলো ইলোকট্রনিক মিডিয়া মারফত জনসমক্ষে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্ঠা করেছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল সরকার একটি শক্তিশালী সরকার ও সংখ্যাগরিষ্ঠা পেয়ে সরকার গঠনের প্রত্যাশায় ২০২৩ সালের পরিবর্তে ২ বছর পূর্বেই বৈশ্বিক মহামারীর করোনাভাইরাসের চতুর্থ ওয়েব এর সংকটময় মুহূর্তে, আফগান সংকট ও কানাডায় অর্থনৈতিক সংকটময় মুহুর্তে আগাম নির্বাচনের যে ঘোষনা দিয়েছেন যে সিদ্ধান্তকে প্রতিটি ফেডারেল নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী বিরোধী দলই তীব্র ভাযায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচনা করেই চলেছেন। এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো মনে করেছিলেন বৈশ্বিক মহামারীর করোনাভাইরাসের পেন্ডামিক এর এমন দু:সময়ে যেভাবে কানাডার জনগণের জন্য জাস্টিন ট্রুডোর সরকার সহায়তার হস্ত প্রসারিত করেছেন, অগ্রীম নির্বাচন দিলে জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করতে পারবেন এবং সংসদে তাদের নীতি-কর্মসূচী বাস্তবায়নে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই দরকার। কিন্তু এ ধরণের জয়লাভের Strategy ক্ষমতাসীন দলকে জনমত জরীপে এগিয়ে যেতে সহযোগীতা ত করেনি বরং হিতে বিপরীত হয়েছে। তবে এটি ধ্রুব সত্য যে, বৈশ্বিক মহামারীর করোনাভাইরাসের Pandemicএর দু:সময়ে কানাডার জনগণের জন্য জাস্টিন ট্রুডোর সরকার সর্বাত্বক ও আন্তরিকভাবে সহায়তার হস্ত প্রসারিত করেছেন ও সহায়তা করেছেন। Eric Grenier কর্তৃক CBC News এর আজকের ১৫ সেপ্টেম্বরের জনমত জরীপে দেখা যাচ্ছে: লিবারেল পার্টির সমর্থন —৩১.৬%; কনজারভের্টিভ পার্টির সমর্থন— ৩১.৩%; এনডিপি—-১৯.৮%; ব্লক ক্যুইবেকোয়া—–৬.৬%; পিপলস পার্ট—– ৬.১%; এবং গ্রীন পার্টি—-৩.৫%। জনমত জরীপ দেখে মনে হচ্ছে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর তারিখের নির্বাচনের ফলাফলও হতে পারে জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল পার্টি কর্তৃক সংখ্যালঘু সরকার অথবা কনজারভের্টিভ পার্টি নেতা এরিন ও’টুল কর্তৃক সংখ্যালঘু সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে্ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বা এজেন্ডা এখানে দেওয়া হল। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ২০৩০ সালের মধ্যে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডোর সরকার গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ২০০৫ তুলনায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা বলেছেন। এছাড়াও লিবারেল সরকার ইলেক্ট্রিক ভেহিকলের বাধ্যবাধকতার বিষয়েও প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ কানাডায় বিক্রিত ব্যক্তিগত বাড়ির অর্ধেক হতে হবে কার্বন নিঃসরণমুক্ত। ২০৩৫ সাল মোট গাড়ির শতভাগই কার্বন নিঃসরণমুক্ত করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এদিকে তেল-গ্যাস উৎপাদকদের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের ট্রুডোর অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য ২০৫০ সাল নাগাদ এ নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। একই সঙ্গে আলবার্টা, সাস্কেচুয়ান, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরের তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল কমিউনিটির মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ২০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের কথাও বলেছেন জাষ্টিন ট্রুডো।
তবে কনজার্ভেটিভ নেতা এরিন ও’টুল ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমানোর কথা জানিয়েছেন । কনজার্ভেটিভ নেতা এরিন ও’টুল ক্ষমতায় আসলে নির্ধারিত সময়ে কানাডায় ১ মিলিয়ন কর্মসংস্হান সৃস্টি করবেন বলে ঘোষনা করেছেন। কানাডার অরথনীতিকে আরও গতিশীল ও চাঙ্গা করে করার প্রতিশ্রুতি সহ আগামী ১০ বছরের মধ্যেই কানাডায় Balanced Budget এর প্রতিশ্রূতি দিয়েছেন কনজারভের্টিভ পার্টি নেতা এরিন ও’টুল। মেডিকেয়ার বা স্বাস্হ্যখাত তরান্বিত করতে কনজার্ভেটিভ নেতা এরিন ও’টুল প্রদেলগুলোকে ৬০ বিলিয়ল ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
অন্যদিকে এনডিপি নেতা জাগমিত সিং জলবায়ু ইস্যুতে লিবারেলদের সাম্প্রতিক ঘোষণাকে ফাঁকা প্রতিশ্রুতি বলে চিত্রায়িত করেছেন। তিনি বলেন, জি৭ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে কানাডা। কাজ না করলে জলবায়ু ইস্যুতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কোনো অর্থ নেই। এনডিপি নেতা জাগমিত সিং ফ্রি ফার্মাকেয়ার, ফ্রি ডেন্টেল কেয়ার, আই কেয়ার চালুসহ বয়স্কদের জন্য বর্তমানে চালু Profit care Home এর পরিবর্তে সরকার কর্তৃক universal old age care Home চালুর প্রতিশ্রুতি দেন।
গত ৪ দিনের Advance ভোট প্রদানের দিনগুলোতে ৫.৮ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ৫৮ লক্ষ ভোটার ভোট দিয়েছে। এক মিলিয়ন বা দশ লক্ষ মানুষ Mail বা ডাক মারফত ভোট দিতে পারে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো, কনজারভের্টিভ পার্টি নেতা এরিন ও’টুল এর মধ্যে প্রায় প্রতিটি জনমত জরীপে দেখা যাচ্ছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। সব জনমত জরীপের অবসান হবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার নির্বাচনের শেষে তখন আমরা বুঝতে পারবো কে হবেন কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী লিবারেল পার্টির নেতা জাস্টিন ট্রুডো নাকি কনজারভের্টিভ পার্টি নেতা এরিন ও’টুল।
বিদ্যুৎ ভৌমিক, লেখক,কলামিষ্ট ও সিবিএনএ’র উপদেষ্টা
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান