ফিচার্ড মত-মতান্তর

মাইনাস টু এবং মাইনাস থ্রী

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

মাইনাস টু এবং মাইনাস থ্রী

।।শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। ড. ইউনুস সফল হলে প্রচলিত দলগুলো ভেঙ্গেচুরে তছনছ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি-কে অতিশয় দুর্বল করে দিয়েছে, এর সাংগঠনিক ভিত্তি নড়বড়ে, যদিও জনসমর্থন আছে। এক্ষণে নির্বাচন দিলে বিএনপি জিতবে এবং এর সাংগঠনিক ভিত্তি কিছুটা মজবুত করার সুযোগ পাবে। সেটি হচ্ছেনা, কারণ আপাতত: কোন নির্বাচনের সম্ভবনা নেই। মানুষ ২০০১-২০০৬-এ বিএনপি’র দু:শাসনের কথা ভুলেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান টার্গেট আওয়ামী লীগ, এর ছোটবড় কোন নেতাই রেহাই পাবেন না? শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একশ’র বেশি মামলা হয়েছে, অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, আরো হবে। শিক্ষার্থীরা যতদিন রাস্তায় থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগ নেতারা বেরুতে পারবেন না। ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় পরে গেলে খবর আছে! আওয়ামী লীগের বড়-মাঝারি-ছোট নেতারা হারিয়ে যাবেন। তবে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী আছেন, সময় এলে এঁরা আবার নুতন আওয়ামী লীগ গঠন করবে।

আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাপা-জামাতের মধ্যে রেষারেষি, কামড়াকামড়ি-তে জাতি বীতশ্রদ্ধ, এসব দলের ওপরের সকল নেতাই ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে দূরে সরিয়ে দেয়নি, কাছেও টানেনি। বিএনপি খুশি, কারণ শেখ হাসিনা নেই, দেশ ছেড়েছেন, আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী। বিএনপি’র মামলাগুলো বাতিল হচ্ছে। সরকার তাদের প্রতি মারমূখী হচ্ছেনা। তবে তারেককে এঁরা দেশে ফিরতে দেবেনা। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যেতে চাইলে খুশি হয়ে যেতে দেবে। পুনরায় ঢুকতে দেবে কিনা তা নিশ্চিত বলা শক্ত। খালেদা জিয়া তা জানেন, তাই হয়তো তিনি আদৌ দেশের বাইরে যাবেন না। এমনিতে তার শরীর ভাল নেই, তাই আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করবেন সেই সম্ভবনা কম, সরকার তা চাইবে না? তারা দোয়া করছেন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গিয়ে বার্ধক্য-জ্বনিত কারণে মারা যান। তিনি দেশের বাইরে গেলে ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলা কার্যকর হয়ে যায়। শেখ হাসিনা’র জন্যে দেশের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। ‘মাইনাস টু’ এখন অনেকটা সফল, অন্তর্বর্তী সরকারের পরবর্তী এজেন্ডা ‘মাইনাস-থ্রী’ অর্থাৎ, আওয়ামী-লীগ-বিএনপি-জামাত আউট।

এ মুহূর্তে জামাত ক্ষমতার অংশীদার। নিন্দুকেরা বলেন, ‘ড: ইউনুস নিজেও জামাত’। আমি জানিনা। তবে তিনি এন্টি-আওয়ামী লীগ, এন্টি-বঙ্গবন্ধু। তিনি জিয়াপ্রেমী নন। তিনি ইঙ্গ-মার্কিনীদের বন্ধু। তাঁর পারিবারিক জীবনধারা ইউরোপীয় ষ্টাইলের। তিনি সম্ভবত: বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কোনটা-কে পছন্দ করেননা। তার চতুর্দিকে জামাত ও মৌলবাদীরা। শিক্ষার্থীদের ডাকে এবং মৌলবাদের হাত ধরে তিনি ক্ষমতাসীন হন। ড: ইউনুস কি আওয়ামী লীগকে ঠান্ডা করার জন্যে জামাতকে ব্যবহার করছেন, না জামাত ড: ইউনুসকে ব্যবহার করছেন-এটিও একটি প্রশ্ন? নাকি উভয় পক্ষ এন্টি-আওয়ামী লীগ, তাই একত্রে কাজ করছেন। দেশে এখন যে ‘অরাজক’ পরিস্থিতি এরজন্যে সবাই জামাতকে দায়ী করছেন। দল হিসাবে জামাত নিষিদ্ধ ছিলো, সেটি উঠে গেছে। এক্ষণে জামাত ড: ইউনুসকে মেনে নিচ্ছেন, কারণ শিক্ষার্থীরা তাকে ডেকে এনেছেন। শিক্ষার্থীরা ড: ইউনূসের পক্ষে, কিন্তু এঁরা সবাই জামাত একথা জোর দিয়ে বলা যায়না। এঁরা জামাত-বিএনপি’র বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না, এ গ্যারান্টি কিন্তু নেই!

সামনে ইউনুস-জামাত সংঘাত হবে, ড: ইউনুস শিক্ষার্থীদের তার পক্ষে ব্যবহার করতে চাইবেন। হয়তো নুতন দল হবে, নুতন দল ক্ষমতায় আসবে। তিনি হারলে দেশত্যাগ করবেন। জামাত এককভাবে ক্ষমতাসীন হোক তা কেউ মানবে না, দেশে সংঘাত বাড়বে, গৃহযুদ্ধের সম্ভবনা থাকবে, দেশ আফগানিস্তান হবে। সংঘাত এড়াতে এবং আওয়ামী লীগকে কোনঠাসা করতে বিএনপি-জামাত জোট হবার সম্ভবনা থাকবে। ড: ইউনুস ক্ষমতায় থাকলে তিনি ‘মাইনাস-থ্রী’ ফর্মুলা কার্যকর করবেন। যদিও তিন দল পুনরায় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মত কার্যক্রম চালাতে চাইবেন, জনগণ সাড়া দেবেনা, কারণ দেশের বর্তমান দুরবস্থার জন্যে এ তিনদল ও জাপা (জাতীয় পার্টি) দায়ী। জনগণ ও শিক্ষার্থীরা চাইবে ড: ইউনুস ক্ষমতায় থাকুন। ইউনূসের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। তিনি কি পারবেন দেশে ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে? না পারলে, শেষ ভরসা ‘সেনাবাহিনী’।  [email protected];

সংবাদটি শেয়ার করুন