ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

সেই ……. ।।। শীতল চট্টোপাধ্যায়

সেই ……. ।।। শীতল চট্টোপাধ্যায়

সেই একটা বাঁশি হওয়ার বেলা,
পাখি ডানায় পালক হওয়ার বেলা,
আকাশটাকে ছুঁয়ে চলার বেলা ।
দেখা পাওয়া, লুকিয়ে পড়ার বেলা সেই…..
সারা আমিটার মধ্যে শুধুই তুই ,
সপ্ত সুর পেরিয়ে তুই এক নতুন অষ্টম সুর ।
তোদের বাড়ি ঢোকার সরু রাস্তাটার ওপর দাঁড়িয়ে
মাটির ঘরের দোতলার জানালায় চেয়ে থাকি ,
কখন যেন তোর পা, হাত বা ফ্রকটা দেখতে পাবো !
জানলার ফাঁকটুকু দিয়ে কখন যেন একবার দেখবি তুই ,
একবার বলবি -যাচ্ছি-যাচ্ছি দাঁড়া । বলতিসও ,
শুনেই বুকের ভেতরটায় কেমন যেন হতো !
ভয়, আনন্দ, ভালোলাগা, বলতে চাওয়া, শুনতে চাওয়া
মিলেমিশে একাকার আমাতে , আমি যেন আর আমি নেই ,
তোতেই আমার কিশোরবোধ সব ,
তোতেই দেখি উজাড় হয়ে যাওয়া আমাকে ।
ক’যুগ পেরিয়ে আসা আমাদের সেই একসাথের কৈশোরে ছেলে-মেয়েতে মেশায় ছিলনা অভিভাকদের প্রতিক্রিয়া,
ছিলনা নজরদারি ।
আমরা যখন একসাথে হাঁটছি রাস্তায় ,
কত কাকা-জ্যাঠাদের সাথেই তো দেখা কিন্তু
আমরা কোনোদিন কোনো গ্রাহ্যতেই পড়িনি তাদের,
উঠিনি একটুও কারণ হয়েও ।
হালি ধানজমির আল ধরে আবারিত হাঁটা আমাদের ,
বিকেলের খালি পুকুর ঘাটে বসা ,
পৌষমেলা-রথের মেলায় একটা টাকা কাছে থাকার আনন্দেই
মনে হতো সারা মেলাটাই আমাদের যেন !
কেমন করে যেন আমরা প্রতিদিন হয়েছি ,সকাল-সন্ধে হয়েছি ,
সোনালী -রুপোলি আলোয় কাটিয়েছি বেলা ,
আনন্দ-ভালোলাগার হৃদয় সুর শুনেছি একে-অন্যের ,
সে সুর-সুরের বাঁধনে নয় ,বাঁধন খোলা নতুন সুর ,
কিশোর বেলার উড়ান সুর ,জুড়ান সুর,
সে সুর হলুদ বনের ফুলে-ফুলে ,
শালুকের পাপড়ি গায়ে ।
সুন্দরের সেই দিনে কেটেছে অনেকদিন ।
দরজায় দাঁড়িয়ে সেই প্রথম বাতাসকে ডেকে বলতে শিখেছি ,
যাবে ওর কাছে ? ফ্রকে তুলবে ঢেউ , এলোমেলো করবে চুল ?
দেরি করেনি,সবকথা শুনেছিল বাতাস ।
অপেক্ষায় থাকা ছোটনদীর কিনারে পৌঁছে যেতাম আমরা ,
আমাদের ছবিতে জল আরশি হতো নদী ,
আমাদের কৈশোর ঢেউয়ে ঢেউ হতো সে , স্রোত হতো
আমাদের মনস্রোতে ।
কতদিন কত কথা শুনেছে নদী ,কতদিন কত বলা দুলিয়েছে
ঢেউয়ে ,কত হাঁটা থেকে গেছে জল-বালির কিনার বরাবর ,
কতদিন কত ভেজা বালি উঠে এসেছে পায়ে-পায়ে ।
অনেকটা বালি পেরিয়ে ,মাটি বাঁধের ঢালে উঠছি যখন –
পশ্চিমের আকাশ ঢাল পেরিয়ে গেছে সূর্য ,
বাঁধের অন্য দিকের ঢাল থেকে নেমে হাঁটছি যখন –
কাছে-দূরে শাঁখের শব্দ, কতদিন-কতবার
এভাবে পাশাপাশি চলেও
কেউ-কারও হাত ধরিনি কোনোদিন ,
জাগেনি ইচ্ছে-সাহস কোনোটাই ।
পথ থেকেও ফুরিয়ে গেছে আমাদের পথ ।
পথের পাশে সবুজ গাছ , গাছের পাশে কোথাও দাঁড়িয়ে নেই
আমাদের সবুজ কৈশোর, তারপর,
আরও অনেকটা পথ পার হতে-হতে
জুড়ে গেছে ক’টা যুগ, যার সঙ্গে আমার এখনের চলা ,
ও, আমাকে আশ্রয় দিয়েছে জানালায় ।
ঝাপসা চোখে বসে থাকি , হাওয়া হয়ে তুই আসবি বলে , আসিসও , দু’জনে-দুজনের হাত ধরি এখন ।


 

ঠিকানা – জগদ্দল, উত্তর২৪পরগণা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ

 


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন