ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

বহিষ্কৃত ।।।। শীতল চট্টোপাধ্যায়

বহিষ্কৃত ।।।। শীতল চট্টোপাধ্যায়

তক্তপোশটা চলে গেল বিকেলের ভ্যানে ।
বাড়ি-বাড়ি রান্না করার গরীব মেয়েটির ঘরে
নিরাশ্রয় তক্তপোশটা চলে যাচ্ছে
ভিক্ষা পাওয়ার বস্তু হয়ে ,ওটা ওর
গরীব সংসারে যত্ন পাবে
আনন্দের ।
তক্তপোশটা ভ্যানে তোলার সময়
উঠোনে দাঁড়িয়ে আমি একাই ওকে
বিদায় জানাচ্ছিলাম ।
আমার সংসার ওকে পর করার অভিমানেই
চলে গেল সে ।
অনেক বয়সেও প্রথম দিনের মতোই
কাষ্ঠ ঋজুতার শক্ত শরীরে ধরে রেখেছে নিজেকে ।
আমার প্রথম জীবন
মেঝেয় কাটার পর,
কর্ম জীবনের পারিশ্রমিকেই ওই তক্তপোশটা এসেছিল
কর্মস্থান এই মফস্বলের
একতলার একটি ছোট ঘরে।
মেঝে থেকে একটু উঁচুতে বসার জন্য
ওই তক্তপোশটাটাই নিজের কোলে তুলে নিয়েছিল
আমাকে , দিয়েছিল একটু নরম বিছানায় ঘুমানোর
সুখ । তবুও –
এই সময়ের পছন্দের কাছে ব্রাত্য হলো সে ,
সংসারের চাহিদার কাছে
নেই-পরিত্যক্ত হলো সে ,
প্রয়োজন অস্বীকারে এক্কেবারে হেয় হয়ে
অনেকদিন পড়ে রইল উঠোনের এক কোণে ।
বাতাস ধুলো জমায় গায়ে ,
বিড়াল বিষ্ঠা ত্যাগ করে দেহয় ,
আশ্রয়হীন বুকে নামে রাতের শিশির-কুয়াশা ।
একতলার বাড়ি প্রসারিত হয়ে
বড় সংসারের বহিষ্কৃত তক্তপোশটাই
গরীবের করুণা আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে আজ ।
একসময়ের অনেক ক্লান্তি ভোলানো তক্তপোশটা
আপন থেকে পর হওয়ার কষ্টে চলে যাচ্ছে ,
যতদিন ঘুমিয়ে যত স্বপ্ন দেখা
স্মৃতির কাছে রেখে সে চলে যাচ্ছে
বিচ্ছেদ যন্ত্রণা পেতে-পেতে ,
উঠোনে আমি একা দাঁড়িয়ে
ওর দিকে চেয়ে আছি এখনও ।


ঠিকানা -জগদ্দল , উত্তর২৪পরগণা
পশ্চিমবঙ্গ , ভারতবর্ষ

সংবাদটি শেয়ার করুন