দুটি চাকুরী: দুই লক্ষাধিক কুইবেকারের জন্য নতুন বাস্তবতা
একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি কেনার আশায় দিনে একটি কনভেনিয়েন্স স্টোরে এবং রাতে একটি ক্লিনিং কোম্পানিতে কাজ করেন ৫০ বছর বয়সী জুলিও ক্যাসাস। “আমার যদি দুটি কাজ না থাকত, তাহলে আমি কিছুই সাশ্রয় করতে পারতাম না”, দীর্ঘশ্বাস ফেলে সংবাদ মাধ্যম “জার্নাল দ্যা মন্ট্রিয়েল”কে একথা জানান, সপ্তাহে মোট ৯৫ ঘন্টা কাজ করা ক্যাসাস। অবসর বলতে তার কিছুই নেই। তাই সাংবাদিক GABRIEL CÔTÉ কে পার করতে হয়েছে দীর্ঘ দিন ক্যাসাস এর বিরল এক অবসর মুহূর্তের অপেক্ষায়।
দিন দিন এ ধরণের পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়ে উঠছে। ‘স্ট্যাটিস্টিক কুইবেক’ এর তথ্য অনসুারে, গত বছর প্রদেশে একাধিক চাকুরীতে নিয়োজিত ছিলেন ২০৭,৩০০ জন কর্মী, যা ২০১৪ সালের তুলনায় ১৭% বেশী। কিন্তু এটাই পুরো গল্প নয়। স্ট্যাটিস্টিক কুইবেকের তথ্য থেকে জানা যায় যে, একাধিক চাকুরীতে থাকা ৩১% (৬৪ হাজার) কুইবেকার সপ্তাহে ৪০ ঘন্টারও বেশি সময় দেন তাদের মূল কাজে।
অর্থনীতিবিদ হেলেন বেগিনের মতে, “এই বৃদ্ধি মুলত: চাকরির বাজারের খারাপ পরিস্থিতির কারণে এমনটা হয়েছে। পূর্ণকালীন চাকুরী খুঁজে পাওয়া আগের চেয়ে অনেক কঠিন। তাই, খণ্ডকালীন চাকুরী নিতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ।” ফলস্বরূপ, জুলিও ক্যাসাসের মতো, ৭৮ হাজার কর্মী, সপ্তাহে ৫০ ঘন্টারও বেশি কাজ করে, সারাদিন এখানে সেখানে ছুটে বেড়ায় কাজের নিমিত্তে। এ হার ১০ বছর আগের তুলনায় ৫০% বেশি।
বিষয়টা এমন নয় যে, এরা স্বল্প আয়ের মানুষ। ২০১৭-২০১৮ সাল থেকে আবাসন খরচ বৃদ্ধির সাথে সাথে, আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সংসার চালাতে অক্ষম হচ্ছে এবং অনেকেই ক্রেডিট কার্ডের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। অজান্তেই, তারা ঋণের এক দুষ্টচক্রে পড়ে দীর্ঘস্থায়ী সংকঠে পদার্পণ করছে। ফলে কাজের সময় বৃদ্ধি করা কিংবা দুটি কাজ নেয়া ছাড়া তাদের আর কোন বিকল্প থাকছেনা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এতে পরিস্থিতির উন্নতি হয় খুব কম। ট্যাক্স ব্র্যাকেটের কারণে যে নিট বৃদ্ধি হয়, তা দৃশ্যমান আয়ের চেয়ে কম। বছর শেষে দেখা যায় তাদের পকেটে থাকে অতিরিক্ত মাত্র $১৫০০-$২,০০০।
কিন্তু পরিণতি স্বরূপ অতিরিক্ত চাপে তাদের শরীরের উপর ভর করে ক্লান্তি এবং অসুস্থতা, সাথে বাড়ে অপ্রত্যাশিত অনেক খরচ। কর্মদিবস বা কর্মঘন্টা বেড়ে যাওয়াতে অবসর সময় কমে যায়। স্বাভাবিক কারণেই পরিবারকে সময় দেয়া হয়না যা পারিবারিক অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাস্তবতা হচ্ছে কর্মদিবস বাড়ানোতে দিনের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পায়না। বেশীরভাগ লোকই এতটাই ক্লান্ত থাকে, যে তারা তাদের খরচের হিসাব রাখতে পারেনা। হেলেন বেগিন বলেন “অর্থনৈতিক এ অবস্থা চক্রাকারে ঘটে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে। যদি মার্কিন শুল্ক অপসাসারিত হয়, তাহলেই, অর্থনীতি চাঙ্গা হবে এবং বেকারত্বের হার কমে যাবে। কর্পোরেটগুলিতে আরও পূর্ণকালীন কর্মীর প্রয়োজন হবে এবং এটি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।” কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে সেদিন কবে আসবে?