অণুগল্প ।।। বসন্তকাল ।।। স্নিগ্ধা সরকার
বসন্তকাল। গাছে-গাছে সবুজ কচি পাতায় নতুন আগমনের বার্তা। ‘কুহু-কুহু’ স্বরেপুরুষ কোকিল নারী কোকিলকে ডাকছিল। শকুন্তলা পায়ে হেঁটে বিকেলের ভ্রমণ করছিল। গায়ে হলুদ চুড়িদার ও নীল ওড়না। কি মনে হয়েছিল,আজ দুপুরে স্নান করার পর সে পায়ে নববধূর মতো লাল-রঙের আলতা পরেছিল। গৌরীপাড়ার এদিকে আগে কখনও আসেনি শকুন্তলা। প্রকৃতির রূপ উপভোগ করছিল সে। শকুন্তলার বয়স আঠাশ বছর। অবিবাহিতা। পলাশ সরকার নামে একটি ছেলের সাথে প্রেম করত। সাত বছর আগে পলাশ সরকার একদিন
অজ্ঞাত কারণে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় বান্ধবী বিদিশার সাথে দেখা।
বিদিশা শকুন্তলাকে বলল,”শকুন্তলা,পলাশ বোধহয় আর ফিরবে না। মনে হয়, পলাশ মারা গেছে।” শকুন্তলা কোনও কথা বলল না। সামনের দিকে হাঁটতে লাগল।
অনেকটা পথ যাওয়ার পর দূর থেকে শকুন্তলা দেখল,লাল পলাশ ফুলে পরিপূর্ণ একটি পলাশ গাছ। পলাশ গাছটির মধ্যে শকুন্তলা তার প্রেমিক পলাশকে দেখতে পেল। ‘ধকধক’ করা বুক নিয়ে শকুন্তলা অপলক ভাবে তাকিয়ে রইল পলাশ গাছটির দিকে।
শকুন্তলা লাল আলতা পরা পায়ে পলাশ গাছটির দিকে এগিয়ে চলল। গাছটির কাছে গিয়ে দেখল,অনেক লাল পলাশফুল লাল-বিছানার চাদরের মতো মাটিতে পড়ে তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। নীল ওড়না পরা শকুন্তলা মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাতে ফুলগুলো তুলল। ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে তার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। এরপর শকুন্তলা ফুলগুলো নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকতে লাগল। বুক ভরে লাল পলাশ ফুলগুলোর গন্ধ নিতে নিতে শকুন্তলা বলে উঠল,”আহ,খুব সুন্দর! খুব-ই সুন্দর!” পলাশ গাছ থেকে একটি লাল টকটকে পলাশ ফুল লাল-আলতা পরা শকুন্তলার সিঁথির
মাঝখানে পড়ে শকুন্তলার সিঁথি বরাবর সিঁথির সিঁদুরের মতো আটকে রইল।