ফিচার্ড মত-মতান্তর

বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ।। ডেমক্রেট শিবিরে আতঙ্ক 

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ।। ডেমক্রেট শিবিরে আতঙ্ক 

শিতাংশু গুহ, নিউ ইয়র্ক।। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যেকার প্রথম বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই ডেমোক্রেট শিবিরে হতাশা নেমে এসেছে। বাইডেন ব্যর্থ হয়েছেন একথা প্রমান করতে যে তিনি ফিট। আরো ৪বছর প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেশ শাসন করতে শারীরিকভাবে সক্ষম এটি প্রমান করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। বাইডেন ডেমক্রেটদের হতাশ করেছেন। ইতিমধ্যেই কথা উঠেছে, বিকল্প প্রার্থীর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। সিএনএন’র একজন কমেন্টেটর স্পষ্টত: বলেছেন, ডেমক্রেট শিবিরে শুধু যে বেদনা তা নয়, ভীতির সঞ্চার হয়েছে। ক্লোজিং ভাষণে বাইডেন ভোটারদের মনে রেখাপাত করার মত কিচ্ছু বলেননি। ডেমক্রেট শিবিরে রব উঠেছে, ‘উই হ্যাভ এ প্রব্লেম’। 

পক্ষান্তরে ক্লোজিং ভাষণে ট্রাম্প প্রথমেই বাইডেনকে ‘কমপ্লেইনার’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, বাইডেন কিচ্ছু করেননি, ইউক্রেইন-মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ তারই জন্যে হচ্ছে। আমেরিকা তাঁকে শ্রদ্ধা করেনা, সর্বত্র তিনি ব্যর্থ। কিন্তু এমনটা থাকবে না, ‘উই উইল মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। দু’জনের বয়স সম্পর্কে বাইডেন যা বলেছেন তা অস্পষ্ট, ট্রাম বেশ জোরের সাথেই বলেছেন, তিনি ফিট, এবং বাইডেনকে তিনি আনফিট বলেছেন। ট্রাম্প অবশ্য বেশক’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। যুক্তিতর্কে বাইডেন কিছুটা ভাল করলেও ট্রাম্পের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হননি, এমনকি ‘গর্ভপাত’ সম্পর্কেও নয়, অথচ এটি ডেমক্রেটদের একটি প্লাস-পয়েন্ট।

ট্রাম্প ভায়োলেন্স নিন্দা করবেন কিনা প্রশ্নটিও এড়িয়ে যান। নির্বাচনের ফলাফল তিনি মেনে নেবেন কিনা জিজ্ঞাসিত হলে ট্রাম্প প্রথমে এড়িয়ে যান, কিন্ত পুনরায় জিজ্ঞাসিত হলে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠূ হলে অবশ্যই তিনি মেনে নেবেন। এক পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি, এবং এজন্যে বাইডেন দায়ী, তিনিই আমাদের ৩য় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইডেন বলেন, আমাদের বিশ্বকে রক্ষা করতে হবে। বাইডেনের বক্তব্য পানসে মনে হচ্ছিলো। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেছেন তিনি জিতবেন, জরিপ তাই বলছে। বাইডেন বলেন, ভোটের দিন দেখা যাবে। পুরো বিতর্কে বাইডেনের গলার স্বর কর্কশ ও দুর্বল ছিলো।

প্রবেশের সময় বাইডেনকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিলো, ঠিকমত হাটতে পারছিলেন না, মাঝেমধ্যে তিনি তোতলাচ্ছিলেন। ট্রাম্প সাবলীল ভাবে হেটে রুমে ঢোকেন। দু’জন দু’জনকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ট্রাম্প বাইডেনকে মিথ্যুক বলেছেন, বাইডেন বলেছেন, আমি জীবনে এত মিথ্যাকথা শুনিনি। ৬ই জানুয়ারী ক্যাপিটল হিল ঘটনার প্রশ্নটি ট্রাম্প প্রথমে এড়িয়ে যান, কিন্তু মডারেটর পুনরায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি ন্যান্সি পেলোসিকে দায়ী করেন এবং বলেন, সেদিন দেশপ্রেমিকরা শান্তি মিছিল করছিলো। বাইডেন বলেছেন, এজন্যে ট্রাম্পই দায়ী, তিনি উস্কানি দিয়েছেন, ৩ঘন্টা তিনি কিছুই করেননি। দণ্ডিতদের তিনি মাফ করবেন কিনা এ প্রশ্নটি ট্রাম্প এড়িয়ে যান।

মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্র ফর্মুলা তিনি সমর্থন করেন কিনা প্রশ্নটিও ট্রাম্প এড়িয়ে যান। বাইডেনও এ নিয়ে কোন কথা বলেননি। তবে বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়েই বলেছেন, ইসরাইলকে এর কাজ শেষ করার সুযোগ দেয়া উচিত। ট্রাম্প বলেন, বাইডেন এখনো জিম্মিদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ। বাইডেন বলেছেন, হামাসকে উৎখাত করাটা দরকার। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার প্রশ্নে ট্রাম্প বাইডেনকে ধুইয়ে দেন্। ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ২০শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে যাবার আগেই প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হিসাবে তিনি পুটিন-জেলেনস্কির সাথে কথা বলে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন। এ পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, বাইডেনকে এখনই জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

বাইডেন যখন ট্রাম্পকে দণ্ডিত অপরাধী বলেন ট্রাম্প তখন ঈষৎ হাসছিলেন। বাইডেন ট্রাম্পকে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত অপরাধী বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন বাইডেন পুত্র ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত, হয়তো অফিস ছাড়ার পর বাইডেনও দণ্ডিত হতে পারেন। বাইডেন পুটিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসাবে মন্তব্য করেন। ইমিগ্র্যান্ট প্রশ্নে ট্রাম্পের ভালো করার কথা, তিনি করেছেন। অর্থনীতি প্রশ্নে দু’জনই ক্রেডিট দাবি করেছেন। মূলত: এ বিতর্কে বাইডেনের প্রমান করার কথা ছিলো যে তিনি ফিট, তা তিনি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এই প্রথম ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, সুপ্রিমকোর্ট ‘গর্ভপাত পিল’ অনুমোদন দিয়েছে, তিনি সেটি মেনে নেবেন এবং আটকাবেন না। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেন, গর্ভপাতের বিষয়টি ষ্টেটের ওপর থাকা উচিত। বাইডেন বলেন, তিনি ‘রোভি এক্ট’ পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে।

২৭শে জুন ২০২৪ টানা উত্তেজনার মধ্যে বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ হয়েছে। আটলান্টায় সিএনএন সদর দফতরে আয়োজিত এ বিতর্ক রাত ৯টা থেকে দু’টি বিজ্ঞাপনী বিরতিসহ রাত ১০টা৩৮মিনিট পর্যন্ত চলে। বাইডেন ছিলেন পোডিয়ামের ডানদিকে, ট্রাম্প শেষ কথা বলেন। দু’জন মডারেটর জেইক টেপার ও ডানা ব্যাশ সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন দুই প্রার্থীকে সময় মেনে চলতে এবং বিতর্ক ভদ্রোচিত রাখতে। মোটামুটি তা-ই ছিলো। বিতর্কে ট্রাম্প জয়ী। বেশিরভাগ মিডিয়া এন্টি-ট্রাম্প, তাঁরাও বাইডেনকে নিয়ে হতাশ। ক্লিন্টন আমল থেকে প্রায় প্রতিটি বিতর্ক আমি দেখেছি, এবারো শেষ পর্যন্ত দেখে আমার মনে হয়েছে, ‘বাইডেন প্রথম  থেকেই হেরে বসেছিলেন’।

এ বিতর্কে দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রায় সবকিছুই ‘অমিল’, মিল শুধু দু’জনেই বুড়ো। ট্রাম্প আগে এক অনুষ্ঠানে বাইডেনকে ‘বুড়ো’ বলেছেন। বাইডেন সিটিং প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট-এমন ঘটনা এই প্রথম, এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় দোষী, এটিও নজিরবিহীন ঘটনা। ইতোপূর্বে কোন দণ্ডিত প্রেসিডেন্ট বিতর্কে অংশ নেননি। মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি দন্ডিত। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরো ৩টি ফৌজদারি মামলা ঝুলছে। অন্যদিকে ট্রাম্প একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দু’বার ইম্পিচইড হ’ন, এবং দু’বারই খালাস পান। সিএনএন-র ভাষ্যমতে আরএফকে জুনিয়র মার্কিন সংবিধানের আর্টিক্যাল-২, সেকশন-১ -র শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিতর্কে অংশ নিতে পারেননি।

নিয়ম ছিলো এক প্রার্থী কথা বলার সময় অন্য প্রার্থীর মাইক্রোফোন বন্ধ থাকবে, তাই ছিলো। কোন প্রার্থীকে পূর্বে বেঁধে দেয়া নিয়মানুযায়ী কোন লিখিত নোট নিতে দেয়া হয়নি, তাদের উভয়কে একটি কলম, একটি লেখার প্যাড, ও এক বোতল জল দেয়া হয়। বিতর্কস্থলে কোন দর্শক ছিলোনা। ২য় বিতর্ক হবার কথা ১০ই সেপ্টেম্বর, আয়োজক এবিসি। সচরাচর ৩টি বিতর্ক হয়ে থাকে, এখন পর্যন্ত দুই প্রাথী ২টি বিতর্কে রাজি হয়েছেন। সিএনএন ফ্ল্যাশ-পোল বলছে, ট্রাম্প জিতেছেন, ৬৭%-বাইডেন ৩৩%। প্রশ্ন হচ্ছে, বাইডেন কি ডেমক্রেট প্রার্থী থাকছেন? না থাকলে, বিকল্প প্রার্থী কে হবেন?

 


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন