ডেমক্রেটরা ফাঁটা বাঁশে আটকে গেছেন
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। নিউইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় বোর্ড বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্টের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। ডেমক্রেটরা এমুহুর্তে দ্বিধাবিভক্ত, বাইডেনের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বাইডেন-কে অপসারণ কি সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। সবচেয়ে সহজ রাস্তাটি হচ্ছে বাইডেন যদি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। এটি না হলে, রাস্তাটি কঠিন। বাইডেন সরে দাঁড়ালে প্রথম দাবিদার ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, কিন্তু তিনি মোটেই জনপ্রিয় নন। ডেমক্রেটরা ‘ফাঁটা বাঁশে’ আটকে গেছে। বাইডেন থাকলে পরাজয়ের সম্ভবনা উজ্জ্বল, তাঁকে সরাতে গেলে দলে বিভক্তি।
বৃহস্পতিবার বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্কে বাইডেন হতাশ করেছেন। ডেমোক্রেট শিবিরে হতাশা নেমে আসে, ভীতির সঞ্চার হয়, বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর প্রশ্ন সামনে আসে। বিতর্কে বাইডেন প্রমান করতে ব্যর্থ হন যে তিনি ফিট। বিতর্কের শুরুতে বাইডেনকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিলো, ঠিকমত হাটতে পারছিলেন না, মাঝেমধ্যে তোতলাচ্ছিলেন। ট্রাম্প সাবলীল ভাবে হেটে রুমে ঢোকেন। দু’জন দু’জনকে মিথ্যাবাদী বলেন। ৬ই জানুয়ারী ক্যাপিটল হিল ঘটনার প্রশ্নটি ট্রাম্প প্রথমে এড়িয়ে যান, কিন্তু মডারেটর পুনরায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি ন্যান্সি পেলোসিকে দায়ী করেন এবং বলেন, সেদিন দেশপ্রেমিকরা শান্তি মিছিল করছিলো। বাইডেন বলেছেন, এজন্যে ট্রাম্পই দায়ী, তিনি উস্কানি দিয়েছেন, ৩ঘন্টা তিনি কিছুই করেননি। দণ্ডিতদের তিনি মাফ করবেন কিনা এ প্রশ্নটি ট্রাম্প এড়িয়ে যান।
ক্লোজিং ভাষণে বাইডেন মনে রাখার মত কিছু বলেননি। ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেন কিচ্ছু করেননি, ইউক্রেইন-মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ তারই জন্যে হচ্ছে। বাইডেন সর্বত্র ব্যর্থ। কিন্তু এমনটা থাকবে না, ‘উই উইল মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। দু’জনের বয়স সম্পর্কে বাইডেন জোর দিয়ে বলেননি যে তিনি ফিট, ট্রাম্প বলেছেন। ট্রাম্প বেশক’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। যুক্তিতর্কে বাইডেন ভাল করেছেন। বাইডেন ডেমক্রেটদের প্লাস-পয়েন্ট ‘গর্ভপাত’ নিয়ে সুবিধা করতে পারেননি। ট্রাম্প ভায়োলেন্স নিন্দা করেননি। বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠূ হলে তিনি ফলাফল মেনে নেবেন। মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্র ফর্মুলা উভয় প্রার্থী এড়িয়ে যান। উভয়ে বলেন, ইসরাইলকে এর কাজ শেষ করার সুযোগ দিতে হবে। ট্রাম্প বলেন, বাইডেন জিম্মিদের উদ্ধারে ব্যর্থ। বাইডেন বলেছেন, হামাসকে উৎখাত করাটা দরকার। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার প্রশ্নে ট্রাম্প বাইডেনকে ধুইয়ে দেন্।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ২০শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে যাবার আগেই প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হিসাবে তিনি পুটিন-জেলেনস্কির সাথে কথা বলে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন। এ পর্যায়ে ট্রাম্প বলেন, বাইডেনকে এখনই জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। ট্রাম্প আরো বলেছেন, আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি, এবং এজন্যে বাইডেন দায়ী, তিনিই আমাদের ৩য় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। বাইডেন বলেন, আমাদের বিশ্বকে রক্ষা করতে হবে। বাইডেনের বক্তব্য পানসে মনে হচ্ছিলো। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেছেন তিনি জিতবেন, জরিপ তাই বলছে। বাইডেন বলেন, ভোটের দিন দেখা যাবে। পুরো বিতর্কে বাইডেনের গলার স্বর কর্কশ ও দুর্বল ছিলো। বাইডেন পুটিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসাবে মন্তব্য করেন। ইমিগ্র্যান্ট প্রশ্নে ট্রাম্পের ভালো করার কথা, তিনি করেছেন। অর্থনীতি প্রশ্নে দু’জনই ক্রেডিট দাবি করেছেন।
বাইডেন যখন ট্রাম্পকে দণ্ডিত অপরাধী বলেন ট্রাম্প তখন ঈষৎ হাসছিলেন। ট্রাম্প বলেন বাইডেন পুত্র ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত, হয়তো অফিস ছাড়ার পর বাইডেনও দণ্ডিত হতে পারেন। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, সুপ্রিমকোর্ট ‘গর্ভপাত পিল’-র যে অনুমোদন দিয়েছে, তা তিনি মেনে নেবেন এবং আটকাবেন না। ট্রাম্প পরিষ্কার বলেন, গর্ভপাতের বিষয়টি ষ্টেটের ওপর থাকা উচিত। বাইডেন বলেন, তিনি ‘রোভি এক্ট’ পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে। এ বিতর্কে দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রায় সবকিছুই ‘অমিল’, মিল শুধু দু’জনেই বুড়ো। বাইডেন সিটিং প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট-এমন ঘটনা এই প্রথম, এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় দোষী, এটিও নজিরবিহীন ঘটনা। ইতোপূর্বে কোন দণ্ডিত প্রেসিডেন্ট বিতর্কে অংশ নেননি। মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি দন্ডিত। ট্রাম্প একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দু’বার ইম্পিচইড হ’ন, এবং দু’বারই খালাস পান।
২৭শে জুন ২০২৪ বাইডেন-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক শেষ হয়েছে। আটলান্টায় সিএনএন সদর দফতরে আয়োজিত এ বিতর্ক রাত ৯টা থেকে দু’টি বিজ্ঞাপনী বিরতিসহ রাত ১০টা৩৮মিনিট পর্যন্ত চলে। বাইডেন ছিলেন পোডিয়ামের ডানদিকে, ট্রাম্প শেষ কথা বলেন। দু’জন মডারেটর জেইক টেপার ও ডানা ব্যাশ সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন দুই প্রার্থী মোটামুটি ভদ্রজ্বনিত ছিলেন। ক্লিন্টন আমল থেকে প্রায় প্রতিটি বিতর্ক আমি দেখেছি, এবারো শেষ পর্যন্ত দেখে আমার মনে হয়েছে, ‘বাইডেন প্রথম থেকেই হেরে বসেছিলেন’। এক প্রার্থী কথা বলার সময় অন্য প্রার্থীর মাইক্রোফোন বন্ধ ছিলো। কোন প্রার্থীকে কোন লিখিত নোট নিতে দেয়া হয়নি, তাদের উভয়কে একটি কলম, একটি লেখার প্যাড, এক বোতল জল দেয়া হয়। বিতর্কস্থলে কোন দর্শক ছিলোনা। সিএনএন ফ্ল্যাশ-পোল বলছে, ট্রাম্প জিতেছেন ৬৭%-বাইডেন ৩৩%। ২য় বিতর্ক হবার কথা ১০ই সেপ্টেম্বর, আয়োজক এবিসি। ৬/৩০/২৪