আগামী ১৫ নভেম্বর মণিপুরীদের মহারাসলীলা
আগামী ১৫ নভেম্বর মণিপুরীদের মহারাসলীলা
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : আগামী শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন প্রায়।
তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনা, আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে রাস পূর্ণিমা তিথিতে সনাতন ধর্মের অবতার পুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখী রাধার লীলাকে ঘিরে এ দিনরাত্রী পালিত হয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে রং করানোর কাজ। পাড়া মহল্লায় এখন সাজ সাজ রব।
রাস উৎসবের দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।
উৎসব আয়োজনে মণিপুরি পল্লীর বাড়ির উঠোনে ছেলেমেয়েদের নাচের প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের ভঙ্গিসমূহ। কোনো জায়গায় চলছে রাসনৃত্যের মহড়া। কোনো জায়গায় রাখালনৃত্যের। এগুলো এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নৃত্যকে নিখুঁত করার ঘষামাজার শেষ পর্যায়ে।
জানা যায়, এবার মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮২ তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।
অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার।
মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপ প্রাঙ্গণ।
রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মন্ডপগুলো সাজানো হচ্ছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও।
কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস আগে থেকেই চলে রাসোৎসবের প্রস্তুতি। রাসোৎসবকে সফল করতে প্রায় মাসখানেক ধরে কয়েকটি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলে। একেকটি মণ্ডপে আছেন একজন করে পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে একজন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধিবিধান মতো গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষককে সহযোগিতা করতে একজন সহকারী প্রশিক্ষক আছেন। প্রশিক্ষক শিল্পীদের ঠিক করেন।
এরপর সামাজিক বিধান মতো শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণের বাইরেও কেউ চাইলে রাসনৃত্যে অংশ নিতে পারেন। গোপীবেশী এই শিল্পীদের বয়স ১৬-২২ বছর। শুধু রাধার বয়স ৫-৬ বছর। মাধবপুরে তিনটি জোড়া মণ্ডপের আওতায় এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাসলীলা দুই ভাগে বিভক্ত– গোষ্ঠলীলা ও রাসলীলা। গোষ্ঠলীলায় কৃষ্ণের বাল্যকালে মাঠে মাঠে বাঁশি বাজিয়ে ধেনু চড়াবার মুহূর্তগুলো অনুকরণ করা হয়। গোষ্ঠলীলাকে ‘রাখালনৃত্য’ বা ‘রাখোয়াল’ বলা হয়ে থাকে। রাসলীলায় অভিনীত হয় ‘গোপীনৃত্য’।
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারন সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, এবারে মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮২তম মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১টা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে চলবে পরদিন ব্রাহ্মমুহুর্ত পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই রাসোৎসব আনন্দময় করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে।
শ্যাম সিংহ আরো জানান, রাসোৎসবে সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(রাজস্ব) দেবজিৎ সিংহসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া একইদিন উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।
রাসোৎসবকে সুন্দর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার রাত ৮টায় মাধবপুর মণিপুরী ললিতকলা একাডেমিতে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন এর সভাপতিত্বে অতিথিরা ছিলেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন নিয়ামূল, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি এম সাদিক আল শাফিন।
রাসলীলা আয়োজক মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সভাপতি প্রকৌশলী যোেেগশ্বর চ্যাটার্জীর, সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ, যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক নির্মল এস পলাশ, ইউপি সদস্য রামকৃষ্ণ চ্যাটাজ্জ্বী এছাড়াও আদমপুর ইউনিয়নের রাসলীলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ প্রমুখ।
মণিপুরী আগামী ১৫ নভেম্বর মণিপুরী মহারাসলীলা সকল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে উপস্থিতিতে একটি সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেতুবন্ধনের বর্ণিল উৎসব হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকার সকল ধর্মের নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের কাজ করছে। মণিপুরী মহারাসলীলা সুন্দরভাবে উদযাপনের নিরাপত্তায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।