অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ফিচার্ড

খুন করে মৃতদেহের মাংস-ঘিলু খেতেন!

খুন করে মৃতদেহের মাংস-ঘিলু খেতেন! স্যুপের মতো পান করতেন রক্ত, নিজেকে সত্যিকারের রাজা ভাবতেন উত্তরপ্রদেশের ত্রাস

২০০০-এর দশক। একের পর এক খুনের ঘটনায় শিউরে উঠেছিল উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল। পরে তদন্তে নেমে এক সিরিয়াল কিলারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। পাশাপাশি উঠে আসে রক্ত ঠান্ডা করে দেওয়া সব তথ্য।

অনুমান করা হয়েছিল আততায়ী শুধু খুনই করেননি, মৃতদের মাংসও খেতেন তিনি। রক্ত পান করতেন স্যুপের মতো। এমনকি, মৃতদেহগুলির খুলিও সংগ্রহ করতেন খুনি। তার আগে সেই খুলি থেকে ঘিলু বার করে খেতেন। কিন্তু কে সেই নৃশংস খুনি?

উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত সেই সিরিয়াল কিলারের নাম রাজা কোলান্ডার। রাজার জন্ম পূর্ব উত্তরপ্রদেশে এক কোল জনজাতি পরিবারে। তাঁর বাবার নাম ছিল রাম নিরঞ্জন কোল।
ভয়ঙ্কর অপরাধী তথা নরমাংস খাওয়ার অভিযোগ থাকা কারাজা একসময় উত্তরপ্রদেশের একটি অস্ত্র কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু খুব অল্প সময়েই মাথা বিগড়োয় তাঁর।

নিজেকে সত্যিকারের রাজা মনে করতেন রাজা। এ-ও মনে করতেন, রাজার মতোই যে কাউকে শাস্তি দিতে পারেন তিনি, বিশেষ করে অপছন্দের মানুষদের। রাজার স্ত্রীর নাম ছিল ফুলন দেবী। তাঁর অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দুই পুত্রের নাম রেখেছিলেন যথাক্রমে আদালত এবং জামানত (জামিন অর্থে)।

উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত সেই সিরিয়াল কিলারের নাম রাজা কোলান্ডার

সাংবাদিক ধীরেন্দ্র সিংহ-সহ একাধিক মানুষকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল রাজার বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল একটি জোড়া খুন-সহ প্রায় ২০টি খুনের। দোষী সাব্যস্তও হন। রাজার বিরুদ্ধে মানুষের মাংস খাওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল।

২০০০-এর দশকে উত্তরপ্রদেশে আতঙ্কের অপর নাম হয়ে উঠেছিলেন রাজা। ২০০০ সালে ২২ বছর বয়সি সাংবাদিক মনোজ সিংহ এবং তাঁর গাড়িচালক রবি শ্রীবাস্তবের হত্যাকাণ্ড উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে নাড়া দিয়েছিল। সেই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যেও ছিলেন রাজা।

তদন্তে জানা গিয়েছিল, বোনের সঙ্গে মনোজের বন্ধুত্ব মেনে নিতে পারেননি রাজা। এলাকায় মনোজের ক্রমবর্ধমান খ্যাতিও ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছিল। এর পরেই মনোজকে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০০০ সালের ২৪ জানুয়ারি চালক রবি শ্রীবাস্তবকে নিয়ে লখনউ থেকে মধ্যপ্রদেশ রেওয়ার উদ্দেশে রওনা দেন মনোজ। চারবাগ স্টেশন এলাকা থেকে একজন মহিলা-সহ ছ’জন যাত্রীকেও গাড়ি তোলেন। কিন্তু এর পর আর মনোজ বা তাঁর চালক রবির আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। মনোজের গাড়িটির সর্বশেষ অবস্থান ছিল রায়বরেলীর হরচাঁদপুর। সেখানে চা খেতে নেমেছিলেন তাঁরা।

তিন দিন পরেও মনোজ বা়ড়ি না ফেরায় লখনউয়ের নাকা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। পরবর্তী কালে ইলাহাবাদের শঙ্করগড় বনাঞ্চলে মনোজ এবং রবির বিকৃত দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তে দেখা যায়, খুন করা হয়েছিল মনোজ এবং রবিকে। শুরু হয় তদন্ত। মনোজের পরিবারের এক সদস্য দাবি করেন, মনোজ নিখোঁজ হওয়ার সময় তাঁর গাড়িতেই ছিলেন রাজা এবং তাঁর স্ত্রী ফুলন দেবী।

এর পরেই গ্রেফতার হন রাজা। তাঁর বাড়ি তল্লাশি করে মানুষের একাধিক খুলি উদ্ধার হয়। খাড়া হয় নরমাংস ভক্ষণের তত্ত্ব। মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা রাজাকে মানসিক রোগী হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। যদিও আদালত তাঁকে বিচারের জন্য মানসিক ভাবে উপযুক্ত বলে ঘোষণা করে। ২০০১ সালের মার্চ মাসে রাজার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী ফুলন এবং শাগরেদ বচ্চ রাজ কোল, আদালত সিংহ কোল, দিলীপ গুপ্ত এবং দাদন সিংহের নামও জড়িয়েছিল মনোজ এবং রবির হত্যাকাণ্ডে।

বিভিন্ন আইনি বিলম্বের কারণে সেই মামলার বিচার শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের মে মাসে। মামলা চলাকালীন ২০০১ সালে রাজার সহ-অভিযুক্ত আদালত সিংহ এবং ফুলন দেবীর মামলা পৃথক করা হয়েছিল। অনুপস্থিতির কারণে দিলীপ গুপ্তের মামলাও আলাদা করে দেওয়া হয়। বিচার চলাকালীন ২০১৭ সালে দাদন সিংহ মারা যান। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রমও বন্ধ হয়। এর মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের অন্য এক সাংবাদিক ধীরেন্দ্র সিংহকে ঠান্ডা মাথায় খুনের অভিযোগে ২০১২ সালের নভেম্বরে রাজা এবং তাঁর শ্যালক বক্ষরাজকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

অভিযোগ ছিল, ধীরেন্দ্রকে প্রলুব্ধ করে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। কবর দেওয়া হয়েছিল তাঁর বিকৃত দেহ। রাজার বিরুদ্ধে মামলাকে ‘বিরলতম’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, শিকারদের খুনের পর আগে তাঁদের দেহ টুকরো টুকরো করতেন রাজা। এর পর দেহের টুকরোগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছুড়ে ফেলতেন। কিন্তু মৃতদেহের মাথা রেখে দিতেন নিজের কাছে। পরে নাকি মাথাগুলি থেকে ঘিলু বার করে স্যুপ তৈরি করে খেতেন।

সেই সব নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রায় দু’দশক পরে চলতি বছরের মে মাসে রাজাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ৩৯৬, ২০১, ৪১২ এবং ৪০৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাঁকে।

সূত্রঃ আনন্দবাজার

এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন