দেশের সংবাদ ফিচার্ড

লাশ নেই, মৃত্যু সনদও নেই, অপেক্ষা করতে হবে ৭ বছর

আনারের খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে পুলিশ

এমপি আনার হত্যা, হাজার কোটি টাকার সোনা হীরা গায়েব নিয়ে বিরোধ!
লাশ নেই, মৃত্যু সনদও নেই, অপেক্ষা করতে হবে ৭ বছর

চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশ এখনও উদ্ধার করা যায়নি। কয়েকদিন ধরে ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের লাগাতার সন্ধানেও খোজ মেলেনি লাশের একটি টুকরারও।

এমন পরিস্থিতিতে এমপি আনারের মৃত দেহ যদি না পাওয়া যায় তাহলে মৃত্যু সনদ কবে মিলবে এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে চার দিকে। আর মৃত দেহ না পাওয়া গেলে ঝিনাইদহ-৪ আসনের উপ-নির্বাচনই বা অনুষ্ঠিত হবে কিভাবে?

রোববার (২৬ মে) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নর্থ ইস্ট নিউজের ‘No body, No Death Certificate’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে এইসব বিষয় তুলে ধরা হয়।

নর্থ ইস্ট নিউজের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতায় ‘খুন হওয়া’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে গত ১৩ থেকে ১৫ মে’র মধ্যে হত্যা করা হয় এবং তার লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়া হয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই লাশ হয়তো আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মৃত দেহ পাওয়া না গেলে এমপি আনারের কোন ধরনের ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ জারি করা যাবে না। আর তেমনটি হলে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচন অন্তত সাত বছরের জন্য অসম্ভব হয়ে যাবে।

নর্থইস্ট নিউজ বলছে, এমপি আনারের লাশ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া না গেলে ময়নাতদন্ত করা যাবে না, যার অর্থ হলো, তার আত্মীয়দের কাছেও মৃত্যু সনদ হস্তান্তর করা যাবে না। উপরন্তু, ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ জারি করার আগে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিকে কমপক্ষে সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে।

নর্থ ইস্ট নিউজের সাথে কথা বলার সময় কলকাতার প্রবীণ অ্যাডভোকেট নবকুমার ঘোষ বলেছেন, ‘মৃত কোনও ব্যক্তির লাশ পাওয়া না গেলে মৃত্যু সনদ জারি করতে সাত বছর সময় লাগতে পারে। এটাই প্রতিষ্ঠিত আইন। সাত বছরের অপেক্ষা বাধ্যতামূলক। লাশ নেই, মৃত্যু সনদও নেই।’

প্রবীণ এই আইনজীবি আরও বলেন, ‘সাত বছর পার হওয়ার পর সিআইডির কাছে খোলা একমাত্র যে পথটি থাকবে তা হলো, ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ ধারার অধীনে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা।’

অ্যাডভোকেট নবকুমার ঘোষ বলছেন, এরপর উচ্চ আদালত প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। সেই তদন্ত শেষ হলে, উচ্চ আদালত আদেশ জারি করতে পারেন যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু সনদের সমতুল্য হবে।

প্রবীণ এই আইনজীবী আরও বলেন, এই পদক্ষেপটির পর ভারতের জাতীয় সংবাদপত্র এবং দূরদর্শন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সেখানে ঘোষণা করা হবে, আনারকে আর কখনোই পাওয়া যাবে না।

নর্থ ইস্ট নিউজের দাবি, তাদের প্রতিবেদনটিতে সিআইডি-বাংলাদেশ ডিবির মামলায় অনেক ত্রুটি এবং অসঙ্গতি প্রকাশ করা হয়েছে। হত্যাকারীদের বর্ণনায় বেশ কিছু ফাঁক রয়েছে এবং স্পষ্ট এসব ফাঁক থেকে উদ্ভূত প্রশ্নের উত্তর পেতে উভয় দেশের তদন্তকারীদের যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনার। ১৩ মে বন্ধু গোপালের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি এসএমএসে বলছিলেন দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে ফোন না দিতে বলেন।

পরে ১৮ মে ভারতে নিখোঁজের জিডি করা হয়। ২২ মে ভারতের কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে জানায় কলকাতার সিআইডি। –ইত্তেফাক
এমপি আনার হত্যা, হাজার কোটি টাকার সোনা হীরা গায়েব নিয়ে বিরোধ!

দুই বাংলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে। কলকাতার বিভিন্ন স্থানে মরদেহ উদ্ধার করতে একের পর এক তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

 ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলা তদন্ত করতে গতকাল রবিবার সকালে  কলকাতায় গেছেন। এরই মাঝে তারা কলকাতার সিআইডির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

আনারের বিরুদ্ধে চোরাচালানের অর্থ গায়েব করার অভিযোগ ওঠায় বিষয়গুলো নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ২০১৬ সালে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা মূল্যের সোনা ও হীরার একটি চালান গায়েব করা নিয়ে দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে আনারের বিরোধকে তদন্তে প্রাধ্যন্য দেওয়া হচ্ছে। ওই বিরোধের জের ধরে আখতারুজ্জামান শাহীনকে দিয়ে মূল পরিকল্পনাকারীরা সুযোগ নিয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থাগুলো ধারণা করছে। বাংলাদেশের পুলিশের পাশাপাশি কলকাতার সিআইডিও চোরাচালানের বিষয়গুলোও আমলে নিয়ে তদন্ত করছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, এমপি আনারের কলকাতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের রহস্যজনক আচরণ তদন্তকারী সংস্থা খতিয়ে দেখছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কলকাতা সিআইডি ইতিমধ্যে গোপাল বিশ্বাসকে তলব করেছে।

তবে তিনি কোথায় আছেন কেউ বলতে পারছেন না। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ডিবির কর্মকর্তারাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। হত্যাকান্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচিত শাহীনকে আইনের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ। জানা গেছে, গতকাল এ নিয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

বিশ্লেষণ করা হচ্ছে শাহীনের সিডিআর
পুলিশ সূত্র জানায়, আনার হত্যাকান্ডে আরও কারা জড়িত সেটা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। তারা   ঢাকা ও কলকাতায় শাহীনের দুই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের তালিকা তৈরি করছে। বিশ্লেষণ করা হচ্ছে শাহীনের ফোন কলের বিস্তারিত রেকর্ড (সিডিআর)। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহীনের বাংলাদেশি ও একাধিক বিদেশি নম্বর রয়েছে। তিনি এসব নম্বর থেকে হত্যাকান্ড বাস্তবায়নকারী শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাঈদ, শিলাস্তি রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শাহীন ও শিমুলের বাংলাদেশি নম্বরের সিডিআর সংগ্রহ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সিডিআর বিশ্লেষণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ আসনের এমপি আনার খুনের সঙ্গে শাহীনের জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। দেশে গ্রেপ্তার হয়েছে তিন অভিযুক্ত। তারা খুনের কথা স্বীকার করে লাশ গুমের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি খন্ডিত মরদেহের একটি টুকরোও। যদি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব না হয় তাহলে বিচারে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি প্রধান অভিযুক্ত পলাতক শাহীনকে ধরতে না পারলে খুনের পেছনে আর কারা কারা জড়িত সেটাও অন্ধকারে থেকে যাবে। কারণ, খুনিরাও জানে না শাহীনের পেছনে অন্য কেউ জড়িত আছেন কি না।

বিষয়টি স্বীকার করে গোয়েন্দারা বলছেন, তারা এখনো এ খুনের কারণ ও এর পেছনে আসলে কারা রয়েছে সে বিষয়ে পরিষ্কার নন।

হাজার কোটি টাকার সোনা ও হীরা গায়েব
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে অনেকের নামই পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমে এসেছে যশোরের এক প্রভাবশালীর নাম। শোনা যাচ্ছে দুজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর নাম। তারাও ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। তারা একসময় এমপি আনারের সঙ্গে চোরাচালানের লেনদেন করেছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে এমপি আনারের চোরাকারবারের অংশীদার ছিলেন তারা। ২০১৬ সালে সব ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দুপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, এক ব্যবসায়ীর প্রায় ১ হাজার ২০ কোটি টাকার সোনা ও হীরার চালান গায়েব করে দিয়েছিলেন আনার। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন ওই ব্যবসায়ী।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি জেলা জুড়ে রয়েছে বিশাল সীমান্ত এলাকা। জেলাগুলো হচ্ছে যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ। এসব এলাকা দিয়ে সব ধরনের চোরাকারবার হয়ে থাকে। ঝিনাইদহ জেলার চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণ করতেন এমপি আনার। এ ছাড়া যশোরের সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন এক প্রভাবশালী। চুয়াডাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করতেন আরেক ব্যবসায়ী ও আনার। মূলত সীমান্ত এলাকায় ঘিরে গড়ে ওঠে সোনা ও অস্ত্র চোরাচালান এবং হন্ডি কারবারের বিশাল এক সাম্রাজ্য। এ সাম্রাজ্যের অংশ ছিলেন  ঢাকার মাফিয়ারাও। মূলত  ঢাকার মাফিয়াদের মালামালই ওই সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হতো। গত ঈদুল ফিতরের আগে চোরাচালান সিন্ডিকেটের প্রায় ১০০ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে আসে আনারের কাছে, যা তিনি আত্মসাৎ করেন। এতে আন্তঃদেশীয় চোরাচালান চক্রের সঙ্গে বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছে। তাছাড়া এমপি আনার অভিযুক্ত শাহীনের ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ। প্রতিটি বিষয়ে তারা ছায়া তদন্ত করছেন।

বাগজোলা খালে মরদেহের অংশ পাওয়া কঠিন
তদন্তে নেমেই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা কসাই জিহাদ হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদে আনার হত্যাকান্ড ও মরদেহ টুকরো টুকরো করে গুমের তথ্য পেয়েছে কলকাতা সিআইডি। জিহাদ সিআইডিকে বলেছেন, আনারকে হত্যার পর হাড় ও মাংস আলাদা করে টুকরো টুকরো কেটে ব্যাগে ভরা হয়। তারপর সেগুলো ট্রলিব্যাগে করে ফ্ল্যাট থেকে বের করা হয় এবং কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি ও জিরানগাছার বাগজোলা খালে ফেলে দেওয়া হয়।

কলকাতা পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কলকাতার পার্শ্ববর্তী শহরাঞ্চল বরাহনগর বিধানসভা এলাকার ডানলপের কাছ থেকে শুরু হয়ে কুলটির ঘুসি ঘাটার কাছে গিয়ে বিদ্যাধরী নদীতে মিশেছে এই বাগজোলা খাল। কোথাও এ খালের দুধারে গড়ে উঠেছে বসতি। আবার কোথাও দুপাশেই ঘন জঙ্গল। পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়া প্রায় ৪০ কিলোমিটার এ খালের দুটি অংশ রয়েছে। এর সঙ্গে আরও সাত-আটটি খাল এসে মিশেছে। ওইসব শাখা খাল দিয়ে কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সব পানি বাগজোলা খালে এসে পড়ে। এ খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। দুপাশে থাকা জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর বসবাস।

পুলিশ কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছে, আনারের দেহাংশ এ খালে ফেলা হলে তা খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ এ অঞ্চলে প্রচুর শিয়াল ও বনবিড়াল রয়েছে। আর যদি পানিতে ফেলা হয়, তাহলে খালের যে স্রোত, তাতে দেহাংশ পাওয়া আরও মুশকিল হবে। এ ছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ অন্যান্য সামগ্রীও উদ্ধার করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।

পচা-দুর্গন্ধযুক্ত ব্যাগ উদ্ধার
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কসাই জিহাদকে সঙ্গে দিয়ে আনারের মরদেহের অংশবিশেষের খোঁজে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে সেখানকার পুলিশ। কলকাতা সিআইডি সংবাদমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছে, জিহাদকে নিয়েই তল্লাশিকালে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাগজোলা খাল থেকে পচা-দুর্গন্ধযুক্ত একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে সিআইডি। ব্যাগটির ভেতরে মরদেহের খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাগটি পরীক্ষা করে দেখছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।

শাহীনকে ফেরাতে যৌথভাবে কাজ চলছে 
আনার হত্যাকান্ডের অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনতে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির এক কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই; কিন্তু ভারতের আছে। আমরা শাহীনকে ভারতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছি। কারণ অপরাধটি আমাদের রাজ্যে ঘটেছে। এক রাষ্ট্রের নাগরিক অন্য দেশে কোনো অপরাধে জড়িত হলে বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ায় সেই দেশটি ওই ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে যে দেশে আত্মগোপন করেছে, তাদের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে পারে।’

ডিএমপি ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদও বলেছেন, ‘শাহীনকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আমাদের কাছে যে সহযোগিতা চাইবে, আমরা সেটা করব।’

কলকাতায় গ্রেপ্তারকৃতদের আনার আবেদন করা হবে
কলকাতা যাওয়ার পর বিমানবন্দরের ফটকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, “আনার হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ আখতারুজ্জামান শাহীনসহ হত্যাকারীদের সবাই বাংলাদেশি। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ৩৬৪ ধারায় অপহরণের মামলা হয়েছে। মামলা অনুযায়ী বাংলাদেশে খুনের পরিকল্পনা হয়েছে এবং কলকাতায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে।” তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রতিনিধিদল আমাদের ওখানে গিয়েছে। গ্রেপ্তার করা অভিযুক্তদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলেছেন। আমরাও পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলার অনুমতি চাইব। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলসহ প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো দেখব। কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের বাংলাদেশে গ্রেপ্তারকৃতদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমরা অভিযুক্তদের বাংলাদেশে নেওয়ার অনুমতি চাইব। এ ছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ভিডিও কলে মুখোমুখি করার চেষ্টা করব।’

সিআইডির সঙ্গে বৈঠক ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন
গতকাল সকালে কলকাতায় গিয়ে ডিবির তিন কর্মকর্তা সিআইডির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তারা। ডিবি কর্মকর্তারা উদ্ধার হওয়া আলামতগুলো পর্যালোচনা করছেন।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, ‘আমরাও চেষ্টা করছি খন্ডিত লাশ উদ্ধার করতে। সব তথ্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হবে।’ -জনকন্ঠ

 


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন