ফিচার্ড লেখালেখি

১লা মে  মহান মে দিবস ।।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

ছবি সংগৃহিত

১লা মে  মহান মে দিবস ।।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

১লা মে মহান মে দিবস হল বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের সংহতি প্রকাশের একটি গৌরবউজ্জ্বল দিন। এ বিশেষ দিনটি  শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের একটি উৎকর্ষ ও অনুপ্রেরণার দিন । ১লা মে মহান মে দিবসকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি  দিবস হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়। শ্রমিকদের শ্রমে,ঘামে ও ত্যাগের  ওপর ভিত্তি করে গগণচুম্বী অট্টালিকা সহ মানব সভ্যতা গড়ে উঠলেও শ্রমিকরা বরাবরই ছিল উপেক্ষিত ও বঞ্চিত।  এখন অনেক দেশে শ্রমিকরা বা শ্রমজীবি মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ও  বেঁচে থাকার জন্য ন্যায্য মজুরী থেকেও বঞ্চিত  হয়ে দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।

১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট শুরু করেছিল। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মালিকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই মিছিল-সমাবেশ করেছিল। দৈনিক ১৫-১৮ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রম করার পরও শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হতো। শ্রমজীবি মানুষের আন্দোলনে মালিকপক্ষ  আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে শ্রমিকের ওপর তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর সমর্থনে পুলিশ লেলিয়ে দেয়। শিকাগো শহরের ওই শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক নিহত এবং বহু আহত হয়। আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে পুলিশের গুলিবর্ষণে  নিহত শহীদদের মহান আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে পালিত হয় ১লা মে মহান মে দিবস । শ্রমিক আন্দোলনের ওই অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে । ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডস্এর আর্মস্টাডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি  প্রস্তাবে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবী আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের জন্য সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি উদার্থ আহবান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে  বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে’র ১ তারিখে “বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার” সিদ্ধান্ত সর্বসন্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। ভারত,বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া সহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের ৮০টিরও বেশি দেশে ১লা মে মহান মে দিবসে  সাধারণ ছুটি ও  শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় শ্রম দিবসটি শ্রমিকদের সম্মান জানিয়ে এবং সমাজে তাদের অবদানকে স্বীকার করে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার উদযাপিত হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে মহান মে দিবস পালন করে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উদ্যাপিত হয় মহান মে দিবস। শ্রমিকরা দিন-রাত অক্লান্ত শ্রম দিয়েও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে না । বৈষম্য হ্রাস করে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার রক্ষার বিষয়ে সরকারসহ সব সামাজিক শক্তিকে শান্তি ও স্হিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থেই অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে ।  বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ (জুলাই-সেপ্টেম্বর)-এর তথ্যানুসারে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি সাত কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ চার কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার আর মহিলা দুই কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার। শ্রম নীতিমালা অনুসরণে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবী মানুষের জন্য পর্যায়ক্রমে নিম্নতম মজুরি নিশ্চিত করা উচিত হবে।

বর্তমান বিশ্বাায়ন, শিল্পের অটোমেশন ও তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের  প্রেক্ষাপটে মহান মে দিবসের প্রাসঙ্গিকতাকে ভাবতে হবে নতুন করে । এমতাবস্থায় দেশে দেশ সরকার সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান /শিল্পমালিকদেরই তাঁদের শিল্পকারখানা রক্ষার স্বার্থেই শ্রমিকদের অধিকার ও তাঁদের সুরক্ষায় উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে এবং সরকারকেও দেশ,  কর্মসংস্থান ও শিল্প উন্নয়নের বৃহওর স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে ।  ১লা মে মহান মে দিবসে আপনাদের সকলের প্রতি রইলো  শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

বিদ্যুৎ ভৌমিক-সাবেক অধ্যাপক,  লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা।

মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা । ৩০মে ২০২৪

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন