যুক্তরাষ্ট্রে এবার দুই বুড়ো’র নির্বাচন? ।।। শিতাংশু গুহ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪’র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্ভবত: দুই বুড়ো’র নির্বাচন? বাইডেনের জন্ম ২০নভেম্বর ১৯৪২ এবং ট্রাম্প ১৪ই জুন ১৯৪৬। নভেম্বরে নির্বাচনকালে বাইডেন হবেন ৮২, ট্রাম্প ৭৮। মার্কিন জনগণ চায়না বাইডেন-ট্রাম্প প্রতিদ্ধন্ধিতা, কিন্তু হচ্ছেটা তাই? বাইডেনকে নিয়ে ডেমোক্রেটরা অস্বস্থিতিতে, ট্রাম্পের নাম আদৌ ব্যালটে থাকবে কিনা তা অনিশ্চিত, অথচ ভোটার তাকেই চাচ্ছে। হয়তো এ সংশয়ের কারণেই নিকি হেলি এখনো রেসে থাকছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, নিকি হেলি কতদিন রেসে টিকতে পারবেন! ট্রাম্প যদি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হ’ন তাহলে কিহবে?
নেভাদা ককাস পরবর্তী প্রাইমারি, নিকি’র নিজস্ব ষ্টেট সাউথ ক্যারোলিনা, শনিবার ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪। ডেলিগেট সংখ্যা ৫০। নিকি হেলি’র জন্যে অগ্নিপরীক্ষা। হেলিকে জিততে হবে, কিন্তু গভর্নর তাঁর বিপক্ষে, সাউথ ক্যারোলিনা অনেকটা রক্ষণশীল, অন্তত: নিউ-হ্যাম্পশায়ার থেকে রক্ষণশীল। আরো প্রশ্ন, নিকি কি পারবেন ট্রাম্পের আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে? হেলি বলছেন, বাইডেনকে তিনি হারাতে সক্ষম, রিপাবলিকানরা তা শুনছেন না, কারণ ট্রাম্পও বাইডেনকে হারাতে সক্ষম। জরিপ বলছে, ট্রাম্প অথবা নিকি দু’জনই বাইডেনকে হারাতে সক্ষম।
নিকি’র যুক্তি: নিকি হেলি সর্বত্র জোরালোভাবে বলেছেন যে, গত ৮টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্যে ৭টি-তেই রিপাবলিকানরা পপুলার ভোটে হেরেছে, এবং এটি কোন গর্বের বিষয় নয়। গত ডিসেম্বরে (২০২৩) ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নাল জরিপে বলা হয়, নিকি ও বাইডেন সরাসরি প্রতিদ্ধন্ধিতা হলে নিকি ১৭ পয়েন্টে প্রেসিডেন্টকে হারাতে সক্ষম। নিকি হেলি রিপাবলিকান ভোটারদের বোঝাতে চাচ্ছেন যে, ২০২০তে ডেমোক্রেটরা যেনতেন উপায়ে ট্রাম্পকে হারাতে সচেষ্ট ছিলো, তাই তাঁরা বাইডেনকে প্রার্থী করেন। ২০২৪-শে রিপাবলিকানরা মরিয়া হয়ে বাইডেনকে হারাতে চান, নিকি’র পক্ষে সেটি সম্ভব, তাই তিনিই হওয়া উচিত রিপাবলিকান প্রার্থী। এরপরও নিকি আইওয়া, নিউ-হ্যাম্পশায়ারে হেরেছেন, আইওয়াতে ট্রাম্পের সাথে ব্যবধান ৩০%’র ওপরে এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে ১১%, নিজ রাজ্য সাউথ ক্যারোলিনায় তিনি হারবেন বলে মিডিয়া জানাচ্ছে। রিপাবলিকানরা নিকি’র যুক্তি এ কারণে মানছেন না যে, জরিপ দেখাচ্ছে, ট্রাম্পও এবার বাইডেনকে হারাতে সক্ষম।
এ মুহূর্তে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দল মোটামুটি স্বীকার করছে যে, ট্রাম্প জিওপি প্রার্থী হচ্ছেন, এবং বাইডেন তো আছেনই। বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিসও আছেন। ট্রাম্পের ভিপি কে হচ্ছেন? ওয়াসিংটন পোষ্টের লেখক এরোন ব্লেক একটি তালিকা বানিয়েছেন। তালিকায় স্থান পেয়েছেন, নিউইয়র্ক কংগ্রেসওমেন এলিজা স্টিফেনিক, সাউথ ক্যারোলিনার সিনেটর টিম স্কট, আর্কানসাসের গভর্নর সারাহ হাক্কাবি স্যান্ডার্স, ফ্লোরিডার গভর্নর রণ ডিস্যান্টিস, সাউথ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর নিকি হেলি, সাউথ ডাকোটার গভর্নর ক্রিস্টি নোয়াম, ওহাইও’র সিনেটর জে.ডি.ভ্যান্স, ২০২২-এ আরিজোনার গভর্নর রেসে পরাজিত প্রার্থী, টিভি এঙ্কর কারী লেক এবং ব্যবসায়ী বিবেক রামস্বামী।
এ সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ট্রাম্প কি আদৌ নির্বাচন করতে পারবেন? তার নাম কি ব্যালটে থাকবে? এরচেয়েও ভয়ংকর প্রশ্ন, ৬ই জানুয়ারি ২০২০ ক্যাপিটল হীল রায়টে তাঁকে কি বিদ্রোহী বা নৈরাজ্যসৃষ্টিকারী বলা যাবে? ইউএস সুপ্রিমকোর্ট ফেব্রুয়ারিতে এনিয়ে যুক্তিতর্ক শুনবেন এবং রায় দেবেন। কলোরাডো সুপ্রিমকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছে যে, সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী ট্রাম্প বিদ্রোহী, এবং প্রার্থী হতে পারবেন না, অর্থাৎ ব্যালটে তার নাম থাকবে না? অপর ষ্টেট মেইন-এ ট্রাম্পের ভাগ্য ঝুলন্ত। ইউএস সুপ্রিমকোর্ট যদি ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করে তবে নিকি’র ভাগ্য খুলে যাবে। সুপ্রিমকোর্ট কলোরাডোর মামলার রায় বাতিল করে দিলে ট্রাম্পের ভাগ্য খুলবে। সুপ্রিমকোর্ট দায়িত্ব না নিয়ে বিভিন্ন স্টেস্টের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলেও ট্রাম্পের জন্যে অসুবিধা, কারণ ডেমোক্রেট রাজ্যগুলো তখন তাঁকে ব্যালটের বাইরে রাখতে মামলা করবে।
রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি বৃহস্পতিবার (২৪জানুয়ারি) প্রাইমারি চলা অবস্থায়ই ট্রাম্পকে ‘আপাত দলীয় প্রার্থী’ ঘোষণার একটি খসড়া প্রস্তাব আনতে চাইলে ট্রাম্প তাতে বাঁধ সাধেন, এবং বলেন, দলীয় ঐক্যের স্বার্থে তিনি প্রথাগতভাবে ভোটে জিতে আসতে চান। এরপর প্রস্তাবটি আর উত্থাপিত হয়নি। ইউনাটেড অটো ওয়ার্কার্স প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছে। ট্রাম্পের সাবেক দুই উপদেষ্টা পিটার নাভারো ও ষ্টিফেন কে.ব্যানন-কে কংগ্রেস অবমাননার দায়ে ৪মাসের কারাদন্ড দিয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা নাভারো এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টা ব্যানন ৬ই জানুয়ারির বিদ্রোহ নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কংগ্রেসে সাক্ষী দিতে অপরাগতা জানিয়েছিলেন। সদ্য বাইডেন পুত্র হান্টার বাইডেন কংগ্রেসে সাক্ষী দিতে অস্বীকৃতি জানান, দেখা যাক তার ভাগ্যে কি ঘটে?
ট্রাম্প শনিবার (২৭জানুয়ারি) লাস-ভেগাসে (নেভাদা) বলেছেন, বাইডেনের ‘বর্ডার সিকিউরিটি বিল’ একটি ভয়ঙ্কর বাজে বিল, এটি অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট আগমন ঠেকানোর জন্যে নয়, বরং উল্টো। তিনি জানান, হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, কংগ্রেসে আসার সাথে সাথে এটি মারা পড়বে। ট্রাম্প টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ এবোট-কে সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমি ইমিগ্র্যান্ট স্রোত ঠেকাতে গভর্নরকে সহায়তা দেবো। অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট ঠেকাতে টেক্সাস বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, বাইডেন প্রশাসন সেটি রোধে মামলা করে জিতেছে, কিন্তু টেক্সাস গভর্নর ছাড়বার পাত্র নন, সংগ্রাম চলছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ট্রাম্প টেক্সাসকে সমর্থন জানালেন।
CBNA24 রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।